|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
শিল্পীর ঝোঁক চেতনা ও সৌন্দর্যের অলিখিত মুক্তিতে |
শিশুর সরলতার মধ্যেও প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল ‘সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টস’-এর বার্ষিক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ‘সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টস’ দলের ৫৩তম বার্ষিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল। ২১ জন সদস্য-শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে চার জন ভাস্কর। সাংগঠনিক সমস্যা বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক তাঁরা প্রদর্শনীর সঠিক ‘ডকুমেন্টেশন’ বা তথ্য পঞ্জিকরণ করে উঠতে পারেন না। প্রদর্শনী দেখার ক্ষেত্রে এটা একটা সমস্যা সৃষ্টি করে। সাদা কাগজে একটা চিত্রসূচি বা কয়েকটি ছবি সংবলিত একটি সিডি তৈরি করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তা সত্ত্বেও এ বারের প্রদর্শনীতে কিছু অভিনবত্ব এসেছে। অনেকেই তাঁদের কাজ নতুন ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।
|
শিল্পী: অতীন বসাক |
রূপায়ণে দক্ষতার সঙ্গে নিমগ্ন ধ্যান মিশেছে প্রায় সকলের কাজেই। চারটি প্রজন্মের শিল্পী রয়েছেন এই সম্মিলিত প্রদর্শনীতে। ১৯৬০-এর দশক থেকে একবিংশ শতক পর্যন্ত বিবর্তনের ধারাবাহিকতা অনুভব করা যায়।
ভাস্করদের মধ্যে নিরঞ্জন প্রধানের দু’টি কাজে দু’রকমের অভিব্যক্তি। আট হাত বিশিষ্ট মহিষাসুরমর্দিনীতে পুরাণকল্পের ধ্রুপদী রূপ। মেঘের কোলে উড়ে চলা বলাকাদের নিয়ে করা নিসর্গমূলক ভাস্কর্যটিতে শিল্পীর রোমান্টিক ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। মানিক তালুকদার ও আদিত্য বসাক যুগ্মভাবে করেছেন স্থাপত্যের জ্যামিতিকতা নিয়ে দু’টি নতুন আঙ্গিকের ভাস্কর্য। বিমল কুণ্ডু চামড়ার সঙ্গে মাটি কাঠ ইত্যাদি মাধ্যম মিলিয়ে তিনটি ভাস্কর্য করেছেন। সুনীলকুমার দাসও তাঁর পরিচিত আঙ্গিক থেকে সরে এসেছেন। কাঠ ও ধাতু দিয়ে গড়া তিনটি জ্যামিতিক উপস্থাপনারই শিরোনাম ‘সময়’।
চিত্রকলায় ১৯৬০-এর দশকের শিল্পীদের মধ্যে বি আর পানেসর সবচেয়ে প্রবীণ। প্রদর্শনীতে রয়েছে তাঁর ‘এনভায়রনমেন্ট’ সিরিজের একটি বিমূর্তায়িত নিসর্গ। অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রয়েছে তিনটি ছাপচিত্রের একটি অয়েল প্যাস্টেলে তাঁর নিজস্ব ঘরানার কাজ। দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তন্ত্রের আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক জ্যামিতিক বিমূর্ততার চারটি ছবিরই নান্দনিক মগ্নতা অতুলনীয়। সনৎ কর একেবারে নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। সম্মিলিত ভাবে দেখিয়েছেন ১৮টি ড্রয়িং। মানুষ, পশুপাখি ইত্যাদির কিমাকার রূপায়ণে গড়ে তুলেছেন কল্পরূপাত্মক পরিমণ্ডল। গণেশ হালুই-র বিমূর্তায়িত নিসর্গগুলির নিমগ্ন প্রজ্ঞা এখনও অমলিন। লালুপ্রসাদ সাউ-এর রয়েছে পূর্ববর্তী ধারার বিমূর্ত ছাপচিত্র। বিমূর্তের ভিতর দিয়ে প্রতিবাদী চেতনা উদ্ভাসিত করেছেন সুনীল দাস। অ্যাক্রিলিকের পাতকে পুড়িয়ে এই সময়ের ক্ষতকে নিষ্কাশিত করেছেন।
আদিত্য বসাক দু’টি ছবিও করেছেন মনোজ মিত্রের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে। মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছেন দু’টি বাইসনসদৃশ প্রাণী। তাদের ছুটন্ত ভঙ্গিতে হিংসা সমাকীর্ণ এই সময়ের অস্থিরতা পরিস্ফুট হয়েছে। মনোজ দত্তকেও বলা যেতে পারে নব্য-ভারতীয় ধারার একজন উত্তরসাধক। চারটি টেম্পারায় আলোকিত জীবনের আলেখ্য এঁকেছেন তিনি। জলরঙের বিদগ্ধ শিল্পী প্রদীপ মৈত্র। ‘রিজেক্টেড’ শিরোনামে দু’টি ছবির একটিতে পরিত্যক্ত লণ্ঠন এঁকেছেন। আর একটিতে একজোড়া জুতো। অত্যন্ত মন্ময় তাঁর উপস্থাপনা।
অতীন বসাক ‘অ্যাংরি হিরো’ শিরোনামে টেম্পারায় দু’টি ছবি এঁকেছেন। দু’টিরই বিষয় বালকের মুখ। স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে মিলিয়েছেন।
পার্থ দাশগুপ্তের চারটি ড্রয়িং-এর শিরোনাম ‘চেজ’। কাগজের উপর কালিতে আঁকা। একটি পতঙ্গ আর একটি পতঙ্গকে হত্যা করতে উদ্যত। এই হল ছবিগুলির বিষয়। সহজ ভাষায় গভীর কথা বলার চেষ্টা করেছেন। বলা যায় তাঁর সাম্প্রতিক কাজের তুলনায় এই রচনাগুলি একটু অন্য রকম। অতনু ভট্টাচার্য বড় ক্যানভাসে সাদা কালো ও ধূসরে এঁকেছেন বিমূর্ত রচনা। শিরোনাম ‘হোমেজ’। পরিব্যাপ্ত অন্ধকারের ভিতর থেকে উদ্ভাসিত হচ্ছে আলো। কিশোর চক্রবর্তীও আলোকচিত্র মাধ্যমে কাজ করেছেন। ৩০টি ছোট ফ্রেমের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন রচনাটি। শিরোনাম ‘...অ্যান্ড দ্য স্টোরি’। পরীক্ষামূলক রচনা, যদিও কোনও গভীর বোধ সঞ্চারিত করে না। প্রদর্শনীটি সোসাইটির সদ্য-প্রয়াত শিল্পী সাধন চক্রবর্তীর স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত। |
|
|
|
|
|