এক রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল বার্নপুরের ইস্কো স্টিল প্ল্যান্ট হাসপাতালে। মঙ্গলবার এই ঘটনায় মৃতের পরিজনেরা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। হিরাপুর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য এক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাড়ির লোকেরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে মৃত বলে জানান। হাসপাতাল সূত্রে মৃতের নাম জানানো হয়েছে ধীরেন রক্ষিত (৪১)। তিনি ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের কো-অপারেটিভ ক্যান্টিনের কর্মী। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণার পরেই পরিবারের লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই এমন ঘটেছে। হাসপাতাল চত্বরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। চিকিৎসকেরা ভয় পেয়ে সরে যান। বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে হিরাপুর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মৃতের ছেলে শ্রীদাম রক্ষিত অভিযোগ করেন, সোমবার সকালে তাঁর বাবা বুকে ব্যথা অনুভব করেন। ব্যথা বাড়তে থাকায় তাঁরা বার্নপুরের ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রথমে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, বিশেষ কিছু সমস্যা নেই। |
পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ। বার্নপুরে মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র। |
বহির্বিভাগের ইএনটি বিভাগে চিকিৎসা করালেই হবে। সেই মতো ইএনটি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার ডাক্তার আবার জানান, ওই রোগীকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শ্রীদামবাবুর অভিযোগ, “বাবাকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাই। সেখানে ভিড় থাকায় বাবাকে একটু আগে দেখার জন্য ডাক্তারবাবুকে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। শেষে বাবার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে বিশেষ কিছু হয়নি জানিয়ে ডাক্তারবাবু সামান্য কিছু ওষুধ লিখে দেন। বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।”
শ্রীদামবাবু জানান, রাতে তাঁর বাবা সামান্য সুস্থও হয়ে ওঠেন। কিন্তু এ দিন সকালে ফের বুকে ব্যথা শুরু হয়। তড়িঘড়ি অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। শ্রীদামবাবুর অভিযোগ, “আগের দিন বাবার ঠিক মতো চিকিৎসা করেননি ডাক্তারবাবুরা। তাই কার্যত বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।” ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের ডিরেক্টর (মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ) আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মৃতের পরিবারের তরফে আমার কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আমি বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আগেও চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক শ্রমিক সংগঠন ও রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দুর্বব্যহারের অভিযোগও তুলেছেন। আশিসবাবু অবশ্য জানান, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। |