এক মঞ্চে থেকেও প্রকাশ্যে কাজিয়ায় শাসক-বিরোধী
রকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে তৃণমূলের বিধায়ক, জেলা নেতার সঙ্গে একই মঞ্চে বসলেন পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সভাপতি। রাজ্য-রাজনীতির এমনই বিরল দৃশ্য মঙ্গলবার দেখা গেল পুঞ্চা ব্লক কৃষি মেলার উদ্বোধনে। কিন্তু মধুরেণ সমাপয়েত হল না। অনুষ্ঠানের মাঝেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের মিথিলা মুর্মু ও পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরস্পর সরকারের কাজ নিয়ে কাজিয়ায় জড়িয়ে পড়ায়, সৌজন্যের আবহের ছন্দপতন ঘটল।
সাম্প্রতিক কালে রাজ্য রাজনীতিতে শাসক ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে সৌজন্যের ছবি কার্যত বিরল হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরেও উন্নয়নের বৈঠকে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয় না। জেলার বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানেও সেই ধারাই চলছে। ব্যতিক্রম পুঞ্চার কৃষি মেলা। এ দিন অনুষ্ঠানের গোড়াতেই তৃণমূল বিধায়ক সন্ধ্যারাণি টুডু ও সুজয়বাবু মঞ্চে চলে আসেন। তাঁরা দু’জনে মঞ্চের সামনের আসনে দুই প্রান্তে বসেছিলেন। মাঝখানে কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা বসেন। খানিক পরে এসে পৌঁছন মিথিলাদেবী। তাঁর জায়গা হয় মঞ্চের দ্বিতীয় সারিতে, সন্ধ্যারাণিদেবী-সুজয়বাবুর পিছনে। তাঁদের মধ্যে অবশ্য কথাবার্তা হয়নি। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। গণ্ডগোল বাধে এর পরেই।
সন্ধ্যারাণিদেবী বক্তৃতায় দাবি করেন, “বর্তমান সরকার চাষের ও চাষির উন্নতির জন্য অনেক প্রকল্প এনেছে। এই কৃষি মেলা থেকেও চাষিরা উন্নতমানের চাষ করার অনেক তথ্য পাবেন।” এরপরেই বক্তৃতা দিতে ওঠেন মিথিলাদেবী। তিনি অভিযোগ করেন, “এই সরকার চাষিদের জন্য কাজের কাজ কিছু করেনি। অনেক প্রকল্পের কথা বলা হলেও চাষিরা বাস্তবে কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না। চাষিদের বেশি দামে সার, বীজ কিনতে হচ্ছে, অথচ ধান কে কিনবে তার ঠিক নেই। ফড়েদের কাছে চাষিরা অভাবী মূল্যে ধান বিক্রী করতে বাধ্য হচ্ছেন। ধানের সহায়ক মূল্য ঘোষণা করেই সরকার দায় সেরেছেন। চাষিদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে ধান কেনার পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি।” পরে বলতে উঠে সুজয়বাবু বলেন পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার কী ভাবে কৃষি দফতর চালিয়েছে, সবাই জানেন। পার্টি অফিস থেকে দেওয়া তালিকাভুক্ত ক্যাডাররা বিনামূল্যে সার, বীজ পেয়েছেন। চাষ হবে কোথা থেকে। সব শেষ করে দিয়ে এখন তাঁদের মুখে বড় কথা মানায় না।” তিনি দাবি করেন, সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে। কোনও চাষির ধান বিক্রী করতে অসুবিধা হলে, তাঁকে ফোন করে জানাতে বলেছেন। তিনি বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
সরকারি মঞ্চ থেকে এমনটা কেন করলেন? পরে মিথিলাদেবীর যুক্তি, “কৃষি মেলার নামে তৃণমূল কৃষি উন্নয়নের মিথ্যার ফানুস ফোলাচ্ছে। সহ্য না হওয়ায় সত্যি কথাটা বলেছি মাত্র।’’ সুজয়বাবুর দাবি, “চাষিদের পাশে আমাদের সরকার রয়েছে। সিপিএমের তা সহ্য না হওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। তাই প্রতিবাদ করেছি।” কিন্তু তাঁদের এই কাজিয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে যান উপস্থিত আধিকারিকেরা। কেউ কেউ মুখ নিচু করে থাকেন। কেউ বা হাতের নখ খুঁটতে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। এক আধিকারিক বলেন, “প্রকাশ্য মঞ্চে এ ধরনের বিতর্ক না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু ওঁদের মুখের উপর আমরা কী বলব?”
কিন্তু যাঁদের জন্য এই মেলার আয়োজন, সেই কৃষকদের সংখ্যা অবশ্য মেলায় বিশেষ ছিল না। পুঞ্চার পেচাড়া গ্রামের সুভাষ কুইরি, সরগড়া গ্রামের স্বপন বাউরিরা বলেন, “খবর পেয়ে মাঠের সব্জি সাজিয়ে এনেছি। কিন্তু আরও চাষি যোগ দিলে তাঁদের কেমন ফসল হয়েছে জানতে পারতাম। তাঁরাও এই মেলা থেকে চাষ নিয়ে অনেক ভাল কথা জানতে পারতেন।” পুঞ্চার ব্লক কৃষি আধিকারিক প্রভুদয়াল মাহাতোর ব্যাখ্যা, “চার দিন ধরে মাইকে এলাকায় প্রচার করা হয়েছে। তবু চাষিদের উপস্থিতি এত কম কেন বুঝতে পারছি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.