সরকারি হাসপাতালে চালু হওয়া ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান নিয়ে কেউ বিরোধিতা করলে রাজ্য সরকার তা বরদাস্ত করবে না। মঙ্গলবার কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে এমনই বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার দফায় দফায় ৩৫টি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খুলবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমরা এই প্রকল্প সফল করবই।” কিন্তু তাঁর সেই চেষ্টায় বাধ সাধছেন সরকারি ডাক্তারদেরই একাংশ।
ডিসেম্বরে জেলায় (কলকাতার দু’টি বাদে) চারটি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হয়েছে। তার কয়েকটিতে ওষুধ কিনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ, ডাক্তারদের একাংশ ‘জেনেরিক নেম’-এর বদলে ‘ব্র্যান্ড নেম’ লিখছেন। অভিযোগ অসত্য নয়, মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ‘জেনেরিক নেম’ তথা শুধু ওষুধের উপাদানের নাম লেখা প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতেই ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কম দামে ওষুধ পাওয়া যায়। গত ১১ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হয়। তবে সেখানে ক্রেতাদের বড় অংশের অভিযোগ, চিকিৎসকদের একাংশ এখনও ‘ব্র্যান্ড নেম’-ই লিখছেন। সেই প্রেসক্রিপশন দেখে ন্যায্য মূল্যের দোকানের কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বিভ্রান্ত হচ্ছেন রোগীরাও। প্রেসক্রিপশনে লেখা ‘ব্র্যান্ড নেম’-এর ওষুধের সঙ্গে ‘জেনেরিক নেম’-এর মিল খুঁজে না পেয়ে তাঁরা ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে ভরসা পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগী কয়েকজনের কথায়, “ন্যায্য মূল্যের দোকানে প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ পাইনি। বেশি দাম দিয়ে খোলা বাজার থেকে ওষুধ কিনেছি।” বেসরকারি সংগঠন ‘ড্রাগ অ্যাকশন ফোরাম’-এর সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন সরকারি চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “জেনেরিক নাম লিখে চিকিৎসা করার অভ্যাস তৈরিই হয়নি অনেকের। হাসপাতালের আউটডোরে অত্যাবশ্যক ওষুধগুলির জেনেরিক নামের তালিকা ডাক্তারের চোখের সামনে থাকা খুব জরুরি।”
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “বহুবার সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ওষুধের জেনেরিক নেম-ই প্রেসক্রিপশনে লিখতে হবে। চিকিৎসকদের বড় অংশ তা-ই লিখছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হচ্ছে বলে অভিযোগও এসেছে। ফের নির্দেশ পাঠানো হবে। পাশাপাশি, প্রেসক্রিপশনের উপরে নজরদারিও চালানো হবে।” একই অভিজ্ঞতা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে গত ডিসেম্বরেই চালু হওয়া ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে গিয়েও।
অন্য সমস্যা হল মেদিনীপুর এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে চালু হওয়া ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে আবশ্যিক ১৪২টি ওষুধ মিলছে না। সমস্যার কথা মেনেছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল। তিনি বলেন, “ন্যায্য মূল্যের দোকানে যাতে সাধারণ সব ওষুধ থাকে, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার সব্যসাচী দাসের বক্তব্য, “কিছু ওষুধ ন্যায্য মূল্যের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না, তা ঠিক। তবে শীঘ্রই সেগুলি পাওয়া যাবে।”
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ-কর্তার আশ্বাস, “মাস দু’য়েকের মধ্যে সব সমস্যাই কেটে যাবে।” |