|
|
|
|
বিনোদন |
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ থেকে বাঙালির
মাথা, শিরোধার্য হনুমান টুপি
সুজিষ্ণু মাহাতো • কলকাতা |
|
|
ফের খানিক কনকনে হাওয়া। হারিয়ে যাওয়া শীতের অনুভূতি চলতি সপ্তাহে কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে বাঙালি। আর অমনি ফিরে এসেছে, ব্যালাক্লাভা।
ব্যালাক্লাভা মানে? হঠাৎ শুনলে বোঝার জো নেই। কিন্তু ছবি দেখলেই মালুম হবে অতি পরিচিত বাংলার আদি অকৃত্রিম মাঙ্কি টুপি। উইকিপিডিয়া বলছে, সেই টুপিরই চল শুরু হয় দেড়শো বছর আগে, ক্রিমিয়ার যুদ্ধে। ১৮৬৫-৬৬ সালের সেই যুদ্ধে রুশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে একযোগে লড়েছিল ফ্রান্স, ব্রিটেন, তৎকালীন অটোমান শক্তি আর সার্ডিনিয়া। কৃষ্ণ সাগরের উত্তরে ইউক্রেনীয় উপদ্বীপের প্রবল শীতের হাত থেকে বাঁচাতে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য ব্যালাক্লাভা বুনে পাঠানো হয়েছিল। তবে যুদ্ধের সমসময়ে কোথাও এই নামটির উল্লেখ পাওয়া যায় না। ১৮৮১ সালে রিচার্ড রাটের ‘হিস্ট্রি অফ হ্যান্ডনিটিং’ বইয়ে ব্যালাক্লাভার প্রথম উল্লেখ মেলে।
জন্ম যে মুলুকেই হোক না কেন, বিদেশি ব্যালাক্লাভা বহুদিন থেকেই বাঙালির আদরের বাঁদুরে টুপি। সন্তোষপুরের বাসিন্দা বিমা এজেন্ট বিক্রম সেন জানালেন, “যতই ফ্যাশনেবল টুপি বাজারে আসুক, মাঙ্কি টুপির কোনও বিকল্প নেই। মোটরবাইক চালাতে গিয়ে আমি বরাবর এটাই ব্যবহার করে থাকি।” দোকানের কর্মচারীরাও জানাচ্ছেন হাল ফ্যাশনের ‘ফাঙ্কি’ টুপির সঙ্গে সাবেকি মাঙ্কি টুপিও দেদার বিকিয়েছে এ মরসুমে। ফেসবুকে ‘মাঙ্কি ক্যাপ’ বলে আস্ত একটা পেজ রয়েছে। সেখানে আবার অমিতাভ, ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে আপলোড করা হয়েছে লাল মাঙ্কি টুপি পরা স্পাইডারম্যানের ছবি! |
|
‘হনুমান ডট কম’-এ প্রসেনজিৎ |
ভিনদেশি টুপির সঙ্গে বাঙালির এই আত্মীয়তা কী ভাবে? ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত জানাচ্ছেন, “ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই টুপি ভারতে এলেও ক্রমে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। শীত আটকাতে স্কাল ক্যাপে মাথা, কানে ইয়ারফোনের ধাঁচের হাওয়া-রোধক ও গলায় মাফলার নেওয়া যায়। কিন্তু মাঙ্কি টুপি পরলে একসঙ্গে তিনটি কাজই হয়ে যায়।” সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে ছোট্ট মুকুলকে দেখা গিয়েছে এই টুপি পরে। জটায়ু অবশ্য মাঙ্কি টুপি পরেননি। কেদারনাথ-কাণ্ডে জানা যায়, ওঁর ভরসা রাজস্থান থেকে কেনা পশমের লাইনিং দেওয়া কান ঢাকা চামড়ার টুপি। তবে মুক্তি পাওয়ার আগেই গৌরব পাণ্ডের ছবি ‘হনুমান ডট কম’-এ প্রসেনজিতের মাঙ্কি টুপি পরা ছবি দেখা যাচ্ছে। গৌরবের কথায়, “পোশাক মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানের চিহ্ন। মাঙ্কি টুপি সেই বাঙালির প্রতীক, অর্থনৈতিক উদারীকরণের জোয়ার যাকে ছুঁতে পারেনি, যার ইতিহাসে ভাঙন ধরেনি। যে বাঙালি শপিং মলে ব্র্যান্ডেড স্কাল ক্যাপ কিনে পরেন, তাঁর সঙ্গে এই বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানে ফারাক রয়েছে।”
রূপঙ্করের একটি জনপ্রিয় বাংলা গানে একটা লাইন ছিল, ‘‘ও আমার মাঙ্কিটুপি দারুণ শীতে’’। মাঙ্কিটুপি কি প্রেমের মতো এতটাই আপন? রূপঙ্করের উত্তর, “একদম! মাঙ্কিটুপি পরলে চোখগুলো বেরিয়ে থাকে, প্রেমিকাদের প্রেমিককে দেখতে ভালই লাগে।” মাঙ্কি টুপির অন্য ব্যাখ্যা ফেসবুকের পোস্টারে: ‘ডারউইনের বিবর্তনবাদের মান রাখতেই মানুষ আজও মাঙ্কি ক্যাপ পরে!’ |
|
|
|
|
|