বিরোধী আসনে বসলেও বামেরা যে রাজ্যের মঙ্গলের জন্য কোনও কাজে বাধা দেবে না ফের সে কথা জানালেন উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক ও প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার মিনাখাঁর মালঞ্চে বামফ্রন্টের সভায় এ কথা জানানোর পাশাপাশি সোমবার ক্যানিংয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ‘তা হলে কি প্রধানমন্ত্রীকে মারব’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উনি (মমতা) কখন যে কি বলছেন তার ঠিক নেই। সব ব্যাপারে পিছনে লাগা ঠিক নয়।” |
উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় গৌতম দেব। মঙ্গলবার নির্মল বসুর তোলা ছবি। |
সামনের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে গৌতমবাবুর বক্তব্য, “২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আপনারা মমতাকে জয়ী করেছেন। আমাদের হাত থেকে ওদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন। একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে বিশেষ কিছু পরিবর্তন না হলেও আপনাদের কাছে আমার আবেদন, আসন্ন পঞ্চায়েতে মমতাকে হারিয়ে তার ছেলেখেলার একটা শিক্ষা দিন, মনে রাখবেন আমরা নিজেদের দোষত্রুটি শুধরে বাম ঐক্য আরও মজবুত করতে সচেষ্ট হয়েছি।” রাজ্যে ক্ষমতার দেড় বছরে তৃণমূলের কার্যকলাপ নিয়ে কটাক্ষ করে গৌতমবাবু বলেন, “মমতা মমতা করলে এক বছর আগেও ট্রেনে-বাসে পিঠে চাপড় মেরে যাঁরা উৎসাহিত করতেন, এখন তাঁদেরই দেখা যাচ্ছে ওই নাম শুনলে মাথায় গাঁট্টা মারতে। মুখ্যমন্ত্রী এতটাই অবান্তর কথা বলছেন যে মাত্র দেড় বছরেই মানুষ বিরক্ত ।” তাঁর আরও বক্তব্য, “নতুন একটা সরকার ক্ষমতায় এলে তারা হৈ হৈ করে কাজ করে। যে জন্য দিন দিন তাদের জন সমর্থন বাড়ে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার উল্টোটা ঘটেছে তৃণমূলের ক্ষেত্রে। রাজ্যপাল বলছেন গুন্ডারাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ও কাজে মিল না পেয়ে দিন দিন মানুষ ওঁদের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিচ্ছেন। অদ্ভূত কৃতিত্ব মমতার।” এ দিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই নেতা অজয় চক্রবর্তী, আরএসপি নেতা বিমান সেনগুপ্ত, মিনাখাঁ জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাস, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ভরত দাস, মৃণাল চক্রবর্তী প্রমুখ।
সরকারের সঙ্গে তাঁরা যে সহযোগিতা করে চলতে চান সে কথা মনে করিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “গত দেড় বছরে আমরা কখনও রেল-বাস অবরোধ করে মমতার সরকারের বিরোধিতা করিনি। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করিনি। অথচ আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন উনি (মমতা) আমাদের যে কোনও কাজে বিরোধিতা করতেন।”
এ দিন রেজ্জার মোল্লার উপরে আক্রমণের নিন্দার পাশাপাশি তাঁর প্রশংসা করেন গৌতম। তাঁর দাবি, বানতলার উন্নতিতে যে ১০-২০ হাজার মানুষের কাজ হয়েছে তার ষোলোআনা কৃতিত্ব রেজ্জাক মোল্লার। বাম আমলে মিনাখাঁয় কলেজ, রাস্তা, সেতু তৈরি হয়েছে বলে দাবি করে গৌতমবাবু বলেন, “এ সবের সুফল কি একা বামপন্থীরা ভোগ করছেন, নাকি সাধারণ মানুষ। এটা বুঝতে হবে উন্নয়ন সকলের জন্যই সুবিধা এনে দেয়। আর এ জন্য যদি কোনও জমির মাঝে কলকারখানা গড়ে ওঠে তা হলে কি তার প্রতিবাদ করতে হবে!”
এ দিন কংগ্রেসেরও তীব্র সমালোচনা করেন গৌতমবাবু। কংগ্রেস ও তৃণমূল ধনীশ্রেণির মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কেন্দ্রে কংগ্রেস হারলে দুঃখ নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে তা হলে দেশটা বিজেপির হাতে চলে যাবে। ওরা এলে দেশের সর্বনাশ করে দেবে। সেটা আমরা কোনওভাবেই করতে দিতে পারি না।” |