|
গৌর খ্যাপা |
‘খাঁচা’ ভেঙে উড়ে গেল ‘অচিন পাখি’। শনিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে মারা গেলেন পথ দুর্ঘটনায় জখম বাউল শিল্পী গৌর খ্যাপা (৬৬)। মঙ্গলবার রাতে জয়দেব থেকে শান্তিনিকেতন ফেরার পথে চৌপাহাড়ি জঙ্গলের কাছে একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারে। ওই গাড়িতেই ছিলেন গৌর খ্যাপা-সহ কয়েক জন। ঘটনাস্থলে মারা যান গাড়ির চালক ও আর এক জন। জখম শিল্পীকে কলকাতায় আনার পরে তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাসে ১০ হাজার টাকা পেনশন দেওয়া হবেও বলে জানান। এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ নিয়ে কঙ্কালীতলায় যান রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও চন্দ্রনাথ সিংহ। লাভপুরের তরুলিয়া হাটতলার বাসিন্দা হলেও বোলপুরের নিচু বাঁধগোড়াতেই আখরা গড়ে থাকতেন গৌর। বব ডিলান, বব মার্লের মতো বহু আন্তর্জাতিক শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। বাউল সঙ্গীতের সারল্যকে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন শহুরে মননের দরবারে। বোলপুরের আর এক প্রবীন বাউল শিল্পী তরুণ খ্যাপার প্রতিক্রিয়া, “বাউলের এক ঘরানা শেষ হল।” অন্ত্যেষ্টিতে হাজির হয়েছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের অনেকে। এক জনকে বলতে শোনা গেল, “হৃদমাঝারে রাখব ওঁকে। ছেড়ে দেওয়া যাবে না!”
|
একটা ঘরানা শেষ হল
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
বাউল শিল্পী গৌর খ্যাপার মৃত্যুতে এক বাউল ঘরানা শেষ হল। শনিবার রাতে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে মারা যান ৬৬ বছরের এই শিল্পী। স্বাভাবিক ভাবে তাঁর মৃত্যুতে শিল্পী মহলে শোকের ছায়া। লাভপুরের তরুলিয়া হাটতলার বাসিন্দা হলেও প্রচার বিমুখ এই শিল্পী চার দশকের বেশি সময় ধরে বোলপুরে নিচু বাঁধগোড়ায় থাকতেন। সেখানে তাঁর আশ্রমও আছে। দেশের নানা প্রান্ত তো বটেই, আমেরিকা, ইউরোপ ঘুরেও বাউল সংস্কৃতির প্রসারে মন দিয়েছিলেন আপন ভোলা এই বাউল শিল্পী।
|
বোলপুরের বাড়িতে শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা। ছবি: ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতে জয়দেব থেকে শান্তিনিকেতনে ফেরার পথে ইলামবাজারের চৌপাহাড়ি জঙ্গলের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁদের গাড়িটি একটি গাছে ধাক্কা মেরেছিল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল পশুপ্রেমী সংগঠনের কর্মী টুটুল সিংহ ও চালক বিশ্বজিৎ সাহার। গুরুতর জখম অবস্থায় বাউল শিল্পীকে বোলপুর থেকে বর্ধমানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়। শনিবার কলকাতায় তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ নিয়ে বোলপুরের বাড়িতে যান রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও চন্দ্রনাথ সিংহ। রবিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ কঙ্কালীতলায় সমাধিস্থ করা হল শিল্পীকে। আত্মীয়-পরিজন, মন্ত্রী ছাড়াও জেলা প্রশাসনের কতা ও অন্যান্য শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। বোলপুরের শিল্পী তরুণ খ্যাপার প্রতিক্রিয়া, “তাঁর মৃত্যুতে বাউলের এক ঘরানা শেষ হল।” লাভপুরের শিল্পী কার্তিক দাস বাউলের আক্ষেপ, “ওঁর গলা আর শুনতে পাব না।” প্রয়াত শিল্পীর ঘরে রয়েছেন স্ত্রী দুর্গা দাসী, মেয়ে ও জামাই। জামাই গোঁসাই রায়চৌধুরীর কথায়, “এ ভাবে উনি চলে যাবেন ভাবতে পারছি না।” যাই হোক, বীরভূমের বাউল শিল্পীরা একটা বিষয়ে একমত হরিপদ গোঁসাই সন্ন্যাসীর শিষ্য গৌর খ্যাপা বাউল সাধনাকে অন্য মার্গে পৌঁছে দিয়েছেন। |