ডুয়ার্স থেকে দিঘা, ভর্তি হোটেল |
২৪-এ ‘সিএল’ নিলেই টানা পাঁচ দিন ছুটি |
টানা পাঁচ-পাঁচটা শীতের দুপুর বলে কথা! কেউ মাছ ধরবেন। কেউ বাড়িতে মৌজ করে খিচুড়ি-ডিম ভাজা খাবেন। কেউ বা বউ-ছেলেমেয়েকে নিয়ে সহকর্মীদের পিকনিকে যাবেন।
আর এ সবের জন্য চাই স্রেফ একটা ‘ক্যাজুয়াল লিভ’! চাকরির বাজারে যা খ্যাত ‘সিএল’ নামে। কাল, বৃহস্পতিবার এই লিভ নিতে পারলেই কেল্লা ফতে! ২৩ থেকে ২৭ জানুয়ারিটানা পাঁচটা দিন কর্মহীন। ফের অফিস সেই ২৮ তারিখ। কী ভাবে? ২৩ তারিখ নেতাজি জন্ম-জয়ন্তী। ২৫ তারিখ নবি দিবস (ফতেহা-দোহাজ-দহম)। ২৬ তারিখ প্রজাতন্ত্র দিবস। আর ২৭ জানুয়ারি তো রবিবার।
অতএব মাঝে পড়ে রইল ২৪ তারিখ। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গপরের পর সরকারি দফতরে অনেক কর্মীই তাই ওই দিন ছুটির দরখাস্ত করেছেন। অনেকেই আবার ঠিক করেছেন, ওই দিন না এসে পরে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে দেবেন। ‘স্যার, ওই দিন ছুটিটা না দিলেই নয়। অনেক আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছি’কর্মীদের আব্দার শুনতে হচ্ছে বিভাগীয় প্রধানদের।
কোচবিহার এবিএন শীল কলেজের ১৫ জন শিক্ষক একযোগে ২৪ তারিখ সিএল নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবনারায়ণ রায়ও রয়েছেন বলে কলেজ সূত্রের খবর। তাঁদের অনেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য মঙ্গলবারই কোচবিহার ছেড়েছেন। দেবনারায়ণবাবুর কথায়, “সামনে টেস্ট বলে এমনিতেই ক্লাসে উপস্থিতি কম। তাই সমস্যা হবে না।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে চিকিৎসকদের প্রায় ২০ শতাংশ সিএলের আবেদন করেছেন। মেদিনীপুর সদর ব্লক অফিসে ছুটি চেয়েছেন ১১ জন কর্মী। ইতিমধ্যেই সিএল নেওয়া বীরভূমের একটি ব্লকের ভূমি সংস্কার আধিকারিকের মন্তব্য, “এ রকম টানা ছুটির সুযোগ কি বারবার আসে?”
পড়ে-পাওয়া এই টানা ছুটির সৌজন্যে ডুয়ার্সের বিভিন্ন রিসর্টে ‘হাউজফুল’। ‘লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কমল ভৌমিক মঙ্গলবার বললেন, “২৩ থেকে ২৭ তারিখ, লাটাগুড়িতে তিলধারণের জায়গাও নেই।” উত্তরবঙ্গের এক বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্ণধার রাজ বসু জানালেন, টানা ছুটি মেলায় ডুয়ার্সের সমস্ত রিসর্ট, বনবাংলোর বুকিং শেষ।
একই কথা জানালেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সিইও সৌমেন পাল বা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী। মন্দারমণিতেও সমস্ত হোটেল-রিসর্ট বুক। তাজপুরের হোটেল সংগঠনের তরফে শান্তনু সাহা, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অসিত চন্দ্ররা জানালেন, বাঙালির ‘মিনি-পুজো’ হচ্ছে জানুয়ারিতে।
বাঁকুড়ারই এক সরকারি কর্মীর অবশ্য মন্তব্য, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও তো ছুটি দেওয়ার বিপক্ষে নন। তাঁরই নির্দেশে এ বছর পুজোয় আমরা টানা ১০ দিন ছুটি পাব। গত বারও ভাল কাজের পুরস্কার হিসেবে পুজোর ছুটি এক দিন বাড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।”
চাইলেই কি ছুটি মঞ্জুর হচ্ছে?
একেবারেই নয়। তাই ছুটি পাওয়া ভাগ্যবানদের প্রতি হিংসায় জ্বলেপুড়ে খাক হয়েও ২৫ তারিখ অফিস করতে হবে হাজার হাজার সরকারি কর্মীকে। হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা জানাচ্ছেন, ছুটির আবেদন জমা পড়লেই যে সব মঞ্জুর হচ্ছে, এমন নয়। চন্দনগরের মহকুমাশাসক বিশ্বনাথ বলেন, “২৫ তারিখ যেমন নবি দিবস, তেমনই জাতীয় ভোটার দিবসও। সে দিন সরকারি কাজ থাকবে অনেক। বিভাগীয় প্রধানদের বলে দিয়েছি, কাউকে ছুটি দেওয়া যাবে না।” নবি দিবস হলেও তাই ছুটি পাননি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক সরকারি কর্মী। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসু বলেন, “ভোটার দিবস নিয়ে আমাদের বিভিন্ন দফতরে ব্যস্ততা চলছে। তাই ২৪ তারিখ খুব জরুরি দরকার না হলে ছুটি দেওয়া হচ্ছে না।” বীরভূমের নলহাটি কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের জন্য নলহাটি ১ ও রামপুরহাট ২ ব্লকের অনেক কর্মী ছুটি চেয়েও পাননি।
তা হলে কী দাঁড়াল? কী আবার? টানা ছুটির মিশ্র প্রভাব সরকারি কর্মীদের উপরে! বন্ধে যা প্রায়ই হয়। |