আপনার সাহায্যে...
ক্যানসারকে হারিয়েও মা হওয়া যায়
প্রথম দৃশ্য: জুন, ২০০৯ ধরা পড়ল রক্তের ক্যানসার মাল্টিপল মায়লোমা
দ্বিতীয় দৃশ্য: এপ্রিল ২০১০ স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করে ক্যানসার বিদায়
তৃতীয় দৃশ্য: অক্টোবর ২০১২ গাঁটছড়া বাঁধলেন ফিয়াঁসের সঙ্গে


না, কোনও সিনেমার স্ক্রিপ্ট নয়। ইন্দো-কানাডিয়ান অভিনেত্রী বছর চল্লিশের লিজা রানি রে’র জীবনের এটাই বাস্তব ঘটনা। তবে এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ রকম তো আকছার ঘটছে।
এক কথায় বলা যায়, সব শেষ নয়, বরং আবার নতুন করে শুরু করা। এবং সেটা ক্যানসারের পর। ফিরে পাবেন স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনও। বেশ কিছু ক্যানসারের চিকিৎসায় শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটায় হারিয়ে যেতে পারে সহবাসের স্বাভাবিক ইচ্ছে। রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপির ধাক্কাও শরীরে প্রভাব ফেলে। তবে সে সব পেছনে ফেলে ফিরে আসা যাবে। সৌজন্যে আধুনিক চিকিৎসা। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ফিরিয়ে দেবে স্বাভাবিক যৌনজীবন। পূর্ণতা পাবে নারীশরীর। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সুতরাং কম বয়সে ক্যানসার হলে নতুন করে শুরু করার কথা ভাবতেই পারেন।
শুধু তাই নয়, ক্যানসারের পর প্রেগন্যান্সিও সম্ভব। জানালেন সুপ্রজনন বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম খাস্তগীর। আমেরিকান অভিনেত্রী ক্রিশ্চিনা অ্যাপেলগেটের কথাই ধরা যাক। ২০০৮-এ ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়েছিল ক্রিশ্চিনার। ডাবল ম্যাসটেকটমি (দুই দিকের স্তন বাদ দেওয়া)-এর পর সুস্থ হয়ে মেয়ের জন্ম দেন ক্রিশ্চিনা। প্রায় একই ঘটনা হলিউডের সংবাদপাঠিকা গিউলিয়ানা র্যানসিকের ক্ষেত্রেও। ডাবল ম্যাসটেকটমি আর ক্যানসারের ধাক্কা সামলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ইনিও।
শুধু নামী-দামি তারকাদের ক্ষেত্রেই নয়, এ ধরনের চিকিৎসা এখন সাধারণেরও নাগালে। যেমন বৈদ্যবাটির সুলগ্না। বিয়ের পর ওভারিতে টিউমার ধরা পড়েছিল বছর তিরিশের সুলগ্নার। অপারেশন করতে গিয়ে দেখা যায় ক্যানসার দোরগোড়ায়। জীবন বাঁচাতে দু’টি ওভারিই বাদ পড়ে। কিন্তু এখানেই জীবন থমকে গেল না। চিকিৎসার ধকল কাটিয়ে বছর পাঁচেক পর সুলগ্না সন্তানের জন্ম দেন, ডোনার ওভামের সাহায্যে। একটু খোঁজ করলেই আশপাশে অনেককেই পেয়ে যাবেন, যাঁরা ক্যানসারের পরও সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। অনেকেই ব্যাপারটা সম্বন্ধে মুখ খুলতে চান না। কিন্তু পুরোদমে চলছে এ ধরনের বিকল্প চিকিৎসা।
ডা. খাস্তগীর জানাচ্ছেন, ‘‘ক্যানসার নয়, ক্যানসারের চিকিৎসাই প্রেগন্যান্সির ওপর প্রভাব ফেলে। পেটে রেডিয়েশন দিলে ডিম্বাণুর ক্ষতি হয়। সময়ের আগে মেনোপজও হয়ে যেতে পারে।’’ তাই চিকিৎসকরাও বলতে পারেন না, যে কেমো দেওয়ার পর সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে কি না। সুতরাং কমবয়সিদের ক্যানসার ধরা পড়লেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছকে রাখা জরুরি। এ সব ক্ষেত্রে ওভারির টিসু সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। সেখান থেকেই সময়মতো বের করে নেওয়া যাবে প্রয়োজনীয় ডিম্বাণু। ইউটেরাস অক্ষত থাকলে সন্তান ধারণ করা যাবে অনায়াসেই। তবে ক্যানসার ইউটেরাসে হলে সে ক্ষেত্রে সাহায্য নিতে হবে সারোগেসির।
ডা. গৌতম খাস্তগীর যোগাযোগ-৯৮৩০৬৬৬৬০৬
মুশকিল হল, ক্যানসার শুনলে বেশির ভাগ মানুষই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-ওভারি সংরক্ষণ তখন শিকেয় ওঠে। পরবর্তীতে বাচ্চা চাইলে তখন ডোনার ওভামই একমাত্র রাস্তা। বেশ কয়েক বছর আগে লিম্ফোমা ধরা পড়েছিল দক্ষিণ কলকাতার স্কুলছাত্রী তানিয়ার। রেডিয়েশনে ডিম্বাশয়ের ক্ষতি হতে পারে বুঝে ওভারি দু’টো পেটের ভেতরই অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তানিয়া যখন মা হতে চাইল, দেখা গেল ওভারি দু’টি বহাল তবিয়তে রয়েছে। কিন্তু ফেলোপিয়ান টিউব থেকে ওভারির দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় প্রেগন্যান্সি আসছে না। হাল ছাড়েনি তানিয়া। আইভিএফ-এর সাহায্যে মা হয় সে, নিজের ডিম্বাণু ব্যবহার করেই।
ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা এক। কেমোথেরাপি থেকে ক্ষতি হতে পারে টেস্টিসেরও। সে ক্ষেত্রেও টেস্টিসের টিসু আগেভাগে সংরক্ষণ করে রাখলে পরবর্তীতে তার থেকে সুবিধেমতো শুক্রাণু বের করে নেওয়া যেতে পারে। মাস দুয়েক আগে লিউকোমিয়া ধরা পড়ছে বহুজাতিক সংস্থার চাকুরে বছর আঠাশের ইন্দ্রনীলের। টাটা মেমোরিয়ালে চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে ইন্দ্রনীলের শরীর থেকে কিছু শুক্রাণু বের করে স্পার্ম ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখা হয়েছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে।

নয়া পলিসি
ভবিষ্যতে সন্তান লাভ সুনিশ্চিত করতেই এই পলিসি। যার সাহায্যে আজকাল ক্যানসার পেরিয়েও সন্তানের মুখ দেখছেন দম্পতিরা। দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। পলিসির মতোই নিজের ওভারি বা টেস্টিসের অংশ গচ্ছিত রাখতে হবে। তাই কম বয়সে লিউকোমিয়া, লিম্ফোমা বা জননাঙ্গের রকমারি ক্যানসার ধরা পড়লে আরও একটু এগিয়ে ভাবার পরামর্শ দিলেন ডা. খাস্তগীর।

অপেক্ষা করুন পাঁচ বছর
প্রেগন্যান্সি এলে আবার ক্যানসার ঘুরে আসবে এমন কোনও কথা নেই। তবে ব্রেস্ট ক্যানসারের মতো কিছু বিশেষ ধরনের ক্যানসার, যেখানে হরমোনের বড় ভূমিকা রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে ক্যানসারের ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডা. খাস্তগীরের মতামত, ‘‘ক্যানসারের অন্তত পাঁচ বছর পর প্রেগন্যান্সি প্ল্যানিং করুন। এর মধ্যেই বোঝা যাবে ক্যানসার ফিরে আসতে পারে কি না। কিন্তু প্রেগনেন্সি অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে বা ফিরে এলে মুশকিল। কেমোথেরাপি থেকে ক্ষতি হতে পারে গর্ভস্থ ভ্রূণেরও। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ছেড়ে দিন আপনার চিকিৎসকের ওপর।’’

সুস্থ বাচ্চা
শরীরে বাসা বেঁধেছিল ক্যানসার। সেই শরীরেই ভ্রূণের বড় হওয়া! ভাবলেই দুশ্চিন্তা বাড়ে। ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যাওয়ার পর কনসিভ করলে বাচ্চার কোনও রকম ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বাচ্চা ব্রেস্ট ফিডিং-ও করতে পারবে স্বাভাবিক ভাবেই। তবে ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে ম্যাসটেকটমি করা হলে ব্রেস্ট ফিডিং-এর সুযোগ থাকবে না। কিন্তু সম্পূর্ণ স্তন বাদ না দিয়ে কোনও ল্যাম্প বা ডেলা স্তন থেকে কেটে বাদ দেওয়া হলে অনায়াসেই বাচ্চা ব্রেস্ট ফিডিং করতে পারবে।

ক্যানসারের পর
মেয়েদের ক্ষেত্রে এফএসএইচ (ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন) এবং এএমএইচ (অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন) টেস্ট করলে বোঝা যাবে শরীরে ওভাম তৈরি হচ্ছে কি না। ছেলেদের জন্য করতে হবে সিমেন অ্যানালিসিস টেস্ট এবং এফএসএইচ (ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন)। এই দুই পরীক্ষার ফলই জানাবে শরীরে সন্তান উৎপাদনের উপযুক্ত শুক্রাণু তৈরি হচ্ছে কি না। তবে হবু মায়ের বয়স বেশি হলে কিছু সমস্যা হতে পারে। মায়ের ডায়বেটিস ও রক্তচাপ বাড়তে পারে। প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি হয়ে বাচ্চার ওজন কম হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসায় এ সবেরই মোকাবিলার ব্যবস্থা রয়েছে।

ক্যানসারের পর সন্তান? মনে রাখুন
• ক্যানসার ধরা পড়লে মেয়েদের ক্ষেত্রে ওভারির অংশ হিমায়িত করে রাখতে হবে।
• ওভারির অংশ সংরক্ষণ না করা গেলে নিতে হবে ডোনার ওভামের সাহায্য।
• আইভিএফ-এর সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে শরীরের বাইরে ভ্রূণ তৈরি করে তা ইউটেরাসে রোপণ করা যেতে পারে।
• ক্যানসারে ইউটেরাস বাদ গেলে নিতে পারেন সারোগেট মাদারের সাহায্য।
• ছেলেদের ক্ষেত্রে হিমায়িত করে রাখতে হবে টেস্টিসের অংশ।
• স্পার্ম ব্যাঙ্কেও শুক্রাণু গচ্ছিত রাখতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.