কেন্দ্রের বার্তা আসতেই বাড়তি সতর্ক জঙ্গলমহল |
নতুন কায়দায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালানোর কৌশল আঁটছে মাওবাদীরা, এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সতর্কবার্তা রাজ্যে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, যে-সব রাজ্যে মাওবাদীরা নতুন উদ্যমে ও অভূতপূর্ব কায়দায় হামলা চালানোর ছক কষেছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। তাই জঙ্গলমহলে নতুন ধরনের সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দাদের মতে, ঝাড়খণ্ডের লাতেহারে এক সিআরপি জওয়ানের পেট কেটে তাঁর পাকস্থলীতে দেড় কেজি বিস্ফোরক (আইইডি) ভরে ‘বুবি ট্র্যাপ’ তৈরি, ১৮ জানুয়ারি ছত্তীসগঢ়ে সুকমার জঙ্গলে বায়ুসেনার এমআই-১৭ কপ্টারকে গুলি করে নামানোর পরে মাওবাদীদের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের রণকৌশল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, “মাওবাদীদের ওই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন হামলা চালাতে হবে, যা নিরাপত্তা বাহিনী কল্পনাই করতে পারবে না। এমন হবে সে হামলার ধরন, যাতে আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা নেওয়াই মুশকিল হয়।”
কেন মাওবাদীদের এই সিদ্ধান্ত?
আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ বলেন, “শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশ জুড়েই মাওবাদীরা কোণঠাসা। ক্যাডারদের মনোবল তলানিতে। নতুন পন্থায় হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংগঠনকে চাঙ্গা করতেই। এটা গেরিলা যুদ্ধের কৌশল। সুকমা ও লাতেহারের ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। এ সব মাথায় রেখেই বাড়তি সতর্কতা।”
কী সেই ব্যবস্থা? গোয়েন্দারা মনে করছেন, যৌথ বাহিনীর শিবির বা জঙ্গলমহলের থানায় হামলা চালানোর চেয়ে মাওবাদীদের পক্ষে এখন কোনও ভিআইপি বা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তার উপর ল্যান্ডমাইন হামলা চালানো সহজ। তাই কোনও ভিআইপি বা বাহিনীর কর্তা জঙ্গলমহলের যেখানে যাবেন, সেই এলাকা ও তার ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত সমস্ত এলাকায় তল্লাশি চালানো ও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে রক্ষী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এত দিন সফরের দিন ওই ব্যবস্থা নেওয়া হত।
কেন্দ্রের বার্তায় বলা হয়েছে, যৌথ বাহিনীর টহলের পথে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা চালাতে পারে মাওবাদীরা। সে জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বাহিনীর রোড ওপেনিং পেট্রল পার্টির যেন কোনও অবস্থাতেই গা ছাড়া ভাব না আসে এবং তারা যেন সব সময়ে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র ও প্রতিরোধমূলক সরঞ্জামে সুসজ্জিত হয়ে বেরোয়।
কোনও কারণে জঙ্গলমহলে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হলে যতক্ষণ না কপ্টারটি নিরাপদে ফিরে আসছে, তত ক্ষণ নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও নিখুঁত গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।
আইজি-র বক্তব্য, “একটা সময়ে রসদ পৌঁছে দেওয়া এবং যৌথবাহিনী ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে যাওয়ার কাজে জঙ্গলমহলে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হত। সেই সময়ে মাওবাদীদের দাপটে কিছু জায়গায় সড়কপথে যাতায়াত ঝুঁকির ছিল। এখন সে সব নেই।” তবে তাঁর কথায়, কখন, কোথায় মাওবাদীরা ল্যান্ডমাইন ফাটাবে বলা যায় না। গত ১৫ জানুয়ারি লালগড়ের কাছে পূর্ণাপানির জঙ্গলে নিজেদের শক্তি জাহির করতে ল্যান্ডমাইন ফাটিয়েছে মাওবাদীরা। সেটাও যথেষ্ট চিন্তার ঘটনা।
|
বিরোধী স্বরকে চাপার জন্য রাজ্যে প্রতিবাদীদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারের নতুন রেওয়াজ শুরু হয়েছে বলে বুধবার অভিযোগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে উত্তরবঙ্গ উৎসবে মন্ত্রীদের কালো পতাকা দেখানোয় ধৃত ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি রাহুল রায়, জেলা সভাপতি সৌরভ প্রসাদ-সহ সাত জনের আট দিনের জেল হেফাজত হয়েছে এ দিন। প্রদীপবাবুর প্রশ্ন, “বিক্ষোভ দেখানোর জন্য জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়া হল কেন?” আর্থিক সঙ্কটকালে উৎসবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের মন্ত্রী রচপাল সিংহ এবং শঙ্কর চক্রবর্তীর সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন রাহুলরা। |