তিস্তা চুক্তির জট কাটার লক্ষণ নেই। স্থলসীমান্ত চুক্তিও বিশ বাঁও জলে। এই ‘হতাশা’র বাতাবরণেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যাতে বরফশীতল না হয়ে যায়, সে জন্য সচেষ্ট বিদেশ মন্ত্রক। আগামী ২৮ তারিখ ঢাকা সফরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। সেই সফরে দু’দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি সই হতে চলেছে। তার আগে আজ এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটিতে সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই প্রত্যর্পণ চুক্তির পাশাপাশি শিন্দের ঢাকা সফরে দু’দেশের মধ্যে ভিসা আইন শিথিল করা নিয়ে চুক্তিও সই হওয়ার কথা। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, চুক্তিগুলি সই হলে বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে।
আসন্ন বাজেট অধিবেশনে দু’দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি যাতে পাশ করানো যায়, সে জন্যও তৎপর হয়েছে কেন্দ্র। এই আন্তর্জাতিক চুক্তিটি বাংলাদেশের সঙ্গে রূপায়িত করতে সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন।
আজ মন্ত্রিসভায় এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সরকার চাইছে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য গড়ে তুলতে। ইতিমধ্যেই বিজেপি-সহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্র আশাবাদী, এ বার না হলেও আগামী অধিবেশনে বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে।
বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তিস্তা চুক্তি নিয়ে হাসিনা সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। ভারতের জন্য উদারহস্তে কূটনৈতিক উপঢৌকন সাজিয়ে চলেছেন হাসিনা অথচ বিনিময়ে নয়াদিল্লি হাতও উপুড় করছে না বিরোধী দলগুলি এমন প্রচারই উচ্চগ্রামে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লড়তে হচ্ছে এই প্রচারের সঙ্গেও। তিস্তা চুক্তি আটকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে। জল-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে তিস্তার জলপ্রবাহ নিয়ে একটি সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। প্রায় দেড় বছর হতে চলল, সেই রিপোর্টের কাজ এখনও শেষ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের সেচ ও জলপথমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আজ জানিয়েছেন, “কল্যাণবাবুর কাজ এখনও শেষ হয়নি। হলেই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসব।”
এ কথা স্পষ্ট যে তিস্তা নিয়ে জটিলতা কাটার কোনও আশু সম্ভাবনা নেই। প্রশ্ন হল, এই বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের কি এমন কিছু লাভ হবে, যা তিস্তা অথবা সীমান্ত চুক্তির বিলম্বকে আড়াল করতে পারে? কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অবশ্যই নয়। কিন্তু বন্দি প্রত্যর্পণের বিষয়টি যে কেবলমাত্র ভারতেরই অভীষ্ট ছিল এমন নয়। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশও একটি চাহিদার তালিকা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল। তাতে শেখ মুজিবের দুই হত্যাকারীকে ধরে দেওয়ার কথা রয়েছে, যারা ভারতের লুকিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ আওয়ামি লিগের।
এই চুক্তি হলে তাদের ধরে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে সাউথ ব্লকের উপর চাপ তৈরি করা যাবে বলেই মনে করছে ঢাকা। তা ছাড়া সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন কিছু অপরাধীকেও বাংলাদেশ ফেরত চাইছে, যারা ভারতের বিভিন্ন জেলে রয়েছে। নির্বাচনের আগে মুজিব হত্যাকারীদের হাতে পাওয়া গেলে ঘরোয়া রাজনীতিতে বাড়তি সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন আওয়ামি লিগ নেতৃত্ব।
গত মাসের ৫ তারিখ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগিরের সঙ্গে শিন্দের শীর্ষ বৈঠকেই বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে চুক্তির বিষয়টি স্থির হয়। আলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নেও তখন ইতিবাচক সাড়া দেয় ঢাকা। আলমগির ফিরে গিয়ে ঢাকায় ঘোষণা করেছেন, শিন্দের আসন্ন সফরেই দু’দেশ বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে সই করবে।
মহিউদ্দিনের কথায়, চেটিয়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছে। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। এ ব্যাপারে আইনি জটিলতা কেটে গেলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্য দিকে ভারতও কথা দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।
|
২৬/১১ হানায় ৩৫ বছর জেল হেডলিকে
সংবাদসংস্থা • শিকাগো |
লস্কর জঙ্গি ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দিল মার্কিন আদালত। ২৬/১১-র আগে একাধিক বার মুম্বই গিয়ে আজমল কসাবদের হামলার সম্ভাব্য জায়গাগুলি চষে গিয়েছিল সে। সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক জানান, মার্কিন কর্তৃপক্ষ হেডলির সর্বোচ্চ ৩৫ বছর কারাদণ্ডের যে সুপারিশ করেছিলেন, তা যথেষ্ট নয় বলেই তিনি মনে করেন। বিচারক বলেন, “হেডলি এক জন জঙ্গি। আমি বিশ্বাস করি না তিনি বদলেছেন।” |