সম্পাদকীয় ১...
শেষ হাসি
পাহাড় হাসছে— দার্জিলিঙের গোর্খাল্যান্ড সমস্যা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা গত কয়েক মাস ধরিয়া স্লোগানে পরিণত হইয়াছিল। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা ইহাকে প্রায় জপমন্ত্রের মতো উচ্চারণ করিতেন। পার্বত্য দার্জিলিঙের জনজাতীয় আত্মপরিচয়ের রাজনীতি এবং আত্মশাসন সংক্রান্ত সমস্যা তিনি সমাধান করিয়া ফেলিয়াছেন, এই মর্মে আস্ফালন ও বাহ্বাস্ফোটও নিত্য শুনা যাইতেছিল। সংশয়বাদীরা তখনই প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন, বিমল গুরুঙ্গের সহিত সহাস্য করমর্দনেই পাহাড়ে হাসির ফোয়ারা ছুটানো যায় কি না। সস্তায় এবং সহজে বাজিমাত করার যে প্রবণতা রাজ্য সরকারকে পাইয়া বসিয়াছে, তাহা যে সত্য-সত্যই কোনও কঠিন ও গুরুতর সমস্যার মীমাংসা করিতে অপারগ, এই সন্দেহও ক্রমশ দানা বাঁধিতেছিল। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ম্যালে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় সন্দেহটি সত্য হইয়া দেখা দিল। মুখ্যমন্ত্রী এবং গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের অধুনা নেতা বিমল গুরুঙ্গের উপস্থিতিতেই দর্শক-শ্রোতাদের মধ্য হইতে স্বতন্ত্র গোর্খাল্যান্ড রাজ্য চাহিয়া স্লোগান উঠিল, পোস্টার দেখানো হইল। দার্জিলিঙের ‘ভাইবোনেরা’ মা-মাটি-মানুষের বঙ্গীয় নেত্রীর তীব্র আপত্তি অগ্রাহ্য করিয়া গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অবিচল রহিলেন।
তাঁহারা যখন দার্জিলিঙে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানাইতেছেন, তখন দিল্লির যন্তরমন্তরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্য নেতারা একই দাবিতে ধর্নায় বসিয়াছেন। অন্ধ্রপ্রদেশকে দ্বিধাবিভক্ত করিয়া পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের সম্ভাবনা মূর্ত হইতেই মোর্চা-নেতৃত্ব গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি সমগ্র দেশবাসীর সামনে তুলিয়া ধরিয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিটিএ অর্থাৎ স্বশাসিত গোর্খা আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করিয়া জনজাতীয় আত্মশাসনের সমস্যা মিটাইয়া ফেলিয়াছেন বলিয়া যে দাবি করিতেছিলেন, তাহা যে কত অসার, মুহূর্তেই তাহা প্রকট। ইহা অপ্রত্যাশিত ছিল না। জনজাতীয় আবেগ যখন আত্মপরিচয়ের প্রশ্নকে ঘিরিয়া আন্দোলিত হয়, তখন কেবল প্রতীকী কিছু সৌজন্য প্রদর্শন ও মিষ্টি হাসি বিনিময়ে তাহা প্রশমিত হওয়ার নয়। মুখ্যমন্ত্রী ভাবিয়াছিলেন, স্বায়ত্তশাসনের এলাকা, এক্তিয়ার ও তহবিলের প্রশ্নটির মীমাংসা না-করিয়াই তিনি কেল্লা ফতে করিয়া ফেলিবেন। তাহা যে হইবার নয়, গোর্খাল্যান্ডের আকাঙ্ক্ষা ‘বুকের মধ্যে চাপিয়া রাখিয়া’ জিটিএ শিরোধার্য করার নিরুপায় সিদ্ধান্তের মধ্যেই তাহা নিহিত ছিল। উপরন্তু এই জিটিএ-ও যে গোর্খা স্বাধিকারপ্রমত্ততার দাবি পূরণে ব্যর্থ হইবে, তাহাও সমতলের রাজনীতিকদের আচরণে নিশ্চিত হইয়া যায়।
দার্জিলিঙ ম্যালে মুখ্যমন্ত্রী যে জনসভার আয়োজন করেন, তাহাকে উত্তরবঙ্গ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রূপে তুলিয়া ধরা হয়, যাহাতে জিটিএ-র স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায় নাই। ওই জনসভা হইতে মুখ্যমন্ত্রী যে জমির পাট্টা বিলি করেন, তাহা জিটিএ-র এক্তিয়ারভুক্ত জমি, তাহার পাট্টা বিলি করার হইলে জিটিএ-র আধিকারিকরা করিবেন। একা সব কিছু করার প্রবণতায় মুখ্যমন্ত্রী জিটিএ-র সেই স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করেন। বিজনবাড়ি সেতুর শিলান্যাস অনুষ্ঠানও জিটিএ-র হাতেই ছাড়িয়া দেওয়া উচিত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী যে তাহা করেন নাই, তাহার কারণ পাহাড়ের মানুষের প্রতি সমতলের রাজনীতিকদের চিরাচরিত মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই নিহিত। বামফ্রন্ট সরকারের আমলের সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনও পরিবর্তন হয় নাই। তাই বিমল গুরুঙ্গরাও আত্মপরিচয়ের রাজনীতির শামুকখোলের ভিতর ঢুকিয়া গিয়াছেন। গণতন্ত্রের মূল কথাই হইল, দূরবর্তী উপরতলা হইতে (এ ক্ষেত্রে মহাকরণ হইতে) স্থানীয় প্রয়োজন ও চাহিদা অনুমান করা ও তদনুযায়ী সেগুলি নিরসনের একতরফা ব্যবস্থা লওয়ার পরিবর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপরেই উন্নয়নের প্রকল্প রচনা ও রূপায়ণের দায়িত্ব ছাড়িয়া দেওয়া। ঘটিতেছে তাহার বিপরীত। তদুুপরি লেপচাদের জন্য পৃথক ‘উন্নয়ন পরিষদ’ গঠনের ঘোষণাটি বিভাজনের রাজনীতি অনিবার্য অভিযোগ তুলিয়া নূতন জটিলতা সৃষ্টি করিয়াছে। পাহাড় হাসিতেছে না। সমতলেরও হাসিবার কারণ নাই। গভীর উদ্বেগ যদি হাসি উৎপাদন করে, তাহা সুস্থতার পরিচায়ক নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.