মহানন্দায় ছাড়া হল চিতাবাঘকে
সোমবার বেলা ১ টা নাগাদ ধরা হয়েছিল। প্রায় ২০ ঘন্টা নজরদারিতে রাখার পর মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ মহানন্দা অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়া হল চিতাবাঘটিকে। গাড়িতে রাখা খাঁচার দরজা খুলে দেওয়ার পর সেটি অন্তত ৩০ ফুট লম্বা লাফ দিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। কুয়াশার মধ্যে ঘনজঙ্গলে মিলিয়ে যেতেই হাসি ফোটে বনকর্মীদের মুখে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তাঁরা। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার অতুলপ্রসাদ সরণির একটি বাড়ি থেকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে সেটিকে ধরার পর অক্ষত অবস্থায় জঙ্গলে ফেরানোই ছিল লক্ষ্য। চিতাবাঘের হামলায় কারও ক্ষতি হলে যেমন চিন্তার বিষয় তেমনই চিতাবাঘটির ক্ষতি হলেও নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হত বন দফতরকে। সে জন্য সুস্থ অবস্থায় জন্তুটিকে জঙ্গলে না ফেরানো পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছিলেন না তাঁরা।
বস্তুত, শিলিগুড়ি শহরে ঢুকে পড়া পুরুষ চিতাবাঘটিকে ঘিরে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে হইচই পড়ে যায়। ওই দিন বেলা ৯ টা নাগাদ গোষ্ঠপাল সরণিতে এক জনকে জখম করে লাগোয়া অতুলপ্রসাদ সরণিতে মিনা ঘোষের বাড়িতে শোওয়ার ঘরে ঢুকে পড়েছিল সেটি। শহরে চিতাবাঘ ঢোকার খবরে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দুশ্চিন্তায় পড়ে বন দফতর, পুলিশ প্রশাসন। লাগোয়া দুটি ঘরের মধে একটির দরজায় হাতল না থাকায় সেটি বাইরে থেকে আটকানোর ব্যবস্থা ছিল না। নীতীশ ঘোষ নামে এলাকার এক ব্যক্তি দরজা ভেজিয়ে আঁশ বটি তলা দিয়ে বেঁকিয়ে ঢুকিয়ে দেন। তার পর সেটি সোজা করে টেনে ধরে বাইরে থেকে আটকে রাখেন দরজা। সেই থেকে শুরু হয়েছিল সেটিকে ধরার লড়াই। জানলা দিয়ে থাবা মেরে আরও এক জনকে এরই মধ্যে জখম করে চিতাবাঘটি। বেলা ১ টা নাগাদ জানলা দিয়ে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে সেটিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুকনায়। এর পর জন্তুটির পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছিল। রাতে জল খেতে দেওয়া হলেও সেটি মুখে নেয়নি। তাতে চিন্তায় পড়েন বনকর্তারা। সুকনা ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের রেঞ্জ ওয়ার্ডেন কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বন্যপ্রাণী জল, খাবার খেলে বোঝা যায় সেটি স্বাভাবিক এবং সুস্থ রয়েছে। গত রাতে জল না খেলেও এ দিন ভোরে ২ টি বোতলে করে জল দিলে চিতাবাঘটি খেয়েছে। সুস্থ এবং অক্ষত রয়েছে সেটি। তা পরীক্ষা করেই সেটিকে গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
অন্য দিকে আগের দিনের আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি মিনাদেবী। তাঁর বাঁ হাতেও জখম হয়েছে চিতাবাঘের থাবার আঘাতে। বাড়িতে একাই থাকেন মিনাদেবী। পাশেই রয়েছে তার দেওয়র বিশুবাবুর বাড়ি। মিনাদেবীর ৩ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাঁরা শ্বশুর বড়ি থাকেন। খবর পেয়ে ওই দিন মেয়েরা চলে আসেন। পাশে অনিতা ভদ্রদের বাড়িতে সোমবার রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। মিনাদেবীর দুটি ঘরে বিছানা বালিশ, লেপ তোষক নখ দিয়ে ছিঁড়ে নষ্ট করেছে চিতাবাঘটি। দাপাদাপি করায় টেবল থেকে পড়ে ভেঙে গিয়েছে টিভি। আলনা, ড্রেসিং টেবল-সহ মেয়ের বিয়ের উপহার প্রচুর জিনিস রাখা ছিল একটি ঘরে সেগুলি নষ্ট হয়েছে। বাঘ দেখতে লোকজন ঘরের টিনের চালে ওঠায় সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন দফতরের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া পুরসভা এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফেও তাদের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বৈকুন্ঠপুরের ডিএফও ধর্মদেব রাই বলেন, “নিয়ম মেনে জখমদের চিকিৎসার খরচ দেবে বন দফতর। তা ছাড়া যাঁর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে।” বাঘের আক্রমণে জখম গোষ্ঠপাল সরণির বাসিন্দা শুভঙ্কর মণ্ডল এবং রবীন্দ্রনগরের দুধ মোড়ের বাসিন্দা উত্তম ঘোষ অনেকটা সুস্থ হওয়ায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে এ দিন তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.