ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিতে রায়গঞ্জ ইউনির্ভাসিটি কলেজে আন্দোলন চলছেই। মঙ্গলবার দুপুরে এই দাবিতে ছাত্র পরিষদের একদল সমর্থক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবাশিস বিশ্বাসকে প্রায় দু’ঘণ্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। পরে দেবাশিসবাবু আগামী বৃহস্পতিবার টিচার্স কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গত সোমবার একই দাবিতে কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ দেবাশিসবাবুকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। দেবাশিসবাবু মঙ্গলবার জরুরি ভিত্তিতে টিচার্স কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কি না সে বিষয়ে পড়ুয়াদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টায় টিচার্স কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাউন্সিলের ৪৪ জন সদস্যের মধ্যে সাত জন সদস্যের বেশি বৈঠকে হাজির না হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অভাবে বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরেই আন্দোলনে নামে ছাত্র পরিষদ। ছাত্র পরিষদ নেতা নব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “ছাত্র সংসদ না থাকায় গত এক বছর ধরে কলেজের বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আটকে রয়েছে। পড়ুয়ারা বিভিন্ন সমস্যায় কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে পারছেন না। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামা হবে।” দেবাশিসবাবু বলেন, “কলেজে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ রয়েছে। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে টিচার্স কাউন্সিলের বৈঠক ডাকা হয়েছে।” |
রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষকে ঘেরাও। ছবি: তরুণ দেবনাথ। |
যদিও নির্বাচন করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক অশোক দাস। তিনি বলেন, “সামনেই স্নাতক স্তরের তিনটি বর্ষের পড়ুয়াদের পরীক্ষা রয়েছে। সেইসঙ্গে ফর্ম ফিলাপের প্রক্রিয়াও শুরু হবে। তাই এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের পড়ার ক্ষতি করে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার কোনও মানে হয় না। আমি এখনও পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের টিচার্স কাউন্সিলের বৈঠকের ব্যাপারে কিছু জানি না।” যদিও দেবাশিসবাবু দাবি করেছেন, তিনি কাউন্সিলের সমস্ত সদস্যকেই চিঠি দিয়ে ওই বৈঠকের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
এ দিন অশোকবাবু কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিবৃতি দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিরুদ্ধ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছাড়া কলেজে কেউ সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন না। কেনও অশোকবাবু আইনবিরুদ্ধ আচরণ করলেন তা জানতে চাওয়া হবে।” এ বিষয়ে অশোকবাবু বলেন, “উপাচার্যকে জানিয়েই কলেজ চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। দেবাশিসবাবুর কোনও কথার গুরুত্ব দিচ্ছি না।”
গত বছরের ৫ জানুয়ারি কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে নিগ্রহ করার অভিযোগ ওঠায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীরকুমার দাস কলেজে গিয়ে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ রয়েছে বলে জানিয়ে নির্বাচন করার ওপর মত দেন। ঘটনাচক্রে ওই দিনই দেবাশিসবাবু কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে উপাচার্যের হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দেন। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিতে পড়ুয়া ও ছাত্র পরিষদের আন্দোলনের জেরে কলেজের পরিস্থিতি সরগরম হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কলেজ কর্তপক্ষ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন কি না এখন সেটাই দেখার বিষয়।” |