|
|
|
|
খড়্গপুর পুরসভা |
কোর্টের নির্দেশে কংগ্রেস দেখছে ‘নৈতিক জয়’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
হাইকোর্ট জেলাশাসককে ডেকে পাঠানোয় খুশির হাওয়া খড়্গপুরের কংগ্রেস-শিবিরে। দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, আদালতের এই নির্দেশ থেকে স্পষ্ট, পুরপ্রধানের পদ জোর করে দখল করে রেখেছে তৃণমূল। ওই পদে দলীয় কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডেরই বসার কথা। হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বুধবার খড়্গপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “বোর্ড মিটিংয়ে পুরপ্রধান নির্বাচন হয়েছিল। এরপর জেলাশাসক বা তাঁর কোনও প্রতিনিধির উচিত ছিল, নতুন পুরপ্রধানকে শপথবাক্য পাঠ করানোর। কিন্তু, তা হয়নি। আদালতের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। সুবিচার মিলবেই।”
কেন বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মতো নতুন পুরপ্রধানকে শপথবাক্য পাঠ করানো হল না, তা জানতে চেয়েই পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তকে তলব করেছে হাইকোর্ট। কাল, শুক্রবার বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাসের এজলাসে তাঁর হাজির হওয়ার নির্দেশ হয়েছে। মঙ্গলবার এই নির্দেশ হয়। এই নির্দেশকে তাদের ‘নৈতিক জয়’ বলেই মনে করছে কংগ্রেস-শিবির। কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “বোর্ড মিটিংয়ে ঠিক কী সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা লিখিত ভাবেই পুর- দফতর ও জেলাশাসককে জানানো হয়েছিল। তবে জেলাশাসক কোনও পদক্ষেপ করেননি।” তাঁর কথায়, “পুর-আইন মেনে তিনজন কাউন্সিলর বোর্ড মিটিং ডেকেছিলেন। মিটিংয়ে আমাকে পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এরপর জেলাশাসক বা তাঁর কোনও প্রতিনিধির শপথবাক্য পাঠ করানোর কথা। তবে তা হয়নি।” পুরসভার ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান তুষার চৌধুরী অবশ্য বলেন, “আদালতের নির্দেশ মতোই আমি দায়িত্ব পালন করছি।”
তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত বছর ১৪ অগস্ট অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল কংগ্রেস। তার প্রেক্ষিতে গত ২৭ অগস্ট পুরসভায় বোর্ড মিটিং হয়। এই মিটিংয়ে ঠিক কী হয়েছে, তা নিয়েই যাবতীয় ধোঁয়াশা। কংগ্রেসের দাবি, বৈধ ভাবেই মিটিং হয়েছে। অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়েছেন তৃণমূলের পুরপ্রধান জহরলাল পাল। আর তৃণমূলের বক্তব্য, অবৈধ ভাবে মিটিং হয়েছে। এই অবস্থায় ৫ সেপ্টেম্বর পুর-দফতর থেকে একটি নির্দেশিকা এসে পৌঁছয়। জানানো হয়, অনাস্থা সংক্রান্ত বৈঠকের বিষয়টি লিগ্যাল সেলের বিবেচনাধীন। যতক্ষণ না সেল কোনও মতামত দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ২৭ অগস্টের আগে পুরসভা যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। ২৪ সেপ্টেম্বর পুর-দফতরের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্ট জানায়, পুরপ্রধান নন, পুর-আইন অনুযায়ী পরবর্তী পুরপ্রধান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত পুরসভার কাজ চালিয়ে যাবেন উপ-পুরপ্রধান। সেই মতো তুষার চৌধুরী পুরপ্রধানের দায়িত্ব নেন। পরে নতুন পুরপ্রধান নির্বাচনের দিন ঘোষণার জন্য ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধানের কাছে দাবি জানায় কংগ্রেস। ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান মিটিং না ডাকায় কংগ্রেসের তিন জন কাউন্সিলর বোর্ড মিটিং ডাকেন। সেই মিটিংয়ে উপস্থিত ১৬ জন কাউন্সিলর পুরপ্রধান হিসেবে রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে নির্বাচিত করেছেন বলে কংগ্রেস-শিবিরের দাবি। কংগ্রেসের ১৪ জন কাউন্সিলর ছাড়াও মিটিংয়ে ছিলেন নির্দল কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা ও বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী। তৃণমূলের ১৫ জন ও বামফ্রন্টের ৪ জন কাউন্সিলর অবশ্য যোগ দেননি। সভাকক্ষে উপস্থিত ১৬ জন কাউন্সিলরই রবিশঙ্করবাবুকে পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেন। এরপর থেকেই টানাপোড়েন চলছে। এর ফলে শহরের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ বামফ্রন্টের। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “এই অবস্থায় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব পুরসভায় স্থিতাবস্থা ফিরে আসুক।” |
|
|
|
|
|