|
|
|
|
পড়ে পাওয়া ছুটিতে পর্যটকের ঢল মুর্শিদাবাদে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লালবাগ |
৫ দিনের ছুটিতে লালবাগে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। তার মধ্যে ২৬ জানুয়ারি সব থেকে বেশি, প্রায় ১৫ হাজার পর্যটক হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ও মিউজিয়াম দেখতে ভিড় করেন। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রতি বছর পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে।
সে তুলনায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হচ্ছে কি? যে আশা নিয়ে পর্যটক লালবাগ বেড়াতে আসেন, তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন বা ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি কতটা আন্তরিক? হাজারদুয়ারি মিউজিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরাতত্ত্ববিদ নয়ন চক্রবর্তী বলেন, “লালবাগের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে সরকার বা প্রশাসনের হেলদোল নেই। সরকারের পরিকল্পনার অভাবে ধুঁকছে লালবাগের পর্যটন শিল্প।” তাঁর কথায়, “পরিষেবার অভাব সত্ত্বেও পর্যটক বাড়ছে। তাঁরা আসেন মূলত হাজারদুয়ারি, কাটরা মসজিদ কিংবা, সিরাজের সমাধি দেখার টানেই। এখন সঠিক পরিষেবা দেওয় গেলে পর্যটন শিল্পে জড়িত মানুষ উপকৃত হবেন। জেলার অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।”
সপরিবারে ৩ দিনের জন্য বেড়াতে এসেছিলেন যাদবপুরের সৌমেন নন্দী। তাঁর অভিজ্ঞতা হল, “বহরমপুর থেকে লালবাগে গাড়ি নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু গাড়ি ভাড়া কোথায় পাওয়া যায়, কত টাকা লাগবে কিছুই জানি না। মুর্শিদাবাদের সিল্ক বা খাগড়ার কাঁসার বাসন নেওয়ার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু কোন দোকান থেকে কিনব, তা-ও হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “সব তথ্য পাব পর্যটন দফতরের এমন তথ্যকেন্দ্র বহরমপুরে পেলাম না।”
যদিও বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানের উত্তর দিকে সরকারি আবাসনের একটি ঘর নিয়ে পর্যটন দফতরের ‘ট্যুরিস্ট সেন্টার’ রয়েছে, যার দায়িত্ব রয়েছেন ট্যুরিস্ট অফিসার স্বপন দেবনাথ। স্বপনবাবু বলেন, “সিল্কের শাড়ি থেকে কাঁসার বাসন, এমনকী বহরমপুরের বিখ্যাত মিষ্টি ছানাবড়া কোথায় গেলে পাওয়া যাবে, তার হাল-হকিকত আমাদের কার্যালয়ে এলে পর্যটকদের জানিয়ে দিতে পারব। তবে বুকলেট বা লিফলেট আকারে কিছু নেই। গাড়ির জন্য পরিবহণ সংস্থার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া সম্ভব।”
কিন্তু অভিযোগ, পর্যটন দফতরের ওই সহায়তা কেন্দ্র ঘুপচি অন্ধকারে ঘরে। বাইরের হোর্ডিং দেখে বোঝা সম্ভব নয় যে, এটাই পর্যটন সহায়তা কেন্দ্র। স্বপনবাবু বলেন, “কার্যালয়টি যে জায়গায় রয়েছে, তার প্রচারের প্রয়োজন। জনবহুল ব্যস্ততম এলাকায় বিশেষ করে স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, লালদিঘি-খাগড়া-গোরাবাজার চত্বরে কার্যালয়ের ঠিকানা-ফোন নম্বর লেখা হোর্ডিং দিয়ে জানানোর প্রয়োজন আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানাব।” জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি অজয় সিংহও মনে করেন, পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের উদাসীনতা কাটছে না। তাঁর কথায়, “লালবাগের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে হোটেল, পরিবহণ সংস্থা, অটো-টাঙা-রিকশা চালক, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, খাগড়ার কাঁসা-শোলা-দারুশিল্প ব্যবসায়ীর, মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও। পর্যটন মরসুমে কত পর্যটক জেলায় আসছেন, তার উপরেই নির্ভর করছে ওই মানুষের রুজি-রোজগার। কিন্তু এ নিয়ে সরকার বা প্রশাসন উদাসীন। তাদের কোনও ভাবনা-চিন্তা নেই।” অজয়বাবু বলেন, “অনেকে লালবাগে বেড়াতে আসেন। কিন্তু তাঁরা কোনও কিছু কেনাকেটা করতে কোন দোকানে গেলে সঠিক জিনিসটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পাবেন, তা জানানোর মতো কেউ নেই।”
এই অবস্থায় পর্যটকেরা প্রতারিত হতে পারেন, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। পর্যটকদের অভিযোগ, সব থেকে আগে প্রয়োজন জেলার পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন। ওই বেহাল অবস্থার মধ্যেই গাড়ি ভাড়া নিতে যেমন চড়া দর হাঁকা হয়, পর্যটকদের অটো ও রিকশার অত্যাচার সইতে হয়। লালবাগ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে প্রশাসনিক স্তরের বৈঠকে খোদ পর্যটন দফতরের প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকেন। এমনকী ওই বৈঠকে পর্যটন শিল্পের প্রচার ও প্রসার বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটি নিয়ে আলোচনা হলেও তা কার্যকরী হয় না। প্রশাসনের তরফে নজরদারি চালানোর বিষয়টিও আলোচনার স্তরেই থেকে যায়।”
প্রবীণ শিক্ষক রামপ্রসাদ পাল বলেন, “পর্যটন উন্নয়ন নিয়ে কম কথা হচ্ছে না। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে কী! উন্নয়নের এমন একটি দিক নেই যা পর্যটকদের সঠিক পরিষেবার দিশা দেখাতে পারে। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটি এখানে উপেক্ষিত। নোংরা রাস্তাঘাট, যত্রতত্র ঘোড়ার মলমূত্র পড়ে রয়েছে—এগুলো জেলার পর্যটকদের রেখাপাত করে না। কিন্তু বহিরাগত পর্যটকদের তো কিছু এসেই যায়।”
ফলে প্রয়োজন লালবাগের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে পরিকল্পনার। কিন্তু অভাব ভাবনা-চিন্তা করার লোকের!
|
পর্যটকদের দশটি অস্বাচ্ছন্দ্য |
 |
১) ওয়াসিফ মঞ্জিল খুলে দেওয়া হয়নি।
২) পর্যটকদের স্নানাগার, জলের ব্যবস্থা, পোশাক বদলের জায়গা নেই।
৩) হাজারদুয়ারি চত্বর থেকে ইমামবাড়ার পিছন পর্যন্ত এবং পাহাড় বাগান এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) পাহাড়বাগান, ভাগীরথী পাড় বরাবর এলাকায়, সাদা মসজিদের মাঠ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
৫) কাটরা মসজিদে ফের আলোর ব্যবস্থা করলে পর্যটকেরা আকৃষ্ট হবেন।
৬) তোপখানা-মতিঝিল-কাঠগোলা বাগান, নসিপুর রাজবাড়ি, জাফরাগঞ্জ সমাধিক্ষেত্র, আজিমুন্নেষার সমাধি, ফৌতি মসজিদ যাতায়াতের রাস্তা সংস্কার দরকার। ওই রাস্তায় আলোও নেই।
৭) টাঙা চালকদের ভাড়ার তালিকা প্রকাশ এবং নির্দিষ্ট জায়গা থেকে পর্যটকদের তোলা-নামানোর ব্যবস্থা করা।
৮) ভাগীরথীর বুকে নৌকায় যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
৯) রাস্তা পরিচ্ছন্ন থাকে না।
১০) আস্তাবল মোড়, হাসপাতাল রোড, চক ও রেজিস্ট্রি অফিস মোড়ে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক পুলিশও নেই। |
|
|
|
 |
|
|