|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
আখ্যান, বিশ্লেষণ |
‘দোতলা বাসের উপরে যদি হেলিকপ্টারের মতো পাখা লাগিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কেমন হয়? গড়ের মাঠ থেকে পাখা ঘুরিয়ে বাসগুলো আকাশে উড়ে যাবে।’ তাঁর গল্পের এমন আশ্চর্য বাক্যের মতোই সমরেশ রায়ের সদ্য বেরনো গল্পগ্রন্থটির নাম
কেউ কি আমার চরণধ্বনিকে/
পলকপাত ভেবে ফেলছে?/
ওরা শর সংযত করুক (প্যাপিরাস, ৪০০.০০)।
তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে দেবেশ রায়ের মন্তব্যটি যথার্থ: ‘সমরেশ আমাদের জানাল যে দেশটার টুকটাক ভৌগোলিক অদলবদল ঘটছে বটে কিন্তু মানুষগুলো ও তাদের বেঁচে থাকার কষ্ট তো বদলায় না। সাহিত্যে এমন মনে করিয়ে দেয়া খুব কঠিন কাজ।’
অভীক গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ৪২,১৯২টি ভাষার মধ্যে আজ ৬৯১২টি ভাষা এক অর্থে জীবিত, ২০০৬ থেকে বছরে অন্তত ৩০০০ ভাষার মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৮.১২। অনুমান ২০৫০-এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশের কাছে ভাষার উত্তরাধিকার থাকবে। তাঁর ভাষার মৃত্যু/ লুপ্ত ও মৃত ভাষার খোঁজে-তে (ভাষাবন্ধন, ৩২৫.০০) তিনি ভাষার জন্ম, বিলুপ্তি, বিপদ, অভিধা, বা সে সম্পর্কে ভাষাবিদদের ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আছে ভারতের বিপন্নপ্রায় অপ্রধান ও আঞ্চলিক ভাষাসমূহেরও আলোচনা।
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের পরশুরামকে নিয়ে প্রথম দু’টি বইতে ছিল তাঁর গল্পের আখ্যান, রূপ ও চরিত্রের বিশ্লেষণ, আর তৃতীয় ও নতুন বইটিতে (পরশুরাম বিবিধ। অবভাস, ১০০.০০) পরশুরামের রাজনৈতিক গল্প, না-হাসির গল্প, পৌরাণিক গল্পগুচ্ছ, ভাষাভঙ্গি নিয়ে আলোচনা। লেখকের মন্তব্য: ‘আগাগোড়াই তিনি সময়সচেতন: গল্পর আড্ডাগুলির চরিত্রও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায়।’
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে স্বস্তি মণ্ডল তাঁর সম্পাদিত মানিক অন্বেষা-র (অক্ষর, ২৫০.০০) নিবেদন-এ লিখছেন ‘তিনি ও তাঁর কথাসাহিত্য প্রচলিত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যের বিপরীতে একই রকম ভাবে অস্বস্তি ও অনিবার্য আকর্ষণ রূপে অন্বেষু পাঠককে নতুন করে ভাবায়।’ প্রবীণ ও নবীন প্রাবন্ধিকদের নতুন চিন্তন মানিককে নতুন ভাবে আবিষ্কারের খোরাক জোগাবে।
সমুদ্র আর মৃত্তিকা-র পর স্বাতী গুহের নতুন আখ্যান সাঁঝতারার স্বপ্নকথা-য় (প্রতিভাস, ১৫০.০০) যেন আকাশের স্বাদ, ট্রিলজি সম্পূর্ণ হল। কলকাতার রাস্তাঘাট থেকে ভারতের গ্রাম-শহরে ঘুরে বেড়ায় কাহিনি, তাতে বন্ধ চা কারখানা, পাথর-ভাঙা বাচ্চাদের সঙ্গে একা হতে থাকা মানুষজনও আছে।
জগন্নাথ বিশ্বাস, অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিককে নিয়ে প্রয়াণলেখ দিবারাত্রির কাব্য-এ (সম্পা: আফিফ ফুয়াদ)। উপন্যাস, গল্প, ভ্রমণ, কবিতা, প্রবন্ধ, গ্রন্থ-আলোচনার সঙ্গে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার, আর শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে নিয়ে ক্রোড়পত্র তাতে আলপনা রায় লিখছেন তাঁর রবীন্দ্রসংগীত চিন্তা বইটি সম্পর্কে: ‘ফিরে দেখা গেল সেই মানুষটিকেই, সংগীতের আলোচনাতেও যাঁর বিজ্ঞানীর মতোই স্বচ্ছ বিশ্লেষণ...।’ “একদিন পাঠশালা হইতে আসিয়া দেখিলাম বাবার হাতে আমার পদ্যের খাতা।... বাবা খুব স্নেহের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘মা! এ খাতায় কার রচনা?... ভয়ে কাঁদ-কাঁদ হইয়া বলিলাম, ‘আমার রচনা বাবা!’ বাবা বড় আনন্দিত হইয়া আমাকে বুকে টানিয়া লইয়া খুব আদর করিলেন।”— মানকুমারী বসুর ‘আমার অতীত জীবন’। তাঁর সার্ধশতজন্মবর্ষে তথ্যসূত্র-এর (সম্পা: সুব্রত রায়চৌধুরী) বিশেষ সংখ্যায় অগ্রন্থিত রচনা-র সঙ্গে গ্রন্থপঞ্জি, পত্রাবলি, একগুচ্ছ প্রবন্ধ।
বাংলার চিরায়ত সাহিত্য বিশেষ করে চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বা মঙ্গলকাব্য নিয়ে এ কালে যে ভাবে গল্প-উপন্যাস-কবিতা-নাটক লেখা হয়েছে, যে ভাবে আধুনিক লেখকেরা নির্মাণ করে চলেছেন নতুন শিল্পরূপ, তা নিয়ে আলোচনা প্রভাতকুমার ভট্টাচার্যের প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক রূপান্তর-এ (বাকপ্রতিমা, ৩০০.০০)। |
|
|
|
|
|