আতঙ্কের ঘেরাটোপ থেকে বের হওয়া মুকুটমণিপুরে এ বার পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ভরা জলাধারের রূপে পর্যটকদের মন ভরে উঠছে। কিন্তু এখানকার পর্যটন ব্যবস্থা রয়ে গিয়েছে সেই আঁধারেই।
মুকুটমণিপুরে এত দিন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও জঙ্গলমহলের অশান্তির আঁচ পড়েছিল এখানকার পর্যটনে। গত দেড় বছরে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। পর্যটকেরাও ফিরে এসেছেন মুকুটমণিপুরে। কিন্তু অন্য রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলির মতো মুকুটমণিপুরের কোনও উন্নয়ন হয়নি। নেই সরকারি পরিকল্পনাও।
এ বার দুর্গাপুজোর পর থেকেই চেনা ভিড় দেখা যায় মুকুটমণিপুরে। জলাধারের পাড়ে হই-হুল্লোড়, সাউন্ড বক্সে গান-বাজনার সঙ্গে জমজমাট চড়ুইভাতির আসর-- এ সবই মনে করিয়ে দিয়েছে হারানো দিন ফিরে এসেছে মুকুটমণিপুরে। তাই খুশি স্থানীয় বাসিন্দা থেকে নৌকা চালক, দোকানদার, হোটেল ব্যবসায়ী-- সকলেই। কিন্তু পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যার জন্য পর্যটকদের নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। মুকুটমণিপুরকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। খাতড়া মহকুমা প্রশাসনের কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব জমা দিয়েছেন তাঁরা। |
কুমারী ও কংসাবতী নদী নিয়ে এই জলাধার। পাশেই খড়ি ডুংরি পাহাড়, পরেশনাথ মন্দির। জলাধারের অন্য পাড়ে বনপুকুরিয়া ডিয়ারপার্ক। শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এই পর্যটনকেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পছন্দের জায়গা। কিন্তু ঘাটতি রয়ে গিয়েছে পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে। পর্যটকরা জানিয়েছেন, জলাধারে নৌকাবিহার আর লাগোয়া বন পুকুরিয়া ডিয়ার পার্কে ঘুরতে যাওয়া বাদে বিনোদনের বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেই। বিশেষত শিশুদের মনোরঞ্জনের কিছু ব্যবস্থা থাকা খুবই দরকার। শুধু কি তাই? নেই পর্যাপ্ত শৌচাগার, ডাস্টবিনও। ফলে যত্রতত্র নোংরা, আবর্জনা জমে থাকছে। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। নৌকায় চড়ার মতো জেটিঘাটও নেই। ফলে নৌকায় চড়তে গিয়ে বিশেষত শিশু ও মহিলাদের জল-কাদা মাড়াতে হচ্ছে।
সম্প্রতি এখানে বেড়াতে আসা বর্ধমানের প্রসন্ন রায়, তমালিকা রায় বলেন, “এত মানুষের ভিড়, অথচ দু’টি মাত্র শৌচাগার। দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।” দুর্গাপুর থেকে আসা সুব্রত দাস, তন্ময় দে-র অভিজ্ঞতা, “এত সুন্দর জায়গা দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে, অথচ জলাধারে জেটিঘাট নেই। বোটিং করার ব্যবস্থাও নেই।” জলাধারের পাড়ে পড়ে থাকা আবর্জনা দেখে অনেক পর্যটক নাক কুঁচকেছেন।
নৌকাচালক মহাদেব সিং সর্দার, জীবন মুদি, সুকেশ সিং পাতর বলেন, “পরিকাঠামোর উন্নয়ন হলে পর্যটকেরা আরও বেশি সংখ্যায় এখানে আসতেন। পর্যটক বাড়লেই আমাদের রোজগারও বাড়বে। সরকারের রাজস্ব বাড়ারও উপায় হত।” স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী সুদীপ সাহুর বক্তব্য, “মুকুটমণিপুর জলাধারে বোর্টিং চালু করা, রোপওয়ে তৈরি করা-সহ বেশ কিছু দাবি আমরা প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। তাহলে এলাকার ভোল বদলে যাবে।” মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত বলেন, “মুকুটমণিপুরকে ঢেলে সাজিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন করার দাবি জানিয়েছি আমরা। এ জন্য পর্যটন দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই আগামী দিনে পর্যটক বাড়বে।” স্থানীয় গোড়াবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের চন্দনা মাহাতো বলেন, “জলাধারের পাড়ে বেশ কয়েকটি ডাস্টবিন তৈরি করা হয়েছে। আরও একটি শৌচাগার তৈরির জন্য পঞ্চায়েত সমিতিকে বলা হয়েছে। আমরাও চাইছি এখানকার সামগ্রিক উন্নয়ন করুক রাজ্য সরকার।” মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “এখানকার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পর্যটন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”
|