সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছনো এখন বালুরঘাটের বাসিন্দাদের কাছে স্বপ্ন। দেরিতে ট্রেন আসা-যাওয়ার নিত্য ভোগান্তির ঘটনায় ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। অথচ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি স্টেশন পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ লাইনে সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর কাজ। পুরনো দিনের ‘হ্যান্ড-প্লাঞ্জার’ পদ্ধতিতে লাইন পরিবর্তন করে গত ৯ বছর ধরে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ওই পরিস্থিতিতে ট্রেন যাত্রা এখন ‘হয়রানির যাত্রা’ হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাবাসীর কাছে।
হঠাৎ একদিন নয়। প্রায় দিন গৌড় লিংক ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে। বালুরঘাট-কাটিহার ভায়া মালদহ হয়ে চলাচলকারী ডেমু ট্রেনটিরও একই দশা। বালুরঘাট-নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে ইন্টারসিটি ট্রেনের আসা যাওয়ার ঠিক নেই। দূরপাল্লার ডেমু ট্রেনটিতে আবার যাত্রী পরিষেবার বালাই নেই। অধিকাংশ দিন ট্রেনে জল মেলে না। নোংরা পরিবেশ। এদিকে স্টেশনে ট্রেনের জন্য যাত্রীদের ঠান্ডার মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। অথচ বালুরঘাট-নিউ জলপাইগুড়ি ইন্টারসিটি ট্রেনের উপরে নির্ভর করে চলে গৌড় লিংক ট্রেন। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অভিযোগ, ৬ ঘন্টার মধ্যে ইন্টারসিটি ট্রেন বালুরঘাটে পৌঁছনোর কথা। অথচ সেটা পৌঁছচ্ছে ৮ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা পরে। ফলে ইন্টারসিটির ইঞ্জিন কামরা জুড়ে বালুরঘাট থেকে গৌড় লিঙ্ক ট্রেন ছাড়তে রাত ৮টা থেকে ১০টা হয়ে যাচ্ছে। অথচ ট্রেনটি ছাড়ার সময় বিকেল ৫টা ৫মিনিটে।
বালুরঘাটের চিকিৎসক সুদীপ্ত তরফদার বলেন, “দুটি এসি এবং ৩টি স্লিপার কোচ নিয়ে চলা ওই লিঙ্ক ট্রেন মালদহে সময় মতো পৌঁছতে পারে না। তাই গৌড় এক্সপ্রেসের বদলে অন্য ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতায় পৌঁছতে দেরি হচ্ছে।” ওই দুর্ভোগের কথা জানিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছে বালুরঘাট রেল ও যাত্রী উন্নয়ন কমিটি। কমিটির প্রতিনিধি মুকুল বসু ও নবকুমার দাস জানান, রেলপ্রতিমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা কংগ্রেসের তরফেও রেল প্রতিমন্ত্রীকে রেল পরিষেবা উন্নতির জন্য বালুরঘাট সহ গঙ্গারামপুর স্টেশন উন্নয়ন, হিলি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ শুরুর আবেদন জানানো হয়েছে। বালুরঘাট স্টেশন ম্যানেজার সুব্রত দাস বলেন, “কর্তৃপক্ষকে সব সমস্যা বলা হয়েছে।”
রেল সূত্রের জানা গিয়েছে, বালুরঘাট স্টেশনে কামরায় সাফাই এবং জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ২০০৪ সালে বালুরঘাটে ট্রেন চালু হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় ওই স্টেশনকে মডেল স্টেশন করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তৃণমূলের সমর্থন প্রত্যাহারের পরে জেলার রেলের পরিকাঠামো উন্নতির সমস্ত কাজ থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক বিপ্লব মিত্র। তিনি বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুরে রেলের পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নতির জন্য নেওয়া সমস্ত প্রকল্প বাজেট অনুমোদিত। তাই কোনও প্রকল্প বাতিল হবে না। দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য আন্দোলন করা হবে।” |