আজ সিআরএ-র নির্বাচন
পেটে না খেয়েই পিঠে কিল, রেফারিরা মাঠছাড়া
যে মাঠে দৌড়য় দু’দলের বাইশ জন, তা চষে বেড়ান তিনি একা।
শুধু কি দৌড়নো? কে কোথায় কাকে খোঁচা মারল, কার হাত ছুঁয়ে গেল বলে, কিচ্ছু নজর এড়ালে চলবে না। কিন্তু তার বদলে যা জুটছে, তাতে ফুটবল মাঠের বহু রেফারিই উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
খেলোয়াড়দের তুলনায় রেফারির পারিশ্রমিক কোনও দিনই মুখে বলার মতো ছিল না। জেলা স্তরের ম্যাচ খেলিয়ে এক জন রেফারি পান বড় জোর ৫০ থেকে ১০০ টাকা। থানা স্তরে আরও কম। ইদানীং আবার নানা কারণে এক শ্রেণির দর্শক, খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা চড়াও হচ্ছেন রেফারিদের উপরে। পেটে খেলে অনেকের পিঠে সয়। এ ক্ষেত্রে ঘটছে উল্টো। যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে জেলার মাঠে। কমছে রেফারির সংখ্যা।
ঘটনাচক্রে আজ, বুধবারই ক্যালকাটা রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিআরএ) পরিচালন সমিতির ভোট। সংস্থার সম্পাদক উদয়ন হালদার বলেন, “রেফারিরা যে ভাতা পান তা অতি সামান্য। কারণ, জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোর টাকা নেই। পরিকাঠামোর সমস্যাও আছে।” প্রাক্তন জাতীয় রেফারি, হুগলির অরুণাভ দাসের হিসেবে, “রেফারি হওয়ার পরীক্ষায় যত জন পাশ করছেন, সেই তুলনায় মাঠে আসছেন অনেক কম। ২০১১ সালে হুগলিতে রেফারি সমস্যায় লিগ সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।”
হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই জেলায় ২০০৫-’০৬ সালেও ২৫-৩০ জন নিয়মিত রেফারি ছিলেন। বর্তমানে সংখ্যাটা দশের বেশি নয়। রেফারির অভাবে ২০১০ সালে জেলা লিগ সাময়িক ভাবে বন্ধও করে দিতে হয়েছিল।” বর্ধমানের জাতীয় রেফারি ও দুর্গাপুরের রেফারি সংস্থার অন্যতম সম্পাদক আশিস দাসের মতেও, “অল্পবয়সী ছেলেরা রেফারিং করতে আসতে চাইছে না।” বীরভূম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বিদ্যাসাগর সাউ বলেন, “বছর তিনেক আগেও রেফারির অভাবে ম্যাচ করতে সমস্যা হচ্ছিল। জেলার নানা প্রান্তে সেমিনার করায় কিছুটা কাজ হচ্ছে।”
বিভিন্ন বড় ক্লাবের কর্তারাও মেনে নিচ্ছেন রেফারিদের আক্রান্ত হওয়ার কথা। বীরভূমের বোলপুর ইয়ং টাউন ক্লাবের সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এখন জেলার মাঠে খুব বেশি খেলা হয় না। ফলে রেফারিদের অনুশীলনের সুযোগ কম থাকে। এর ফলে অনেক সময়ে রেফারিরা কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। গত বছরই জেলা লিগের এক খেলায় রেফারিকে মাঠে মারা হয়েছিল। তার বিচার এখনও হয়নি।” মুর্শিদাবাদের ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের কর্তা ও জেলার অন্যতম রেফারি জগন্ময় চক্রবর্তীর আক্ষেপ, “গত বছরই জেলা লিগের একটি খেলায় মেরে রেফারির দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এ রকম চললে নতুনেরা আসবেন কেন?”
বাঁঁশি হাতে মাঠে নামার জন্য কিন্তু পার হতে হয় অনেকগুলি ধাপ। প্রাক্তন ফিফা রেফারি সাগর সেন ও কালীদাস মুখোপাধ্যায় জানান, জেলা রেফারি সংস্থার পরীক্ষায় পাশ করলে জেলার মাঠে খেলানোর ছাড়পত্র মেলে। শুরুতেই কলকাতার মাঠে রেফারিং করতে চাইলে বসতে হয় সিআরএ-র পরীক্ষায় বসতে হয়। সেই পরীক্ষায় চারটি ধাপ। শেষ ধাপকে বলে ‘ক্লাস ওয়ান’। তাতে পাশ করার পর মেলে রাজ্যস্তরে রেফারিংয়ের সুযোগ। এর পরে জাতীয় রেফারি হওয়ার পরীক্ষা দেওয়া যায়। সেই ধাপে পৌঁছলে তবেই ফিফা রেফারি হওয়ার পরীক্ষা দেওয়া চলে। বর্তমানে হুগলির বিপ্লব পোদ্দারই বাংলার এক মাত্র ফিফা রেফারি।
প্রতিভাবান তরুণেরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলায় রেফারিংয়ের মান পড়ছে বলে মনে করছেন কেউ-কেউ। অনেকে আবার দায়ী করছেন কোন্দল এবং অব্যবস্থাকে। মুর্শিদাবাদ জেলা রেফারি সংস্থার কর্তা উজ্জ্বল দাস যেমন বলেন, “জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার মধ্যে মতভেদের কারণে ভাল রেফারি উঠে আসছে না।” আইএফএ-র গভর্নিং বডি-র প্রাক্তন সদস্য তথা হুগলির বিভিন্ন ক্লাবে যুক্ত সৌমেন ঘোষও অভিযোগ করেন, “জেলা রেফারি সংস্থায় কোন্দল চলছে। রেফারি না থাকায় কয়েক বছর আগে জেলা লিগ বন্ধও করে দিতে হয়েছিল।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের জাতীয় রেফারি ইন্দ্রজিৎ পাণিগ্রাহীর মতে, “রেফারিরা অনেকেই মাঠে নেমে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের জেলায় দেড় দশক ধরে রেফারি সংস্থার সভা হয় না। সেমিনার থেকে পরীক্ষা নেওয়া, সবই করতে হয় ব্যক্তিগত উদ্যোগে।” সিআরএ সম্পাদক উদয়নবাবু অবশ্য মনে করিয়ে দেন, “এর মধ্যেও উত্তরবঙ্গ থেকে কিছু ভাল রেফারি এসেছেন। তার মধ্যে মহিলা রেফারিও আছেন। এখনও রাজ্য থেকে যাঁরা জাতীয় স্তরে খেলা পরিচালনা করেন তাঁদের বেশির ভাগই জেলার ছেলে।”
পরিস্থিতি না পাল্টালে এটুকুও আর কত দিন টিকবে, তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.