ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিরূপ মনোভাব—বিষয়টা গত কয়েক দিনে অনেক বার উঠে এসেছে। খবরের কাগজের পাতায়, না হলে আলোচনায়। বোর্ড আর কয়েক জন ক্রিকেটারের কাছে অবশ্য বিষয়টা মৃত। দু’দেশের সিরিজে ডিআরএস ব্যবহার করা যাবে না—এই স্টান্স থেকে তারা কোনও ভাবেই নড়বে না।
বিষয়টা নিয়ে কিন্তু আলোচনা করার দরকার আছে। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচের প্রস্তুতির মধ্যে ভারত আর ইংল্যান্ডদু’দেশের ক্রিকেটাররাই নিশ্চয়ই ডিআরএস নিয়ে ভাবছে। শুনলাম রাঁচি ম্যাচে নিজের আউট নিয়ে অসন্তোষ দেখানোয় কেভিন পিটারসেনকে সতর্ক করে দিয়েছেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট। ওই আউটটা যে আম্পায়ার ঠিক দেননি, টিভি রিপ্লেতেই সেটা খুব পরিষ্কার।
আম্পায়ার এস রবির পক্ষে বলা যায় যে, গ্যালারির আওয়াজে ওঁর কাজটা প্রচণ্ড কঠিন হয়ে গিয়েছিল। বাকি সব কিছু ঠিক থাকলেও আম্পায়ারিং খুব কঠিন কাজ। মানুষের ভুল তো হতেই পারে। কথাটা কিন্তু এ ক্ষেত্রেও খাটে। এখনকার প্রযুক্তির যুগে, মিডিয়ার যুগে আম্পায়ারের ভুল হলে সেটা গোটা বিশ্বের আর জানতে বাকি থাকছে না। আমাদের সময়ে কি আমরা ভুল সিদ্ধান্তে আউট হতাম না? হতাম। কিন্তু আমাদের সময় কোনও টিভি বা জায়ান্ট স্ক্রিন ছিল না, যাতে সেটা প্রমাণ হয়ে যেত।
এখন তো প্রত্যেকটা আন্তর্জাতিক ম্যাচই কোনও না কোনও টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়। তাই প্লেয়ারের ভুল হোক বা আম্পায়ারের—সেটাও বারবার রিপ্লে-তে উঠে আসে। কোনও মানুষই চায় না তার ভুলত্রুটি ধরা পড়ুক। কিন্তু আমরা যত বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করব, তত বেশি করে লোকের ভুল ধরা পড়বে। বিশেষ করে আম্পায়ারদের। ক্রিকেট খেলাটাই এমন যে, একটা ভুল সিদ্ধান্তই জেতা ম্যাচ হারিয়ে দিতে পারে। আর এ সবের কেন্দ্রে রয়েছে আম্পায়ার।
আমাকে ভুল বুঝবেন না। বেশির ভাগ সময়ই আম্পায়াররা দারুণ কাজ করেন। কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক করে করা সত্যিই মানুষের অসাধ্য। বিশেষ করে যখন মাত্র দু’-তিন সেকেন্ডের লাইভ অ্যাকশন থেকে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আর এই জন্যই আমার মনে হয়, ভারতীয় বোর্ডের উচিত নিজেদের অবস্থান পাল্টানো। একশো শতাংশ ঠিক নয়—এই অজুহাতে নতুন প্রযুক্তি উড়িয়ে দেওয়া খুব বড় বোকামি। নতুন প্রযুক্তি তো কখনওই একশো শতাংশ নির্ভুল হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও উন্নত হবে। আম্পায়ারদের আরও বেশি করে সাহায্য করবে।
আমি এই বোকা-বোকা কথাটাও মানি না যে, ভবিষ্যতে মেশিনগুলোই মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে। এ রকম আষাঢ়ে গল্প ছড়ানো বন্ধ করা উচিত আইসিসি-র। আর ভারতীয় বোর্ডের এটা প্রমাণ করার সময় এসেছে যে, শুধু টাকা উপার্জনের ব্যাপারে নয়, ক্রিকেটকে আরও উন্নত করার ব্যাপারেও তারা নেতৃত্ব দিতে পারে। |