বছর ঘুরতেই ভাটা বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে
ক বছরেই সংখ্যাটা চার হাজার কমে গিয়েছে। মহাকরণের হিসেব বলছে, ২০১১-য় যেখানে ৭১১২টি বেআইনি অস্ত্র আটক করেছিল পুলিশ, সেখানে ২০১২-য় উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২৯৬০টি। অর্থাৎ, নতুন সরকারের প্রথম বছরে যত বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল, বছর ঘুরতেই তার সংখ্যা কমেছে অর্ধেকেরও বেশি।
এর প্রভাব নিত্যদিনের আইন-শৃঙ্খলার উপরে পড়ছে, মেনে নিচ্ছেন উদ্বিগ্ন পুলিশকর্তারাই। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই খুন-ডাকাতি-তোলাবাজিতে অবাধে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। তার উপর এখন ছোটখাটো ছিনতাইয়েও অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বেআইনি অস্ত্র যত বেশি আটক হবে, গুরুতর অপরাধ তত কমার সম্ভাবনা। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধারে যে ভাটা পড়েছে, সরকারি হিসেব তার প্রমাণ।
ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিয়েছিলেন। তা মেনে পুলিশও ময়দানে নেমেছিল। তার পরেও যে অস্ত্র উদ্ধারে খামতি থেকে গিয়েছে, তা বুঝছেন মন্ত্রীরাও। ক’দিন আগেই ভাঙড়ে তিন সিপিএম কর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে মহাকরণে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, এত অস্ত্র আসছে কোথা থেকে? প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব যাদের, সেই পুলিশ তো শাসক দলেরই নিয়ন্ত্রণে।
কেন এই হাল? পুলিশকর্তারা বলছেন, অস্ত্র উদ্ধারে একটা দল তৈরি করা জরুরি, যারা দিনভর এই কাজ করবে। তারা ‘সোর্স’ মারফত খবর জোগাড় করবে, যোগাযোগ রাখবে আড়কাঠির সঙ্গে এবং ডেরায় ডেরায় অভিযান চালাবে। কিন্তু এত কম পুলিশ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সামলে অস্ত্রের পিছনে ছোটা অসম্ভব। এক পুলিশকর্তা বলেন, “অধিকাংশ থানা চলছে অনুমোদিত পদের অর্ধেক পুলিশ নিয়ে। খুন, ডাকাতির তদন্ত করতেই দারোগারা নাজেহাল। ইচ্ছে থাকলেও উপায় হবে কী করে?”
তা হলে সেই পুলিশই ২০১১-য় সাত হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার করল কোথা থেকে? প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ওই বছরে বিধানসভা ভোট থাকায় পুলিশের উপরে অনেক বেশি চাপ ছিল।” তা হলে পুলিশ কি চাপেই কাজ ভাল করে? ওই কর্তার ব্যাখ্যা, “ওসি-রাই অস্ত্র উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তিন বছর কেটে গিয়েছে, এমন দারোগাদের ভোটের আগে কমিশন জেলাছাড়া করে দেওয়ায় সুফল মেলে হাতেনাতে।” পুলিশের একাংশের যুক্তি, বহু ছোট-মাঝারি মাপের নেতা বিরোধী থেকে শাসক দলের ভূমিকায় সড়গড় হয়ে উঠেছেন। অন্ধকার জগতের লোকও ‘আশ্রয়’ বদলেছে। নতুন সরকারের প্রথম দিকে পুলিশ যে ‘খোলা হাত’ পেয়েছিল, তার অনেকটাই নেই।

উদ্বিগ্ন পুলিশ
জেলা ২০১১ ২০১২
নদিয়া ২২২ ১০৭
হুগলি ৫১০ ২৮২
বর্ধমান ৫৯৬ ৩২২
মুর্শিদাবাদ ৬০৭ ৫৩২
উত্তর ২৪ পরগনা ৬০১ ১৯৯
দক্ষিণ ২৪ পরগনা ৬৫৭ ২৬১
পশ্চিম মেদিনীপুর ২৩৪০ ১৮৫
পুলিশের অন্য একটি অংশ এই যুক্তি মানেননি। তাঁদের বক্তব্য, দায়িত্ব থেকে রেহাই পেতে ‘খোলা হাতে’র কথা অজুহাত মাত্র। অস্ত্র উদ্ধারে ‘খোলা হাত’ পাওয়া যে সব ক্ষেত্রে জরুরি নয়, ভালই জানেন থানার বড়বাবুরা। আর অস্ত্র উদ্ধারে এই ঢিলেমির রন্ধ্রপথেই টিটাগড়ে ১৪ বছরের বালকের গুলিতে খুন হয়ে যায় সাত বছরের শিশু, হালিশহরে ছাদনাতলায় খুন হন পাত্র। বর্ধমানের রায়নায় সিপিএম নেতা ঘরে স্টেনগান রাখার সাহস পান।
শুধু অস্ত্র উদ্ধার করেই যে অপরাধ ঠেকানো যাবে না, তা মানছেন পুলিশকর্তারা। এসপি-রা বলছেন, অস্ত্র আইনে ধৃতদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত সমস্যা থাকবে। কিন্তু বর্তমান পুলিশি পরিকাঠামোয় আদালতে পৌঁছনোই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে এসপিদের মত। সমস্যাটা কোথায়? এক পুলিশকর্তা বলেন, “আটক পিস্তল বা রাইফেল কতটা সক্রিয়, তা যাচাই করেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। সেই রিপোর্ট আদালতে জমা পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ জেলায় দু’জনের বেশি বিশেষজ্ঞ নেই। কিছু জেলায় এক জন আছেন।” এসপি-দের অভিযোগ, চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা ফরেন্সিক গবেষণাগার। গুলি পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠালে কবে রিপোর্ট মিলবে, কেউ জানে না। ফলে, অস্ত্র মামলায় শুনানি শুরু তো দূর, চার্জশিট পেশ করতেই বছর ঘুরে যাচ্ছে।
বিহার কিন্তু পেরেছে। এ রাজ্যের এক পুলিশকর্তা বলেন, “ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার অস্ত্র আইনে ধৃত দুষ্কৃতীদের জেলে পুরতে উদ্যোগী হন। এর জন্য পুলিশের ‘স্পেশাল ফোর্স’ তৈরি থেকে অস্ত্র বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, ফরেন্সিক গবেষণাগারকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি মামলা দ্রুত শেষ করতে তৈরি করেন বিশেষ আদালত। সেখানে কেবল অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলারই বিচার হত। এখন সেই উদ্যোগের সুফল ভোগ করছে বিহার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.