|
|
|
|
নায়ক ন্যাপি আর রাতজাগা
একজন চার দিনের, অন্যজন সাতচল্লিশ দিনের। দুই বাবা। আবির চট্টোপাধ্যায় ও জিৎ।
তাঁদের মেয়েদের গল্প করতে করতে মাতলেন তুমুল আড্ডায়। সাক্ষী রইলেন ইন্দ্রনীল রায় |
জিত্ তখন তাঁর অফিসে জরুরি মিটিং করছেন। এমন সময় ঢুকলেন আবির। ঢুকেই সোজা জিতের কেবিনে। “আরে আবির, কনগ্র্যাটস। কনগ্র্যাটস ব্রো,” বলে সাতচল্লিশ দিনের বাবা জড়িয়ে ধরলেন চার দিনের বাবাকে।
জিৎ ও আবির।
দুই নায়ক।
দু’জনেই কন্যাসন্তানের পিতা। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
আর হিরোইন কম পড়বে না
“আবির, বৌ কেমন আছে? কবে ছাড়বে বলেছেন ডাক্তার? বাচ্চার ওজন কত হল?” জিৎ তখন অভিভাবক-এর মতো একের পর এক প্রশ্ন করছেন আবিরকে।
আবিরও বাধ্য ছাত্রের মতো সব উত্তর দিচ্ছেন। সঙ্গে এটাও যোগ করলেন, “আমাদের আর ইন্ডাস্ট্রিতে হিরোইনের অভাব হবে না বলো! তোমার মেয়ে, আমার মেয়ে, যিশুর মেয়ে, ইন্দ্রনীলের মেয়ে। উফফ্ হিরোইন আর কম পড়বে না,” হাসতে হাসতে বলেন আবির। জিৎ তখন এগিয়ে দেন চায়ের কাপ।
আমার পুরো ঘরটাই এখন মেয়ের
দুই নায়ক অবশ্য তখন মেয়েদের নিয়ে গল্প করতেই মশগুল। “মেয়ে আসার পর জীবন কী রকম বদলে গেছে তোমার?” আবির প্রশ্ন করেন জিৎকে।
“আমার পুরো জীবনটাই বদলে গিয়েছে। আমার ঘর কতটা বদলে গিয়েছে জানো? আগে খুব স্টাইলিশ ছিল ঘরটা। এখন গেলে দেখবে মেয়ের খাবার, কাঁথা, ন্যাপি ঘরের সর্বত্র। পুরো ঘরটাই এখন নভন্যিয়ার। হেসো না। তোমারও তাই হবে আবির,” মুচকি হেসে বলেন জিৎ। |
জিতের টিপস্ |
• রাতে জেগে থাকার অভ্যাস করে নাও আবির। প্রথম দু’মাস তো ঘুম হবেই না। তা ছাড়া, বাচ্চার খাবার, ন্যাপি সব যেন হাতের কাছে থাকে।
• যত দিন যাবে, মেয়ের সঙ্গে কানেকশন আরও বাড়বে। যে কোনও কাজে বেরোলেও মন থাকবে বাড়িতে। আমার ক্ষেত্রে তো তাই হচ্ছে, আবিরেরও তাই হবে।
• বাড়িতে যে অ্যালার্ম ঘড়িটা আছে, সেটা আজকেই ছুড়ে ফেলে দাও। ওটার আর কোনও দরকার নেই। কারণ? মেয়ে শুধু ‘উঃ’ বললেও ঘুম ভেঙে যাবে।
• এ বার থেকে যেখানে যা-ই কিনতে যাবে, মনে হবে মেয়ের জন্য কী কিনব? আমার তো আজকাল শপিংয়ে গেলে মনে হয় নভন্যিয়া-র জন্য কিছু কেনা হল না।
• শেষ টিপস্ আবিরকে—দেখবে তোমার পুরো জীবনটাই বদলে গেছে। আমার পৃথিবীটা পুরোটাই মেয়ে-কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আবির, ইয়োর ওয়ার্ল্ড উইল অলসো চেঞ্জ। |
|
দু’জনেই আমরা ওটিতে ছিলাম
এর মধ্যেই আবির অবশ্য তাঁর ব্ল্যাকবেরিতে জিৎকে দেখাচ্ছেন তাঁর মেয়ের ছবি। জিৎও তাঁর আইফোনে দেখালেন নভন্যিয়ার ছবি।
এর মধ্যেই জানা গেল, দু’জনের মেয়ে একই হসপিটালে হয়েছে। তাদের ডাক্তারও এক। মিল শুধু এখানেই নয়। মিল আছে আর এক জায়গাতেও। দুই নায়কই অপারেশন থিয়েটারে বৌয়ের কাছে ছিলেন।
“দু’জনেই ওটিতেও ঢুকেছিলাম বৌদের সঙ্গে। যদিও জিতের আমার থেকে বেশি সাহস। জিৎ পুরো অপারেশনটা রেকর্ড করেছিল। আমার অত সাহস নেই বাবা। আমি এমনি গিয়েছিলাম। নন্দিনীকে সাহস জোগাতে,” বলেন আবির।
ময়ূরাক্ষী চট্টোপাধ্যায়, শুনতে ভাল লাগছে
এতক্ষণে আবিরের মেয়ের নাম কী দেওয়া হবে তা নিয়ে আড্ডা শুরু।
“নন্দিনীর তো ইচ্ছে মেয়ের নাম হবে ময়ূরাক্ষী। সেটাই রাখব আমরা। শুনতে ভাল লাগছে কিন্তু। ময়ূরাক্ষী চ্যাটার্জি,” আবির বলেন জিতকে।
জিৎ তখন বলছেন মেয়ে আসা মানে কিন্তু সত্যি লক্ষ্মী আসা জীবনে। “মেয়ে মানেই লক্ষ্মী। মোহনা যখন প্রেগনেন্ট তখন ‘আওয়ারা’ মুক্তি পেল ও সুপারহিট হল। তার পর ‘দিওয়ানা’ মুক্তি পেল। ওটাও সুপারহিট। আমার মেয়ে আমার লক্ষ্মী,” খুব গর্বের সঙ্গে বলেন জিৎ। |
আবিরকে নায়িকারা কী বলল |
স্বস্তিকা |
পার্নো |
মিমি |
স্বস্তিকা তো খুব খুশি। ওর মেয়ে মানি আর আমার মেয়ের জন্মদিন একই দিনে হল। বলছে পুরোটাই ম্যাচিং ম্যাচিং। ও আমাকে বলেছিল, “আমার ডেড লাইন ৩১ জানুয়ারি ২০১২।” আমি শুধু ২৪ দিনের জন্য ডেড লাইন মিস করেছি। আর ন্যাপি বদলানোর দরকার হলে জানি ও আছে। |
পার্নো তো মেয়ে হয়েছে শোনা মাত্র বলল, “তোমার মেয়ে আমাকে দিদি বলবে, না মাসি?” আমি বলেছি মাসি বলবে। (হেসে) পার্নোর নিজেকে ছোট প্রতিপন্ন করার একটা চেষ্টা আছে। ও নিজেই নাকি ঠিক করবে আমার মেয়েকে কত ছোট জামা-কাপড় পরানো যায়। হায় ভগবান! |
মিমি প্রথম দিন হাসপাতালে মেয়েকে দেখতে এসেছিল। শুনেছি সদ্যোজাতরা দু’দিন চোখই খোলে না। কিন্তু মিমি দাবি করছে নার্সারিতে আমার মেয়ে নাকি ওকে দেখে চোখ খুলেছে। আমার মেয়ের সঙ্গে এতটাই কানেক্ট। এত নায়িকা আশেপাশে। মেয়ের যেন মাথাটা ঠিক থাকে। |
|
আর হিরোইন নয়, এখন মেয়েদের গল্প
আড্ডা প্রায় শেষের মুখে। জিৎ অবশ্য তখন তাঁর গুরু অমিতাভ বচ্চনের কথা বলতে ভোলেন না। “আমার জীবনে গুরু একজনই। অমিতাভ বচ্চন। গুরুর প্রথমে মেয়ে হয়েছিল। আমারও তাই।” বললেন জিৎ।
আবির অবশ্য তখন অন্য আলোচনায়। জিতের উদ্দেশ্যে বলেন কতটা বদলে গিয়েছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। “আগে নায়করা আড্ডা মারতে বসলে নায়িকাদের নিয়ে কথা বলত। আর আজকে দেখুন? আমি আর জিৎ দেখা করে শুধু আমাদের মেয়েদের নিয়েই আলোচনা করে গেলাম। বাবা হলে সত্যিই জীবনটা বদলে যায়,” জিৎকে জড়িয়ে বললেন আবির।
সত্যি, জীবনটাই বদলে গিয়েছে টালিগঞ্জের দুই নায়কের।
জিৎ ও আবির।
বদলে দিয়েছে দুই কন্যা।
নভন্যিয়া ও ময়ূরাক্ষী। |
ডাক্তারের পরামর্শ |
ড. রাজীব অগ্রবাল
(জিৎ এবং আবির দু’জনেরই স্ত্রীদের চিকিৎসক) |
ড. ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়
(শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ) |
• জিৎ ও আবির, প্রথম দু’বছর প্লিজ মেয়েদের সঙ্গে
যতটা পারবেন সময় কাটাবেন। তিন বছরের পর থেকে
ওর অন্য জগৎ তৈরি হয়ে যাবে। সেই সময় ওর আর
আপনাদের সে রকম দরকার হবে না।
• আপনাদের যেমন ব্যস্ত লাইফ স্টাইল, অনিশ্চিত
কাজের সময়, সব দেখে মনে হচ্ছে সাবধানতা অবলম্বন
করে মেয়ে আর বৌকেও আউটডোরে নিয়ে যান।
• বাচ্চাদের এটা জানা খুব দরকার, তার
বাবা কোথায় ও কী কাজ করে? তাই মাঝে মাঝে
ওদের কাজের জায়গায় নিয়ে যান। শুধু এটা বুঝতে
দেবেন না ওরা স্টারের মেয়ে। একদম নর্মাল
বাবাদের মতো ব্যবহার করুন। |
• এই সময় মায়েরা বাচ্চা সামলাতে গিয়ে
মাঝে মধ্যে কোন ওষুধ কখন লাগবে সেটা
ভুলে যান। তাই জিৎ আর আবির যেন নিজেদের
কাছে প্রেসক্রিপশনের একটা কপি রাখেন।
• বাচ্চা হওয়ার পরে বাড়িতে লোকজনের
আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। কিন্তু একটু রেস্ট্রিকশন
করলে ভাল হয়। না হলে বাচ্চার ইনফেকশন হতে পারে।
• জানি জিৎ আর আবিরের স্ট্রেসফুল লাইফ।
কিন্তু ওঁরা প্রথম এক বছর যেন চেষ্টা করেন
টেনশন বাড়ির বাইরে রেখে আসতে।
• বাড়ির কাছের হাসপাতালের নাম্বার
যেন হাতের কাছে থাকে। |
|
|
|
|
|
|