নোভাক জকোভিচ—আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই তাঁর পাঁচ ঘণ্টার হাড়ভাঙা পরিশ্রমের বিন্দুমাত্র ছাপ কোর্টে না দেখিয়ে সেমিফাইনালে উঠে পড়লেন। টমাস বার্ডিচের মতো নাছোড় প্রতিপক্ষকে মোটামুটি সহজে হারিয়ে।
মারিয়া শারাপোভা—প্রতি রাউন্ড এগোচ্ছেন রেকর্ড গড়তে-গড়তে। শেষ চারে পা রাখলেন মেলবোর্নে মোনিকা সেলেসের সব মিলিয়ে ১২ গেম খোয়ানোর নজিরের চেয়ে আরও তিনটে কম গেম খুইয়ে। যে দিনই কি না বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন শারাপোভাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মেয়ে ক্রীড়াবিদ আখ্যা দিয়ে রসিকতা করল, ‘যদি কোনও দিন মারিয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটা দেখা যেত!’ উত্তরে মেলবোর্নেই সাংবাদিক সম্মেলনে শারাপোভার পাল্টা ইয়ার্কি, “যে দিন আমি ওই ম্যাগাজিনের আয়ের হিসেব নেব। ভেবে দেখি, সেটা কবে!”
|
হর্ষ: শেষ চারে ওঠার পর বারবিকিউ-এর রান্নাঘরে চিনের লি। |
লি না—এশিয়ার একমাত্র গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়নকে তাঁর নতুন কোচ বেজিংয়ের বুট ক্যাম্প জোর করে যদি না করাতেন, তা হলে তিরিশে পৌঁছেও চিনা মেয়ের সামনে ফের গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের স্বপ্ন তৈরি হত না। রাদওয়ানস্কার এ বছর টানা ১৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার দৌড়ে ইতি টেনে লি না যা স্বীকার করছেন।
লিয়েন্ডার পেজ—শেষ চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অস্ট্রেলীয় ওপেন অতিবাহিত করলেন। ২০১০ মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন, ২০১১ ডাবলস রানার্স, ২০১২-এ ডাবলস চ্যাম্পিয়নের পাশাপাশি মিক্সড ডাবলস রানার্স কলকাতার চিরসবুজ টেনিস তারকা ২০১৩-এ ডাবলসে প্রথম রাউন্ডে ছিটকে পড়ার পর আজ মিক্সড ডাবলসে দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় নিয়েছেন। ভেসনিনাকে নিয়ে স্থানীয় অস্ট্রেলীয় জুড়ির কাছে স্ট্রেট সেটে হেরে। নিটফল: ভারতীয় টেনিসের মহাবিতর্কের মধ্যে মেলবোর্ন পার্কে লি বনাম হেশ মিক্সড ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে হল না।
তিন টেনিস মেগাস্টারের সঙ্গে ভারতের সর্বাধিক ১৩ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী—চারমূর্তিই মঙ্গলবারের অস্ট্রেলীয় ওপেনের মূল চরিত্র।
বিশ্বের ছ’নম্বর চেক তারকাকে ৬-১, ৪-৬, ৬-১, ৬-৪ হারিয়ে গত দু’বারের চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ বলেন, “আগের-আগের রাতে ম্যারাথন যুদ্ধ জিতে ভোর পাঁচটায় ঘুমিয়েছি। সে তুলনায় আজ জিততে অর্ধেকও পরিশ্রম করতে হয়নি। গ্রেট পারফরম্যান্স।” বাস্তবেও ওয়ারিঙ্কা-ম্যাচের ঠিক অর্ধেক সময়, দু’ঘণ্টা ৩১ মিনিটে বার্ডিচকে হারান ‘জোকার’। শেষ চারে তাঁর সামনে শেষ চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে তিনটের সেমিফাইনালে ওঠা ডেভিড ফেরার।
|
বিষাদ: বিদায়ী ম্যাচে ভারতের লি। সঙ্গী ভেসনিনা। |
শারাপোভা নিজের দেশের মাকারোভাকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারান মাত্র চারটে গেম খুইয়ে। ৬-২, ৬-২। “রেকর্ড কী হল-টল, সেটা আমার কাছে কোনও ব্যাপারই নয়। আমি এখানে এসেছি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে। সব সময় পরের পয়েন্টটা জেতাই আমার লক্ষ্য। মাকারোভা আমার বিরুদ্ধে খেলছে বলে জানতাম ও কী ভীষণ উত্তেজিত ছিল। তাই ওকে হারানো খুব সহজ ছিল না।”
শারাপোভার সামনে এ বার লি না। যিনি উইম্বলডন রানার্স অ্যাগনিয়েস্কা রাদওয়ানস্কার চ্যালেঞ্জ ৭-৫, ৬-৩ চুরমার করে স্বীকার করেছেন, “মেলবোর্নে আসার আগে আমার ‘পাগল’ কোচ কার্লোসের (রদ্রিগুয়েজ) বেজিং বুট ক্যাম্প থেকে ভেবেছিলাম পালিয়েই যাব। স্বামীকে ফোন করেছিলাম, এই বয়সে এত খাটুনি পোষাচ্ছে না। টেনিস থেকে অবসর নিতে চাই। ও বলেছিল, আর তিন দিন তো ক্যাম্প আছে। কাটিয়ে দাও। আজ আমি সেমিফাইনালে ওঠাতেও বলল, মেলবোর্নেও তোমার আর তিন দিন।” |
রাদওয়ানস্কাকে গত দু’বছর অস্ট্রেলীয় ওপেনে যে দু’জন হারিয়েছিলেন, তাঁরাই শেষ পর্যন্ত খেতাব জেতেন—কিম ক্লিস্টার্স (২০১১) ও ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। টেনিসমহলের ব্যাখ্যা, লি না-র স্বামী তাঁকে সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন।
ভারতীয়দের মধ্যে লিয়েন্ডার-ভেসনিনা জুটির এবডেন-গাডোসোভার কাছে ৩-৬, ২-৬ হারের দিনে মহেশ-পেত্রোভা জুটি জিমোনজিচ-স্রেবোটনিকের বিপক্ষে ৩-৬, ৬-২, ১০-৫ (১-০) জিতেছে। ফলে বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে মিক্সড ডাবলসের শেষ চারে তিনটি জুটিতেই ভারতীয়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি!
|