বিয়ের আসরে বর খুন
নানা অভিযোগের আঘাত, বিপর্যস্ত সদ্য-বিধবা
‘চাপের মুখে’ মানসিক ভাবে ‘বিধ্বস্ত’ হালিশহরের সেই তরুণী এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের। তরুণীর দিদি বলেন, “সকলে মিলে আমার বোনকে দোষারোপ করছে। এই চাপ নিতে না পেরে ও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা কোনও মতে ওকে সামলাচ্ছি।”
কিন্তু কেন ‘দোষারোপ’? কারাই বা ‘দোষ’ দিচ্ছে সদ্য স্বামী-হারা তরুণীকে?
রবিবার রাতে হালিশহরের নবনগরে বিয়ের আসরেই ওই তরুণীর স্বামী শৌভিক দে খুন হন। বিয়ের পিঁড়িতে মাথায় টোপর পরা, গায়ে চেলি জড়ানো শৌভিককে খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করে রাজীব বসু নামে এক যুবক। অতিথি-অভ্যাগতেরাই আততায়ীকে পিটিয়ে খুন করেন বিয়ে বাড়ির ভিতরেই।
রাজীবের বাবা স্বপন বসুর বয়ানে উঠে এসেছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁর দাবি, “আমার ছেলের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ওই মেয়েটি। ২০১১ সালের ২১ বা ২৯ নভেম্বর ওর সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ের ঠিক হয়েছিল। বিয়ের কেনাকাটাও হয়ে গিয়েছিল। তারপরে মেয়েটি হঠাৎ বিয়ে ভেঙে দিল। আমার ছেলে খুব চাপা স্বভাবের। কিছু দিন অপেক্ষা করে গত বছর মে মাসে বিয়ে ভাঙার কারণ জানতে চায়। তখন ওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে ভয় দেখানো হল। এ সবের কি কোনও বিচার নেই?” ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “ভয়ঙ্কর মানসিক অবসাদের পরিণতিতেই এই খুন ও তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণপ্রহার হয়েছে বলে আমাদের অনুমান। ভিডিও টেপ হাতে এলে তদন্তে অনেকটাই সুবিধা হবে।”
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বছর আড়াই আগে রাজীবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল বছর কুড়ির ওই তরুণীর। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, কাঁচরাপাড়ায় একটি নামী বস্ত্রবিপণীর মালিক বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন রাজীব। পরে ওই তরুণী ও তাঁর পরিবার জানতে পারেন, ওই দোকানের কর্মচারী রাজীব। এরপরেই সম্পর্কে চিড় ধরে। তরুণীর পরিবার অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, ওই যুবক উত্যক্ত করত মেয়েকে। গত বছর তা নিয়ে পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছিল। সেই আক্রোশেই শৌভিককে খুনের ছক কষে রাজীব।
মেয়ের বাড়ির যুক্তি মানতে নারাজ রাজীবের পরিবার। তাঁর পিসতুতো দাদা বিলু দাসের অভিযোগ, “টিভিতে দেখেছি, আমার ভাইয়ের গলায় ভিডিও ক্যামেরার ফ্ল্যাশের তার জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে মারা হচ্ছে। শৌভিককে ইচ্ছাকৃত ভাবে খুন করা হয়ে থাকলে রাজীবের ক্ষেত্রেও তো তা-ই ঘটেছে।” বিলুবাবুর আরও দাবি, “দু’টো তাজা প্রাণ চলে গেল কার দোষে? আমরা এর বিচার চাই।”
ঘটনার দিন রাজীব ওয়ান শটার থেকে শৌভিকের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল। মাফলারে মুখ ঢাকা থাকলেও তাকে চিনে ফেলে বিয়ের পিঁড়িতে বসেই রাজীবের নাম ধরে চিৎকার করে ওঠেন ওই তরুণী। রাজীবের সঙ্গে ‘পুরনো ঘনিষ্ঠতা’র প্রমাণ হিসাবে বিলুবাবুর আরও দাবি, “মেয়েটা রাজীবকে চিনিয়ে দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু রাজীবকে ধরে সকলে যখন পেটাচ্ছে, তখন ও-ই মারধর করতে বারণ করেছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।” এই বক্তব্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে শৌভিকের বাবা-মা’য়ের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে বলে দাবি বিলুবাবুর। তাঁর বক্তব্য, “আমরা পরস্পরকে সমবেদনা জানিয়েছি। যৌথ ভাবে ওই মেয়েটি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানানো নিয়ে কথা হয়েছে।”
শৌভিকের পরিবারও মেয়েটির প্রতি বিরূপ কেন? বিলুবাবুর দাবি, “রাজীবের সঙ্গে সম্পর্কের কথা গোপন রেখে কেন এই বিয়ের সম্বন্ধ হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ওঁরা।” বিষয়টি নিয়ে এখনই তাঁরা ভাবনা-চিন্তা বা আলোচনা করার অবস্থায় কেউ নেই বলে জানিয়েছেন শৌভিকের আত্মীয়েরা। মা সন্ধ্যাদেবী সারা ক্ষণই ছেলের ছবি আঁকড়ে কাঁদছেন। বাবা বাসুদেববাবু বলেন, “কথা বলার অবস্থায় নেই আমরা। এ সময়ে অন্য কিছুই ভাবতে পারছি না।”
রাজীব ও শৌভিকের পরিবারের এই মনোভাব অজানা নয় তরুণীর কাছে। তাঁর দিদির অভিযোগ, শৌভিকের বাড়ি থেকে টেলিফোন করে বোনকে মানসিক ভাবে চাপ দেওয়া হয়েছে। তরুণীর দিদির প্রশ্ন, “চারপাশে এত প্ররোচনায় আরও এক জনের ক্ষতি হয়ে গেলে কি কারও খুব লাভ হবে?” টেলিফোনে এমন চাপসৃষ্টির অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি শৌভিকের বাড়ির লোকজন।
গোটা ঘটনায় পুলিশ দ্রুত কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছে না। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা বলেন, “যাকে গুলি করা হল এবং যে গুলি চালাল দু’জনেই মারা গিয়েছে। পরিবারগুলি সংবেদনশীল অবস্থায় আছে। এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সঠিক তথ্য যতটা মিলবে, তার থেকে তদন্তে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.