|
|
|
|
পুলিশকে ডেকে নিজের বিয়ে রুখল নাবালিকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
বান্ধবীর মোবাইল থেকে থানায় ফোন করে নিজের বিয়ে আটকে দিল অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী। পুলিশকে দেখে বর ও বরযাত্রীরা পালিয়ে গেলেন বিয়ে বাড়ি থেকে। মেয়ের আঠারো বছর হওয়ার আগে আর তার বিয়ের জন্য জোর করবেন না বলে পুলিশের
কাছে মুচলেকা দিয়ে রেহাই পেলেন নুর বানু নামে ওই নাবালিকার বাবা শেখ তোহিদ। মালদহের মানিকচক থানার চৌকি জিশানটোলা গ্রামের নুর বানুর পড়াশোনার খরচ পুলিশই দেবে বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি পরিমল সাহা। |
নুর বানুর অভিযোগ নথিবদ্ধ করছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র |
বাড়ি থেকে স্কুল যাওয়ার পথেই নুর বানু রোজ দেখতে পেত পঞ্চায়েত দফতরের সামনেই একটি বোর্ডে ঝুলছে থানা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরের নম্বর। সেই নম্বরটির কথাই মনে পড়ে গিয়েছিল রবিবার দুপুরে। তার কথায়, “বাড়িতে অনেকবার বলেছি বিয়ে করব না। পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু কেউ সে কথা শোনেনি। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে এক বান্ধবীর মোবাইল থেকে লুকিয়ে থানার ওই নম্বরে ফোন করেছিলাম।” পরিমলবাবু জানান, ফোনটি পেয়েই তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন। বাড়িতে পৌঁছে তাঁরা দেখেন নুর বানু হাউহাউ করে কাঁদছে। সে এগিয়ে এসে বলে বিয়ে করবে না। সে পড়তে চায়, কিন্তু বাবা রাজি হচ্ছে না। পেশায় দিনমজুর শেখ তোহিদের সাফাই, তাঁর চার ছেলেমেয়ে, অভাবের সংসারে বড় মেয়ের জন্য ভাল পাত্র পেয়ে হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। পরে অবশ্য তিনি বলেন, “পুলিশ
আমার ভুল ভেঙে দিয়েছে। মেয়ের ১৮ বছর না হলে বিয়ে দেব না।” জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পালের দাবি, “গত বছর জানুয়ারি থেকে এ বছর জানুয়ারির মধ্যে এই জেলায় পুলিশ অন্তত দেড়শো নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছে।”
মানিকচকে সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশ হলেও চৌকি জিশানটোলায় সেই হার বেশি নয়। প্রায় দেড়শো ঘর পরিবারের বাস। কিন্তু ওই এলাকার কেউই এখনও মাধ্যমিক পর্যন্ত পাশ করেননি। তবে এখন গ্রামে মহিলাদের পড়াশোনার উৎসাহ বাড়ছে। ওই কিশোরী যে বিদ্যালয়ে পড়ে সেই কালিন্দ্রী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজিবুল ইসলাম বলেন, “নুর বানু খুব মেধাবী হয়তো নয় কিন্তু মেয়েটির পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ খুব। ওই এলাকায় এমন মেয়ে আরও রয়েছে। প্রশাসন যে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে।” স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “নুর বানুর মতো নাবালিকাদের প্রত্যেকে যদি সাহস করে এ ভাবে এগিয়ে আসে তবে বাল্য বিবাহ বন্ধ হয়ে যাবে।” |
|
|
|
|
|