গৃহবধূ নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। মঙ্গলবার এমনই একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কানোয়াল সিংহ অহলুওয়ালিয়া।
আদালতের বক্তব্য, এ রকম অভিযোগের বিচারের ক্ষেত্রে শুধু আইনের ধারা-উপধারায় আটকে না-থেকে বাস্তব পরিস্থিতিকে মূল্য দিতে হবে। এ দিন নারী-নির্যাতন সংক্রান্ত একটি মামলার রায় শোনান বিচারপতি। মৌমিতা মিত্র নামে এক গৃহবধূ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে তাঁর উপরে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছিলেন পুলিশের কাছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করে। মৌমিতার ননদ মিতা ভাদুড়ি ও তাঁর স্বামী তপন ভাদুড়ি আগাম জামিন পান। তাঁরা পরে হাইকোর্টে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করার আবেদন জানান। এ দিন রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি জানান, তপনবাবু এবং তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গত কারণ ছাড়াই বারবার আদালতে আসতে হয়েছে। অকারণে মানসিক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। এর পরেই মিতা ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে কোর্ট।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, মৌমিতার বিয়ে হয় ২০০৪ সালে। মিতা ও তপনের বিয়ে হয় প্রায় ২০ বছর আগে। তাঁরা মৌমিতার শ্বশুরবাড়িতে থাকেন না। বছরে এক-আধ বার বাপের বাড়িতে যান মিতা। অথচ মৌমিতা নির্যাতনের অভিযোগে তাঁদের নামও করেছেন। এখন সেই মামলাতেই স্বামী-স্ত্রীকে দিনের পর দিন হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলা কবে শেষ হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই।
আদালতের মন্তব্য, অনেক সময়েই দেখা যায়, এক জন মহিলা তাঁর উপরে নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে এক পরিবারের চার-পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করছেন। বিচারের জন্য বছরের পর বছর তাঁদের সকলকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যথাযথ তথ্যপ্রমাণ না-পাওয়ায় ওই সব মামলার শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তেরা দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন না। বিচারপতি রায়ে বলেছেন, প্রকৃত সত্যে পৌঁছে দোষীকে শাস্তি দেওয়া এবং নির্য়াতিতাকে রক্ষা করাই বিচারের লক্ষ্য। কিন্তু এই ধরনের অধিকাংশ মামলায় প্রকৃত সত্যে পৌঁছনো দুরূহ হয়ে পড়ছে।
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টে থাকাকালীন বিচারপতি পিনাকী ঘোষ এই ধরনের মামলার রায়ে বলেছিলেন, স্বামী নিজে অত্যাচার না-করলে এবং পরিবারে অত্যাচারিত হওয়ার খবর পেয়ে কড়া ব্যবস্থা নিলে কোনও মহিলার উপরে পরিবারের অন্যেরা কখনওই অত্যাচার করতে পারেন না। স্বামীর মদত না-থাকলে পরিবারে স্ত্রীর মর্যাদা নষ্ট হওয়া সম্ভব নয়। |