এলাকার মহিলাদের টানা চার মাসের আন্দোলন, সঙ্গে সাংসদ এবং শহরের ১৭ জন কাউন্সিলারের সম্মিলিত প্রতিবাদ চিঠির পরে জলপাইগুড়ি শহরের জয়ন্তীপাড়া এলাকার মদের অন শপ দোকানের বিষয়টি সমীক্ষা করে প্রশাসন। মাস তিনেকের সমীক্ষার পরে দোকানটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগামী ৩১ জানুয়ারির পরে মদের দোকানটি আর খোলা যাবে না বলে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা শাসকের দফতর থেকে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে শহরের টাউন স্টেশন লাগোয়া জয়ন্তী পাড়ায় একটি মদের দোকান খোলা হয়। মদ বিক্রির পাশাপাশি বসে বা দাঁড়িয়ে মদ্যপানেরও ব্যবস্থা রাখা হয়। জনবসতি এলাকায় মদের দোকান খোলায় এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে বলে দাবি করে দোকান খোলার দিন থেকেই আন্দোলন শুরু করেন এলাকার মহিলারা। গঠিত হয় নাগরিক কমিটিও। জয়ন্তীপাড়া সর্বজনীনের ৬০ বছরের দুর্গাপুজোও বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানো হয়। শহর জুড়ে ঘোষণা, মৌনী মিছিল, এলাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদসবই হয়। জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “দোকান খোলার পর থেকেই এলাকার একাংশ বাসিন্দা দফায় দফায় দোকান বন্ধ করার দাবিতে স্মারকলিপি দেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার কাজ চলছিল. তার ভিত্তিতেই আগামী ৩১ জানুয়ারির পরে দোকানটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কেন দোকান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হল? সরকারি বয়ানে জানানো হয়েছে, সাধারণত অন শপের ক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের লাইসেন্স দেওয়া হয়, পরবর্তীতে আপত্তি উঠলে সেটি বাতিল করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে. পাশাপাশি মদের দোকানের কাছাকাছি একটি ক্লাবে শিশু শ্রমিকদের স্কুলও রয়েছে। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে। দোকান খোলার আগেই লাগোয়া হাজার ফুটের মধ্যে কোনও ধর্মীয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখার কথা। সে ক্ষেত্রে লাগোয়া এলাকায় স্কুল থাকলেও কেন দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল উঠেছে সেই প্রশ্নও। প্রশাসন সূত্রের খবর, একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত শিশু শ্রমিকদের স্কুলটির নিজস্ব কোনও ভবন নেই। স্থানীয় একটি ক্লাবের ঘরে প্রতিদিন সকালে কয়েক ঘণ্টা স্কুল চলে। নিজস্ব ভবন বা স্কুলের নাম লেখা কোনও বোর্ড না থাকতেই দোকান খোলার আগের সমীক্ষায় বিষয়টি নজরে আসেনি বলে জানানো হয়েছে। যদিও প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, এর জন্যে কোনও কর্মী বা আধিকারিকের গাফিলতি রয়েছি কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জলপাইগুড়ির সাংসদ মহেন্দ্র রায় বলেন, “ভদ্র পাড়ায় মদের দোকান খোলাই অবক্ষয়। খুলতে হলে বাজার এলাকায় খুলুক। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, সকলকেই চিঠি দিয়েছিলাম।” জয়ন্তীপাড়া এলাকার কাউন্সিলার নারায়ণ সরকার বলেন, “পুরসভার ডান-বাম সব দলের অন্তত ২২ জন কাউন্সিলারের সই করা প্রতিবাদ পত্র জেলা প্রশাসনকে জমা দেওয়া হয়েছিল। সকলেই মদের দোকানটি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন।”
প্রথমে অনুমতি দিয়েও কয়েক মাস পরেই দোকান বন্ধের নির্দেশের প্রেক্ষিতে দোকানের মালিক ধরম পাসোয়ান বলেন, “অনেক টাকা লগ্নি করা হয়েছিল। দোকানকে কেন্দ্র করে কোনও অশান্তিও হয় নি। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে যাবতীয় শর্ত পূরণ করে দোকান খুলেছিলাম, এখন তাদের নির্দেশমতই বন্ধ করতে হবে।” এলাকার নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্যা দীপালি নাগ বলেন, “বারংবার আমরা প্রশসানের কাছে বারবার লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু আমরা এখনও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও উত্তর পাই নি। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি চোখে না দেখছি ততক্ষণ আমাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।” |