|
|
|
|
‘ক্লিকে’র ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা, দুশ্চিন্তায় কর্মীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জনগ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, এই কেন্দ্রগুলির ভবিষ্যত নিয়েও। কারণ, ১২ বছরেও এর তেমন কোনও উন্নতি তো ঘটেইনি উল্টে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কর্মীদের ন্যুনতম সাম্মানিকও! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ অবশ্য এবার এই কেন্দ্রগুলিকে বাঁচাতে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কর্মীদের দাবি, বাড়ানো হোক সাম্মানিক। এবং তা নিয়মিত দেওয়া হোক। এ ব্যাপারে অবশ্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “সাম্মানিক দেয় রাজ্য সরকার। তাই এটা তাঁদেরই দেখার কথা। আমরা কেন্দ্রগুলির উন্নয়নে ১৪ লক্ষ টাকা দিয়েছি।” জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান বলেন, “ওদের সাম্মানিক সরাসরি পঞ্চায়েত সমিতিতে চলে যায়। পঞ্চায়েত সমিতিগুলিই খরচের হিসাব দেয়। এক্ষেত্রে আমাদেরও কিছু করার নেই।” |
|
প্রচার গাড়ির যাত্রা শুরু। —নিজস্ব চিত্র। |
রাজ্যের যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার ছিল না, সেখানে গ্রন্থাগার চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। রাজ্যে এরকম ৩১৯টি পঞ্চায়েতে এরকম গ্রন্থাগার করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২৮টি পঞ্চায়েতেও এরকম জন গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এই সব গ্রন্থাগার তৈরির সময় জেলা পরিষদগুলিকে ৯ হাজার টাকা দিতে বলা হয়েছিল। তার বাইরে গ্রন্থাগার পিছু বার্ষিক ১৬ হাজার টাকা অনুদান ও তার কর্মীকে মাসিক ৮০০ টাকা হারে বছরে ৯৬০০ টাকা সাম্মানিক ও সাময়িক পত্র পত্রিকা, খবরের কাগজ প্রভৃতির জন্য ৬ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়ার কথাও বলা ছিল। খরচের হিসাব রাখার কথা ছিল পঞ্চায়েত সমিতির এক্সিকিউটিভ অফিসারের। প্রতি কর্মীকে সপ্তাহে ৫দিন ৩ ঘন্টা করে গ্রন্থাগার চালু রাখার নির্দেশ ছিল। এই গ্রন্থাগারে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস ও পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন তথ্যও রাখার কথা ছিল। ২০০০ সাল থেকে এই কেন্দ্র চালু হয়। বছরে একবারই কর্মীদের সাম্মানিক আসে। কিন্তু ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে অনেকেই সাম্মানিক পাননি বলে অভিযোগ। ২০১১-১২ আর্থিক বছরের সাম্মানিকও এখনও মেলেনি। এমনকি পরিকাঠামোরও উন্নয়ন ঘটেনি। কোথাও পঞ্চায়েতের অফিসের মধ্যেই একটি ছোট্ট ঘরে চলছে গ্রন্থাগার। আবার কোথাও বা চলছে ক্লাবে। দাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রন্থাগারের কর্মী সুজাতা চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের গ্রন্থাগারটি চলছে সবুজ সংঘ নামে ক্লাবে। হাজার দুই বই রয়েছে। সদস্য সংখ্যা ১০০ জনের মতো। ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরের সাম্মানিক এখনও মেলেনি। গত বছরের সাম্মানিকও মেলেনি।” ডেবরা ব্লকে রাধামোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রন্থাগার কর্মী মোহিনীমোহন কর বলেন, “হাজার দেড়েক বই থাকলেও সদস্য রয়েছে মাত্র ৮-১০ জন। বসার জায়গা নেই, কে গ্রন্থাগারে আসবেন।” সবংয়ের বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রন্থাগার কর্মী তথা কর্মীদের নিয়ে তৈরি সংগঠনের রাজ্য সভাপতি গোবিন্দ বিজুলি বলেন, “বছরের শেষে একাবের সাম্মানিক দেওয়া হয়। সাম্মানিকও বড্ড কম। বেশিরভাগ সময় পঞ্চায়েতের সাহায্য মেলে না। এভাবে কী কেন্দ্র চলে। বামফ্রন্টের সময় থেকে শুরু করে নতুন সরকারের মন্ত্রীকে পর্যন্ত বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই হয়নি। শুনেছি, সাম্মানিক নাকি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সাম্মানিক না পেলে বুঝব কী করে?” তাঁদের কথায়, এই গ্রন্থাগারগুলির উপর সরকারি উদাসীন না হলে এগুলিও জনপ্রিয় হতে পারত। পঞ্চায়েতের যাবতীয় তথ্য সহজেই মিলত এই কেন্দ্র থেকেই। কিন্তু বর্তমানে কিছু বই ও হাতে গোনা কয়েকজন সদস্য, যাঁরাও আবার অনিয়মিত, তা দিয়েই চলছে কেন্দ্রগুলি। এই কেন্দ্রগুলির ভবিষ্যত কী, এদের কী মর্যাদা দেওয়া হবে, কোন দফতরের অধীনে থাকবে, সে সব নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, গ্রন্থাগার দফতর অর্থ দিলেও এগুলি তার অধীনে নয়। দেখভালের দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। গোবিন্দবাবুর কথায়, “আমাদের কেন্দ্রগুলি যেন অভিভাবকহীন হয়ে ধোঁয়াশা নিয়ে এগোচ্ছে। ভবিষ্যত যে কিছু বুঝতে পারছি না। তাই বারেবারেই মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু সুফল মেলেনি।”
বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ এই কেন্দ্রগুলির উন্নয়নে ৫০ হাজার টাকা করে ১৪ লক্ষ টাকা দিয়েছে। তাতে কী এই কেন্দ্রগুলির ভবিষ্যত আদৌ উজ্জ্বল হবে, পাঠকেরা কী ভিড় জমাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। |
|
|
|
|
|