|
|
|
|
নিজ গৃহ নিজ ভূমি |
দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণে পঞ্চায়েতে টাস্ক ফোর্স |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সব ভূমিহীন মানুষকে বাড়ি দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’র আওতায় আনা হবে তাঁদের। পশ্চিম মেদিনীপুরেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। জেলা জুড়ে সেই কাজও শুরু হয়েছে। কোন এলাকায় কতজন ভূমিহীন বসবাস করেন, কাদের নিজস্ব জমি নেই, খাসজমিতে কেউ বাড়ি বানিয়ে থাকেন কিনা, তা খতিয়ে দেখে তালিকা তৈরি হচ্ছে। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “এর ফলে গরিব মানুষই উপকৃত হবেন। প্রতিটি ব্লকে যাতে সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়, সেই দিকটিও দেখা হচ্ছে।” জানা গিয়েছে, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে এক লক্ষ উপভোক্তাকে জমি দিয়ে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এই জেলার জন্য বরাদ্দ হয় তিন হাজার বাড়ি। গত ডিসেম্বরে কাজ শেষের কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রশাসনের অবশ্য আশা, ঠিক ভাবে কাজ চললে পাঁচ বছর পর জেলায় একজনও ভূমিহীন থাকবেন না।
ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরি করে দিতেই ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্প। যাঁদের নিজস্ব জমি নেই, তাঁদের পাঁচ ডেসিমেল করে জমি দেওয়া হবে। জমি চিহ্নিত করবে সরকারই। শুরুতে ওই জমির পাট্টা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরে ওই জমিতেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। বাড়ি বানানো হবে ‘আমার বাড়ি’, ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’র মতো কোনও একটি গৃহনির্মাণ প্রকল্পে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পটি নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠক হয় জেলাশাসকদের। ওই বৈঠকে প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এরপর এই প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত জেলাশাসকদের জানানো হয়। সঙ্গে কী ভাবে কাজ এগোনো হবে, তার কিছু নির্দেশও দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ওই নির্দেশ পেয়ে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন।
ব্লকস্তরে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সমীক্ষা শেষে ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন ব্লকে এক বা একাধিক জমি চিহ্নিত করা হচ্ছে, যেগুলো খাস। ভূমি দফতরের হাতে রয়েছে। তালিকা ধরে ওই সব জমির পাট্টাই ভূমিহীনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” তাঁর কথায়, “এর ফলে যেখানে ৫০ ডেসিমেল জমি রয়েছে, সেখানে অন্তত ১০টি পরিবার থাকতে পারবে। একসঙ্গে ওই পরিবারগুলো থাকলে একটা বসতি গড়ে উঠবে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার সার্বিক উন্নয়নের একটা পরিকল্পনাও করা সম্ভব হবে।” যেমন, রাস্তা তৈরি করা হবে, পানীয় জলের বব্যস্থা করা হবে, পুকুর খনন করা হবে, পুকুর ধারে ফলের গাছ লাগানো হবে, মুরগি, ছাগল, গরু পালনের ব্যবস্থাও করা হবে প্রভৃতি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কেশপুর, শালবনি, ডেবরা, নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি থেকে শুরু করে মেদিনীপুর (সদর), খড়্গপুর ১ ও ২, পিংলা, সবং, চন্দ্রকোনা- জেলার প্রতিটি ব্লকে ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পের কাজ চলছে। সমীক্ষা করে ভূমিহীন মানুষদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মেদিনীপুরে (সদর) যেমন প্রাথমিক ভাবে ৯৭ জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি বেলদায় প্রশাসনিক জনসভা থেকেও এই প্রকল্পের পাট্টা বিলি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই প্রকল্পটি অবশ্য একেবারে নতুন নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২০০৬ সালে এই প্রকল্প চালু হয়। তখন নাম ছিল ‘চাষ ও বসবাসের জন্য ভূমিদান’ প্রকল্প। যে প্রকল্পে সরকারের জমি দেওয়ার কথা ছিল। প্রয়োজনে সরকার জমি কিনে দেবে। সেই জমিতে বিভিন্ন প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেবে। ঠিক ছিল, এক- একজন ১৬ ডেসিমেল করে জমি পাবেন। ২০১০ সালে জমির পরিমাণ কমে হয় ১০ ডেসিমেল। এই প্রকল্পে ২০০৬ সালে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। যে টাকায় মাত্র ৪২ একর ৯৯ ডেসিমেল জমি কেনা হয়েছিল। ওই জমি ১০৮৮ জন উপভোক্তাকে বিলিও করা হয়। রাজ্যে পালাবদলের পর নতুন সরকার প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে। নাম দেওয়া হয়, ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’। এ নিয়ে অবশ্য সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়ছে না বিরোধী-শিবির। সিপিএম পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য যেমন বলেন, “পুরনো প্রকল্পের গায়েই নতুন নাম লাগানো হয়েছে। আগে ভূমিহীন মানুষ ১৬ ডেসিমেল করে জায়গা পেতেন, পরে ১০ ডেসিমেল হয়, নতুন সরকার এসে তা ৫ ডেসিমেল করে দেয়।’ জমি কমার পাশাপাশি প্রকল্পের গতিও কমেছে বলে অভিযোগ সভাধিপতির। জেলা প্রশাসন অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। |
|
|
|
|
|