মালদহের অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের সর্ষের তেলে ভেজাল ধরা পড়ার পরেও সব বোতল বাজেয়াপ্ত না-করে সরবরাহকারী সংস্থাকে ফিরিয়ে দেওয়ায় বিস্মিত রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, যে সমবায় সংস্থার তরফে ভেজাল তেল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সমবায় মন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি। এমনকী, মালদহের আইসিডিএসের জেলা প্রকল্প আধিকারিক প্রত্যর্পণ সিংহ রায়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশাসনিক মহলে তদন্তের দাবি উঠেছে।
মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরে শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপদবাবু বলেন, “এতদিন কেটে গেল। জেলা থেকে ভেজাল তেল বদলে দিতেও বলা হল। অথচ আমাকে কিছু জানানো হয়নি। কেন তা খোঁজ নিচ্ছি। পাশাপাশি, এই ঘটনা নজরে আসার পরে ওই জেলার জেলাশাসক এবং আইসিডিএস দফতর কী পদক্ষেপ করেছে তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠাচ্ছি। যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তাই নেওয়া হবে।” যে সংস্থাটির বিরুদ্ধে ভেজাল তেল সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে, সেটি একটি অনুমোদিত সমবায় সংস্থা। রাজ্য সমবায় দফতরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি বলেন, “বিষয়টি এখনও জানি না। তবে প্রথমেই যে সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে হবে। আমাদের দফতরের কোনও সহায়তা চাইলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, আমিও দফতরের মাধ্যমে সেই সংস্থার খোঁজ নিচ্ছি।” মালদহের ক্ষেত্রে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের না হওয়ার কথা শুনে সমবায় মন্ত্রী বলেন, “আইন অনুযায়ী, যাদের ভেজাল তেল সরবরাহ করা হয়েছে, তাদেরই থানায় অভিযোগ জানাতে হয়। মালদহেও তাই হওয়া উচিত ছিল।”
জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, “গোটা জেলার সব কেন্দ্রতেই ভেজাল তেল ছড়িয়ে গিয়েছে কিনা দেখতে হবে। আমি জেলাশাসকের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেব।” সম্প্রতি মালদহের ইংরেজবাজারের অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রে পাঠানোর সময় দেখা যায় বেশ কিছু বোতলের সর্ষের তেল জমে গিয়েছে। সর্ষের তেলে ভেজাল না-থাকলে তা জমার কথা নয়। সব মিলিয়ে ৫১৩ টি বোতল চিহ্নিত হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, বিধি অনুযায়ী, ওই ভেজাল তেল সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা দরকার। কিন্তু, জেলা প্রকল্প আধিকারিক প্রত্যর্পণবাবু তা করেননি। সোমবার তিনি বলেছেন, “সরবরাহকারী সংস্থা সরকারি সমবায়। তাই ভেজাল তেল বদলে দিতে বলেছি। এফআইআর করা হয়নি।” এদিন অবস্থান বদলে প্রত্যর্পণবাবু বলেন, “২টি ভেজাল তেলের বোতল পরীক্ষা করাতে পাঠিয়েছি।” কিন্তু, যেখানে ৫১৩টি বোতলের তেল জমে গিয়েছিল, সেখানে এফআইআর হলে মাত্র দুটি বোতলের নমুনা দেখালে আদালতে কতটা কী প্রমাণ করা যাবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের অনেকেই।
এদিকে ভেজাল তেল কান্ডে পিছনে জেলা প্রকল্প আধিকারিকের হাত দেখছে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিটিইসির জেলা সভাপতি তথা অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ আইসিডিএস সেবা প্রকল্প ইউনিয়নের জেলা সভাপতি মানব বন্দোপাধ্যায় বলেন, “জেলা প্রকল্প আধিকারিকের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত জরুরি।” |