নিজের দফতরই মুখ্যমন্ত্রীর কাঠগড়ায়
হাসপাতাল মেয়াদ ফুরোনো ও নিষিদ্ধ ওষুধ দিচ্ছে: মমতা
রাজ্যের কোনও কোনও হাসপাতাল নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। যিনি একই সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। তাঁর অভিযোগ, ওই সব ওষুধ ব্যবহারের ফলে বহু রোগীর প্রাণ যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, মেয়াদ ফুরনো ওষুধ-ইঞ্জেকশনও ব্যবহার করছে কোনও কোনও হাসপাতাল। এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান, ৩০ শয্যার নেফ্রোলজি ইউনিট এবং ৪০ শয্যার অবজার্ভেশন ওয়ার্ডের উদ্বোধন করতে এসে নিজেরই হাতে থাকা একটি দফতরের পরিষেবার দিকে এমন মারাত্মক অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “আমার কাছে সব খবর আছে। আর এ সব চলবে না। মনে রাখবেন, হাসপাতালটা রাজনীতি করার জায়গা নয়।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী কোনও হাসপাতালের নাম না করলেও তাঁর এই মন্তব্যে নানা মহলে বিশেষত হাসপাতালে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আবার অনেকে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী খুব ভুল বলেননি। এই অংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছে করেই এ প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও হাসপাতালের নাম করেননি। রাজ্যের বহু হাসপাতাল-নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে এই ধরনের অনেক অভিযোগ ওঠে। নাম না করেও সেই অভিযোগের প্রসঙ্গটি প্রকাশ্য মঞ্চে তুলে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ সব ব্যাপারে তাঁর নজর আছে।
আগুন লাগার পরে নীচে নামিয়ে আনা হচ্ছে রোগীদের। বৃহস্পতিবার রাতে।
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা এক বার তৎকালীন প্রধান সরকারি দল সিপিএমের দিকে আঙুল তুলে বলেন, টালা ট্যাঙ্কের জলে বিষ মেশানো হচ্ছে। এখন, যখন মমতার নিজের দল ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনি নিজে প্রায় ২০ মাস ধরে সংশ্লিষ্ট দফতরটির দায়িত্বে, তখন তাঁর মুখেই এমন অভিযোগে অনেকে বিস্মিত।
নিজের দফতরের প্রতিই কি আস্থা রাখতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী? স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কী বলব? উনি যখন বলেছেন, তখন নিশ্চয় ওঁর কাছে নির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। এর বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
জেলা ও কলকাতার একাধিক হাসপাতালের কর্তাদের কিন্তু বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাঁদের অনেকের মতে, একেই সাধারণ মানুষ পান থেকে চুন খসলেই ডাক্তার-নার্সদের উপরে চড়াও হচ্ছেন। তার উপরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রকাশ্যে এমন বলেন, তা হলে তো তাঁদের নিরাপত্তা বজায় রাখাটাই দুষ্কর হবে। কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার বলেন, “একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী ভাবে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে এমন অভিযোগ আনতে পারেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না। তা ছাড়া ওঁর কাছে যদি এমন তথ্য থেকে থাকে, তা হলে উনি নিজে সে ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?” অন্য এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “এটা তো সরাসরি ডাক্তার-নার্সদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ! এর পরে আর কাজের মোটিভেশন থাকবে কী করে?” এক মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপারের কথায়, “হাসপাতালের নাম উল্লেখ না করে এমন ভাবে অভিযোগ হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এতে সকলেরই অসম্মান।” উত্তরবঙ্গের এক জেলা হাসপাতাল কর্তার কথায়, “মাঝেমধ্যেই রোগী মৃত্যুকে ঘিরে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এমন অভিযোগ আনায় পরিস্থিতি ঘোরালো হবে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “দিন কয়েক আগেই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক রোগীর মৃত্যুর পরে ভুল ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ডাক্তারকে মারধর করেন রোগীর বাড়ির লোকজন। এর পরে এমন ঘটনা আকছার ঘটবে।”
সহাস্য
এসএসকেএম চত্বরে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের
উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিনের অনুষ্ঠানের শুরু থেকে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার প্রশংসাই করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তন স্বাস্থ্যসচিব তথা বর্তমান মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের ভূয়সী প্রশংসাও করেন মঞ্চ থেকে। কিন্তু বক্তৃতার ফাঁকে আচমকাই বলে ওঠেন, “কোথাও মেয়াদ ফুরোনো ওষুধ বা ইঞ্জেকশন ব্যবহার হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। ওষুধ-ইঞ্জেকশন দেওয়ার আগে ডাক্তার-নার্সদের দেখতে হবে।” মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে এমন ওষুধও রোগীদের দেয় একটি হাসপাতাল। তাঁর প্রশ্ন, “যে ওষুধ দিলে রোগী মারা যাবে, সেই ওষুধ দেওয়া হয় কোন যুক্তিতে?” মঞ্চে বসে থাকা স্বাস্থ্যকর্তাদের দিকে তাকিয়ে তাঁর নির্দেশ, “কোন কোন ওষুধ দেওয়া যাবে, আর কোনগুলো যাবে না, তার তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করুন।” বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব সতীশ তিওয়ারির উদ্দেশে তাঁর নির্দেশ, “যাঁরা ভাল কাজ করছে তাঁদের প্রশংসা করুন। কেউ ষড়যন্ত্র করছে টের পেলে রেকর্ড রাখুন।”

প্রেসক্রিপশন
বুকে ব্যথা নিয়ে কোনও রোগী হাসপাতালে এলে তাঁর চিকিৎসার শুরুটা কী ভাবে হওয়া উচিত, এ দিন তা নিয়ে ডাক্তারদেরই পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী! বললেন, “বুকে ব্যথা নিয়ে কোনও রোগী এলে আগে অ্যালার্জি আর হাঁপানি পরীক্ষা করিয়ে নিন। না হলে হয়তো ওষুধটাই বুমেরাং হয়ে যাবে। এই পিজি হাসপাতালেই এমন হয়েছে।” যা নিয়ে এসএসকেএম-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “বিষয়টা আমি বিশদে জানি না। তাই এ নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
উৎসাহ
তরুণ চিকিৎসকদের গ্রামে যাওয়ার ব্যাপারে এ দিনও উৎসাহিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, এ ব্যাপারে বিশেষ ‘ইনসেনটিভ’ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে সরকার। পাশাপাশি সিনিয়র চিকিৎসকদের সপ্তাহে অন্তত এক দিন গ্রামে গিয়ে রোগী দেখতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
১০০-য় কত
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বছর ফুরনোর আগেই বলতে শুরু করেছিলেন, প্রতিশ্রুতির ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে! তার পর থেকে নিয়ম করে সর্বত্র, এমনকী গত কাল ক্যানিং-এর সভাতেও ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলার কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে বিরোধীদের শত কটাক্ষ গায়েই মাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সেই মমতাই নিজের হাতে থাকা স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বললেন, “আমরা ১০০-য় ১০০ করতে পারিনি।” অবশ্য সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “আমার টিম ভাল কাজ করছে। তবে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই।”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.