পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতেই সভা করতে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। আর মঙ্গলবার সেই সভাতেই দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাক্ষুস করলেন তিনি। মুকুলবাবুর সামনেই মঞ্চ থেকে স্থানীয় বিধায়ক তথা দলের ইন্দাস ব্লক সভাপতি গুরুপদ মেটেকে নামিয়ে দেওয়ার দাবিতে চিৎকার জুড়ে দেন কিছু কর্মী। এই ঘটনায় স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়ে যান দলের জেলা নেতারা। বিরক্ত হয়ে মুকুলবাবু ওই বিক্ষোভকারীদের ‘সিপিএমের এজেন্ট’ বলে উল্লেখ করে চুপ করতে বলেন। |
দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ছবিটা কর্মী-সমর্থকদের সামনে তুলে ধরার জন্যই মঙ্গলবার দুপুরে ইন্দাসের সিনেমাতলা এলাকায় প্রকাশ্য সভা ছিল তৃণমূলের। প্রধান বক্তা ছিলেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তিনি ছাড়াও সভায় ছিলেন রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক অরূপ খাঁ, ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে-সহ জেলার বিধায়কেরা এবং জেলা ও ব্লক স্তরের বহু নেতা। মুকুলবাবু দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক গুরুপদ মেটের নাম উল্লেখ করতেই মঞ্চের সামনে থাকা কিছু কর্মী-সমর্থক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। গুরুপদবাবুকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার দাবিতে তাঁরা চিৎকার শুরু করে দেন। মুকুলবাবুর তা নজর এড়ায়নি। তিনি রেগে গিয়ে বলেন, “যাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, তাঁরা সিপিএমের এজেন্ট। চুপ করুন, বিশৃঙ্খলা করবেন না।”
বিক্ষোভকারীরা গুরুপদবাবুর বিরোধী দলের প্রাক্তন ইন্দাস ব্লক সভাপতি রবিউল হোসেনের অনুগামী বলে এলাকায় পরিচিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে মঞ্চ থেকে রবিউল নেমে এসে হাতজোড় করে তাঁর অনুগামীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটের সঙ্গে রবিউলের গোষ্ঠী-লড়াই তুঙ্গে। দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক বার মারপিট হয়েছে। গত বছর দলের এক সভায় বিধায়ককে হেনস্থাও করা হয়। এমনকী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে রবিউলকে দল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হয়েছিল।
|
মঞ্চে মুকুল রায়। নিশ্চিন্তে ঘুম কর্মীর। |
পরে অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে ফের রবিউলকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। কিছুদিন আগে ১০০ দিন কাজে পুকুর সংস্কার করা নিয়ে ওই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে দলের এই গোষ্ঠীকোন্দল যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে তা আঁচ করে তৎপর হয়ে ওঠেন রাজ্য নেতৃত্ব। এ দিন সভার আগে ইন্দাসের সংহতি হলে যুযুধান দুই গোষ্ঠীর নেতা বিধায়ক গুরুপদবাবু ও রবিউলকে নিয়ে বৈঠক করেন মুকুল রায়। তৃণমূলের এক জেলা নেতার আক্ষেপ, “ইন্দাসে গুরুপদ ও রবিউলের মধ্যে এখন আর কোনও বিরোধ নেই তা বোঝানোর জন্যই এ দিন প্রকাশ্য সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তা আর হল কই!”
মুকুলবাবুর স্বীকারোক্তি, “পরিবার বড় হলে অনেক সময় সদস্যদের মধ্যে একটু বিরোধ হয়। সে সব মিটিয়ে সকলকে নিয়ে চলতে হবে।” এ প্রসঙ্গে বিধায়ক গুরুপদ মেটে ও রবিউল হোসেন অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সভার জন্য জেলার বিভিন্ন রুটের প্রচুর বাস ছাড়াও ট্রাক্টরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা এসেছিলেন। জেলা বাস মালিক সমিতি সূত্রের খবর, ৫০টি বাস সভার জন্য নেওয়া হয়। এর জেরে বিষ্ণুপুর মহকুমার অনেক রুটে যাত্রীরা এ দিন বাস কম থাকায় দুর্ভোগে পড়েন। কিন্তু মুকুলবাবুর সভার মাঝপথেই অনেককেই সভা ছাড়তে দেখা যায়। তাঁদের বক্তব্য, “কত ক্ষণ আর থাকব? শীতের দিন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে বাড়ি ফিরব কী করে?”
|