সম্পাদক সমীপেষু ...
নারী ‘তন্দুরি চিকেন’?
‘মাই নেম ইজ শীই...লা, শীলা কি জওয়া...নি...’ গানটা আগেও শুনেছি। জমজমাট বোম্বাই আইটেম নাম্বার। সাধারণত কোনও ভিলেন বা বস্তিবাসীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই চটুল নাচগুলো আইটেম নাম্বার হিসেবে হিন্দি ছবিতে গুঁজে দেওয়া হয়। গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল।
২০১৩-র প্রথম দু’-চার দিনের মাথায় টিভি চালাতেই চোখে পড়ল ‘শীলা’-র নাচ, ক্যাটরিনা কাইফ-এর জওয়ানির দাপট! চমকে উঠলাম। আগে এ রকম কখনও মনে হয়নি।
ক’দিন আগেই ঘটে গেছে দিল্লির বাসে একটি তরুণীর ওপর জনা সাতেকের সমবেত অত্যাচার-কাণ্ড। সারা দেশ তোলপাড়! কেন হয়? কী করা যায়? মোট কথা, মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টা।
আমি দেখলাম শীলা নামক পরমাসুন্দরী মেয়েটিকে। সুসজ্জিতা, কিছুটা বিদেশিনি চেহারা। রূপের আত্মবিশ্বাসে নেচে যাচ্ছে উদ্দাম। কিন্তু তাকে ঘিরে এরা কারা? এরা তো প্রেমিক নয় কেউ! কালো কালো কতকগুলো অবয়ব। মুখহীন, পরিচয়হীন শুধু পুরুষ চেহারা। তারা খুব কাছে কাছে ঘিরে নাচছে শীলার চার দিকে। শুধু ছুঁতে বাকি চোখ দিয়ে, হাতের, শরীরের ভঙ্গি দিয়ে চেটেপুটে নিচ্ছে মেয়েটির শরীর। তারা জানে, ওই মেয়েটিকে ছুঁতে পারবে না। মেয়েটির গানই সে-কথা জানিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটি তাদের ধরাছোঁওয়ার বাইরে।
কিন্তু যদি কখনও পায়? হঠাৎ যদি নাগালের মধ্যে পেয়ে পায় একা, অসহায়, নিরাপত্তাহীন অবস্থায়? তখন কী হবে? এ যেন খুব ক্ষুধার্ত, বুভুক্ষু মানুষের সামনে লোভনীয় খাবার রেখে বলা খবরদার! খাবে না। শুধু দেখতে পারো।
এ আমরা কোথায় চলেছি? সত্যিই তো! আমাদের দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী নারী-পুরুষ সম্পর্ক এখনও সুস্থ স্বাভাবিক হতে অনেক দেরি। অনেক পুরুষ বা নারীই বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার কথা ভাবতেও পারে না। এখনও। অশিক্ষিত, গ্রাম্য, দরিদ্র তো আছেই; আরও আছে, যারা প্রচুর অর্থ, বাবার গাড়ি, জোরদার খুঁটি মন্ত্রী বা আমলামহলে সবই পায়। তারাও সবাই ছোট থেকে মেয়ে বন্ধু তো পায়ইনি, বরং বাড়ির মহিলাদের দাসী-বাঁদির মতো ব্যবহৃত হতে দেখেছে। ভুল শিক্ষা পেয়েছে বাবা, কাকা, দাদাদের কাছ থেকে। এরাই তো সম্ভাব্য ধর্ষক। এ রকম হয়তো হাজার হাজার ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরে-গঞ্জে। হয়তো কেন? নিশ্চয়ই। অর্থাৎ, রাস্তায় বাঘ-ভাল্লুক ঘুরে বেড়াচ্ছে, মেয়েরা সাবধান থেকো। মনে হয়, শতখানেক বছর আগের বেগম রোকেয়ার কল্পিত আইডিয়াটাই বেশ ছিল। ‘জেনানা’-র বদলে ‘মর্দানা’ তৈরি করে পুরুষদের আটকে রাখো। তারাই তো বিপজ্জনক। বাঘ-সিংহকে তো খাঁচাতেই রাখতে হয়!
যাই হোক, মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি বেরোচ্ছে, পড়াশোনা-চাকরি করছে। চাকরির রকমবিশেষে তাদের রাতেও ডিউটি থাকতে পারে। রাতে ঘুরে বেড়ানো মেয়ে মানেই ‘নষ্ট মেয়ে’ এই স্বতঃসিদ্ধের দিন শেষ। তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
সমস্ত স্কুল-কলেজ শহরে এবং গ্রামে, বাধ্যতামূলক ভাবে কো-এডুকেশন করা উচিত। আর বন্ধ করতে হবে এই রকম ‘আইটেম নাম্বার’। সুড়সুড়ি দেওয়া কুরুচিকর কথা ও অঙ্গভঙ্গি-সহ নাচ বাদ দিতেই হবে। একটা গানে আবার মেয়েটি নিজেকে ‘তন্দুরি চিকেন’ বলে বর্ণনা করছে। জানি না, প্রতিষ্ঠিত নায়িকারা এই রকম অমর্যাদাজনক কাজ কী করে করতে রাজি হন?
আমরা, যারা সুষম আবহাওয়ায় বড় হয়েছি, তারা এগুলোকে মজা-তামাশা হিসেবে উড়িয়ে দিতেই পারি। কিন্তু এই বিরাট অসম বিকাশের দেশে, ভণ্ডামির দেশে, ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের দেশে স্বাভাবিক মনস্তত্ত্ব বিকাশের সুযোগ অনেকেই পায় না।
আজকাল সার্কাসে জন্তু ব্যবহার বন্ধ করা হচ্ছে। বেঁটে বা বিকলাঙ্গ জোকার কুরুচিকর বলে মনে করা হচ্ছে, কেউ মজা পাচ্ছে না তেমন আর। সেই রকমই আইটেম নাম্বারকে ঘৃণা করতে হবে, তুলে দিতে হবে।
সরকার/সেন্সর বোর্ডকে সচেতন হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.