বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু হল এক গ্রামবাসীর। যদিও বিএসএফের দাবি মৃত যুবক গরু পাচারে যুক্ত। সোমবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর সীমান্তের কাছে দহরখান্দা গ্রামে পাচারকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ওই ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে এক জওয়ান-সহ চারজন আহত হন। গুরুতর অবস্থায় ওই জওয়ানকে কল্যাণীর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মহিন মোল্লা (২২)। বিএসএফ সূত্রে ঘটনার কথা স্বীকার করে জানানো হয়েছে, ওই রাতে গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় পাচারকারীরা কে জওয়ানের উপরে হামলা করে তাঁকে দা দিয়ে কোপায়। বাধ্য হয়ে ওই জওয়ান পাল্টা গুলি চালালে একজন পাচারকারীর মৃত্যু হয়।
মৃত ও আহতদের পরিবারের অভিযোগ, বাংলাদেশিদের সঙ্গে গরু পাচার নিয়ে বচসার সময় বিএসএফের ছোড়া গুলিতে মহিন-সহ চারজন জখম হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মহিনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাত নটা নাগাদ মহিন মোল্লা ও তাঁর তিন বন্ধু সোহাগ গাজি, সাজি সর্দার ও মিলন সর্দার নিমন্ত্রণ খেয়ে ফিরছিলেন। মহিন যখন বাড়ির কাছে তখনই তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলি লাগে তাঁর সঙ্গীদেরও। মহিনকে স্থানীয় শাঁড়াপুল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে বসিরহাটের এসডিপিও এবং স্বরূপনগর থানার ওসি ঘটনাস্থলে যান। যান বিএসএফ কর্তারাও।
বিএসএফের পক্ষে ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা ১৫২ নম্বর বি এন ব্যাটেলিয়ানের কর্মী বিজয় কুমার শর্মা অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশকে জানান, ওই রাতে ৮ জন জওয়ান সীমান্তে ওই এলাকায় পাহারায় ছিলেন। সেই সময় মহিন মোল্লা, সাহিম সর্দার, আমিরুল দালাল সহ ২০-২২ জনের একটি দল গরু পাচারের চেষ্টা করে। বাধা দিলে তারা এএসআই অমলেন্দু মাহাতোকে দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে। তখন ওই জওয়ান বাধ্য হয়ে ২ রাউন্ড গুলি ও ২টি গ্রেনেড ছোড়ে। আহত জওয়ানকে প্রথমে কল্যাণীর বিএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।” এ ব্যাপারে থানায় বিএসেফের তরফে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য জহুরুল হক চৌধুরী বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “প্রতিদিন চুক্তি করে হাজার হাজার গরু ও মানুষ পাচার করছে বিএসএফ। চুক্তি নিয়ে বচসার জেরেই পাচারকারীদের সঙ্গে জওয়ানদের সংঘর্ষ হয়। তার মাঝে পড়ে একজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হল।” একই অভিযোগ মহিনের বাবা সাজাউদ্দিন মোল্লার। মহিনের পরিবারের তরফে বিএসএফের বিরুদ্ধে তাঁকে গুলি করে মারার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দেহটি ময়না তদন্তের জন্য বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল মহিনের মৃত্যুতে বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাঁদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে এলাকায় গরু পাচার প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছে। রাত নামলে অবাধে সীমান্ত পারাপার করছে দুই দেশের দুষ্কৃতীরা। গরু পাচার নিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটছে। কয়েক মাস আগেই স্বরূপনগরের কৈজুড়িতে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা গরু পাচারে বাধা পেয়ে দুই জওয়ানকে মারধর করে। মৃত্যু হয় এক জওয়ানের। ওই গ্রামেই গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় এক বৃদ্ধাকে গরু দিয়ে পিষে মারা হয়েছিল। সীমান্ত লাগোয়া তারালি গ্রামে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা বিএসএফের একটি চৌকি পুড়িয়ে দেয় এবং হাকিমপুরে জওয়ানদের চেকপোস্ট ভেঙে দেয়। |