আপত্তির পাল্লা ভারী, জট বহাল অভিন্ন প্রবেশিকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তির জন্য অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা (সেট) চালু করা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল। মঙ্গলবার রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা সংসদের বৈঠকের পরেও জট কাটল না।
সেটের ব্যাপারে আগেই আপত্তি জানিয়েছিল যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। এ দিন প্রেসিডেন্সি লিখিত ভাবেও সে-কথা জানিয়ে দেয়। আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এ দিন জানায়, রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয় মানলে তবেই তারা সেটের মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করবে। সরাসরি আপত্তি না-জানালেও গৌড়বঙ্গ, সিদো-কানহু-বিরসা এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য, অনগ্রসর জেলার ছেলেমেয়েরা ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেট চালু হলে সেই ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হতে পারেন বা তাঁদের দূরের জেলায় পড়তে যেতে হতে পারে। তাতে অনেকের পড়াশোনা বন্ধও হতে পারে। রবীন্দ্রভারতী, কল্যাণী-সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ছাত্র ভর্তির জন্য এই পদ্ধতি চালু করতে তাদের সময় লাগবে। শুধু তা-ই নয়, পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব যে-সংস্থাকে দেওয়ার কথা, সেই কলেজ সার্ভিস কমিশনও জানিয়েছে, তড়িঘড়ি সেটের বন্দোবস্ত করা কঠিন।
এ দিনের বৈঠকে উচ্চশিক্ষা সংসদের কর্তাদের কাছে প্রেসিডেন্সির উপাচার্য মালবিকা সরকারের সই করা চিঠি জমা দেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা। তাতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্সির পাঠ্যক্রম, পঠনপাঠনের ধরন আলাদা। তা ছাড়া শুধু রাজ্যের ছেলেমেয়ে নয়, গোটা দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করতে চায় তারা। স্নাতক-স্নাতকোত্তরে সুসংহত (ইন্টিগ্রেটেড) পাঠ্যক্রম চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। প্রেসিডেন্সিতে তাই সেট চালু করা সম্ভব নয়।
গত সপ্তাহে যাদবপুরের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি-র বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, আগামী বছর সেখানে সুসংহত পাঠ্যক্রম চালু হবে। আর এ বছর স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে সেট থেকে অব্যাহতি চাইবেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। এ দিনের বৈঠকে অবশ্য তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছেন, সুসংহত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি স্নাতকোত্তরের অন্য একটি পাঠ্যক্রম চালানো হবে। সেটিতে সেটের মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি হতে পারে। উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তী এ কথা জানান।
ইসি-তে এক রকম সিদ্ধান্তের পরে বৈঠকে অন্য প্রস্তাব দেওয়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই বিস্মিত। সেখানকার শিক্ষক সংগঠন, ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ সেটের বিরুদ্ধে। এ দিনও এক দল ছাত্র বৈঠক চলাকালীন সেটের বিরোধিতা করে স্মারকলিপি দেন উচ্চশিক্ষা সংসদের কর্তাদের কাছে। যাদবপুরের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য সেট সমর্থন করছেন। যদিও তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। এক প্রবীণ শিক্ষক অবশ্য বলেন, “বৈঠকে যে-প্রস্তাবই দেওয়া হোক, সেটা ইসি-তে পাশ করাতে হবে।”
সেট নিয়ে উচ্চশিক্ষা সংসদ যে-খসড়া নীতি তৈরি করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ১৫ জুনের মধ্যে ওই অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হবে। ফল বেরোবে ২৫ জুনের মধ্যে। যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি গোড়া থেকেই বেঁকে বসায় এ বছর আদৌ সেট হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এ দিনের বৈঠকের পরে সেই জটিলতা আরও বাড়ল বলে মত অনেকেরই।
২০১১ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতকোত্তরের ৯৫ শতাংশ আসনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীন কলেজের পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হত। বাকি পাঁচ শতাংশে ভর্তি হতেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। রাজ্য সরকারের প্রস্তাব মেনে ভর্তির ক্ষেত্রে ৯৫:৫-এর জায়গায় গত বছরই ওই অনুপাত ৬০:৪০ করা হয়। এতে ছাত্রছাত্রীদের খুব একটা সমস্যা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেনি। এক বছরের মাথায় সেই পদ্ধতি বদলানোর প্রয়োজন হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্নও তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের অনেকে।
উচ্চশিক্ষা সংসদ অবশ্য এখনই হাল ছাড়তে রাজি নয়। ভাইস চেয়ারম্যান অভিজিৎবাবু বলেন, “নীতিগত ভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয় সেট মেনে নিয়েছে। পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আমরা আলোচনা করে রিপোর্ট দেব রাজ্য সরকারকে। রাজ্য প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে তা চালু করতে পারে।” কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্য সরকার জোর করে এই ব্যবস্থা চাপিয়ে দেবে কি না কিংবা সেটা উচিত হবে কি না, তা নিয়েও শিক্ষাজগতে অনেকে সংশয় রয়েছেন। |