সম্পাদক সমীপেষু...
যে ভারত বাঁচবে, বাঁচাবে
১৯৯৮-এ গুজরাতে নির্বাচনী সমীক্ষায় গিয়ে সুরাত স্টেশনে চোখ টানে মননঋদ্ধ প্রাচীরচিত্র। ২০০২-এ গণহত্যা-পরবর্তী কালে ত্রাণ নিয়ে গিয়ে দেখি, সেই দেওয়ালে অন্য ছবি আঁকা। আর আসল ভারতের চেহারা দেখি, আমদাবাদ শাহ আলম ত্রাণ শিবিরে।
ভগবতী দেবী দু’মাস ধরে ছিলেন ত্রাণ শিবিরে। ‘সহেলি’ রোশেনারার দুঃখে অংশীদার হবেন বলে। ‘মুসলমান’-দের তেমন ঘেন্না করেন না বলে তাঁর বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভগবতী দেবী এক থালায় খেতেন অন্যদের সঙ্গে। ত্রাণ শিবিরে তো কারও নিজের থালা ছিল না।
— কেন এলেন এখানে?
— উও মেরি সহেলি হ্যায়। মেরি জান। পাশাপাশি ঘর। বিয়ের পর থেকে দু’জন দু’জনের সুখদুঃখের সঙ্গী। আজ বিপদের দিনে ওকে ফেলে যাব কোথায়?
এটাই ভারত। ধর্ম সমন্বয় ও পরমত সহিষ্ণুতাই শেষ কথা বলবে। অন্ধ ধর্ম-রাজনীতি ব্যবসায়ীরা নয়। সাম্প্রদায়িকতা আসলে আর কিছু নয়, ধর্ম-ব্যবসার রাজনৈতিক চেহারা।
অসামান্য জীবনপ্রবাহী সংবেদী চিন্তক একটি বইয়ের ঠিকানা জানানোর জন্য সেমন্তী ঘোষকে ধন্যবাদ। (‘না, নিছক...’, ১৯-১) ধন্যবাদ সাবা নাকভিকে ‘ইন গুড ফেথ’-এর মতো বই লেখার জন্য। যে বই ভারতকে আর এক রকম ভাবে চিনতে পাঠকদের প্রণোদিত করে। আমাদের দেশের প্রকৃত মূলস্রোত, সমন্বয়ের ধারাটিকে উজ্জ্বল আলোকে চিহ্নিত করেছেন সাবা।
এই সূত্রে একটি শোনা ও জানা কাহিনির অবতারণা। ‘কহানি’ নয়, সত্য। যে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রামমন্দির নিয়ে এত দাঙ্গা-খুনোখুনি-রক্তপাত-গোলযোগ, নির্বাচনী নোট-ঘোঁট-প্রধানমন্ত্রিত্বের বিবেকহীন যাত্রা এই কাহিনি সেই অযোধ্যার বিবদমান প্রতিপক্ষের।
অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান মুখ মহন্ত রামচন্দ্র পরমহংস। মুখের প্রভাব এতটাই, তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করতে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রামচন্দ্রের বন্ধু ছিলেন বাবরি মসজিদের অ্যাকশন কমিটির শীর্ষনেতা হাসিম আনসারি। এক জন চান মন্দির গড়তে, অন্য জন মসজিদ রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ। দুই প্রতিপক্ষ প্রায় প্রতিদিন বিকেলে সভাসমিতি না-থাকলে আড্ডা মারতেন। আড্ডা গড়াত অনিবার্য তর্কে। তর্ক মানেই ঝগড়া। খুব একচোট গালাগালি। তার পর বসে যেতেন এক থালায় খেতে। পরের ঘটনাটি বিস্ময়কর। মাঝে মাঝে দু’জনে ঘরের ভিতর ঢুকে যেতেন। খেয়ালকারীরা দেখতেন, হাসিম আনসারির পকেটে ৫০০ টাকার নোট ঢুকিয়ে দিচ্ছেন রামচন্দ্র পরমহংস।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অযোধ্যার সরযূকুণ্ড আশ্রমের যুগলকিশোর শরণ শাস্ত্রীজি। সম্প্রীতি রক্ষার অতন্দ্র সৈনিক। নাগপুরে আসগর আলি ইঞ্জিনিয়ারের সেকুলার ফোরামের আয়োজনে সর্বভারতীয় কর্মশালায় তাঁর মুখে শোনা এই কাহিনি।
এক দিন যুগলকিশোররা চেপে ধরেন রামচন্দ্রকে। তিনিও যেতেন আড্ডায়।— আপনাদের এত ঝামেলা, তবু টাকা দেন কেন হাসিম ভাইকে?
— আরে ওটা হাসিমকে নয়। চাঁদা দিই। বাবরি মসজিদ কমিটিকে। জবাব রামচন্দ্রের।
— চাঁদা? বাবরি কমিটিকে!
— আরে ব্যাটা, ও আমার বচপন কা জিগরি দোস্ত। একসঙ্গে ডাংগুলি খেলেছি, ন্যাংটোবেলা থেকে। দু’বার গুন্ডাদের হাত থেকে আমার জান বাঁচিয়েছে। ওর ঘরে থেকেছি। খেয়েছি। ওকে চাঁদা না-দিয়ে আমার উপায় আছে?
একটু থেমে রামচন্দ্রের সংযোজন: তা ছাড়া দোস্তকে চাঁদা না-দিলে পাপ হবে।
ধর্ম-ব্যবসায়ীরা এই কাহিনি যদি জানতেন!
সংশোধন
কলকাতার কড়চায় কবি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পুরস্কার লাভের (১৪-১) সংবাদে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার প্রকাশক হিসেবে আমরা আনন্দিত। কড়চাকার লিখেছেন, শ্রেষ্ঠ কবিতা নাকি এখন আর পাওয়া যায় না। সবিনয় জানাই, এই খবরটি আদৌ ঠিক নয়। কবির কবিতা যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের জন্য এই যথার্থ খবরটি থাক যে, কলেজ স্ট্রিটে আমাদের বিপণিতে এলেই বইটি পাওয়া যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.