|
|
|
|
নেতাজিকে ঘিরে বিতর্ক, নিন্দায় সরব বিদগ্ধ মহল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নাকি গুয়াহাটিতে ‘বহিরাগত’! তাঁর জন্মদিনের প্রাক্কালে তাঁকে ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে গুয়াহাটিতে! তাঁর নামাঙ্কিত ব্যানার, পোস্টারে কালি ছেটানো হল! তাঁর নামে রাস্তার নাম, সেই নাম পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করা হল!
নেতাজিজয়ন্তীর দিন দুয়েক আগে থেকেই নেতাজিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে এই বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, সমাজবিদ, বিদগ্ধ সমাজ নিন্দায় মুখর। আজ, নেতাজির সহযোগী তরুণরাম ফুকনের জন্মদিনে বাঙালি ও অসমীয় সমাজ একযোগে ‘ভুঁইফোড়’ নেতাজি-বিরোধিতার সমালোচনায় জোটবদ্ধ হল।
নেতাজির ১১৭ তম জন্মদিন পালনে অন্যান্য বারের মতোই প্রস্তুত হচ্ছিল গুয়াহাটি। কলোনিবাজারে, বিনোবা নগর প্রাথমিক স্কুলের সামনে আগামী কাল নেতাজির আট ফুট উঁচু মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন বিধায়ক রবীন বরদলৈ। পাশাপাশি, ‘বৃহত্তর অসম নেতাজি জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি’-র উদ্যোগে আগামী কাল সকালে প্রভাত ফেরি, সাই চত্বরে অঙ্কন প্রতিযোগিতা, রক্তদান শিবির ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য প্রণবস্বরূপ নেওগ জানান, পল্টনবাজার নেতাজি চক থেকে শোভাযাত্রা বের হবে। থাকবেন রবীন বরদলৈ, মন্ত্রী গৌতম রায়, প্রাক্তন বিধায়ক অজয় দত্ত। ভাষণ দেবেন অসমিয়া সাহিত্যিক অতুলানন্দ গোস্বামী। বেলা ১২ টা ২০ মিনিটে, নেতাজির জন্ম-মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ তুলবেন জাতীয় পতাকা। এমন সময় এই বিপত্তি! |
|
নেতাজির নামে রাস্তার প্রতিবাদে গুয়াহাটিতে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র |
গত কাল কলোনি বাজারের ছাদে লাগানো নেতাজির ছবি ও রাস্তার নাম-সহ ব্যনারে পরাণ শইকিয়া নামে এক ব্যক্তি কালি ছিটিয়ে দেন। এ নিয়ে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সমাজ প্রতিবাদে পথে নামে। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ ছিলই। আজ সকালে হঠাৎই মহিলাদের একটি দলকে সামনে রেখে ব্যাটালিয়ন গেটে শুরু হয় পাল্টা অবরোধ। সামনের ব্যানারে লেখা, ‘গড়ভাগা পথের নাম বদল চলবে না।’ প্রতিবাদী মহিলারা দাবি করেন, ‘বহিরাগত’ নেতাজির নামে অসমের রাস্তার নাম বদল তাঁরা মেনে নেবেন না। প্রতিবাদকারীদের দাবির মধ্যেও কোনও মিল নেই। কেউ লিখে এনেছেন, ‘গড়ভাগা পথের নাম অপরিবর্তিত রাখতে হবে’, কারও হাতে পোস্টার, ‘শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের নামে রাস্তার নাম রাখতে হবে’, কেউ বলছেন, ‘রাস্তার নাম হোক ভূপেন হাজরিকার নামে।’ কেউ স্লোগান দেন, ‘লখরা রোড জিন্দাবাদ।’ প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে রাস্তা অবরোধ। প্রশাসনের বক্তব্য, রাস্তার নাম বদল নিয়ে ২০০৮-এর ফেব্রুয়ারিতে পুরসভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়। তখন কোনও আপত্তি ওঠেনি। তাই ২০০৮-এর অগস্টে পুরসভা বিজ্ঞপ্তি জারি করে শরাব ভাটি থেকে লখরা পর্যন্ত রাস্তার নাম ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস রোড’ রাখে। জনতা হোটেল চকের নাম হয় নেতাজি সুভাষ চক। এত দিন পরে, হঠাৎ নেতাজিকে নিয়ে এই বিতর্কে সমাজসেবী অজয় দত্ত বলেন, “অসমীয়া সমাজ নেতাজি প্রসঙ্গে বরাবরই একজোট। কার্যত বাংলা-অসমের মধ্যে এখনকার মতো সুসম্পর্ক আগে হয়নি। সেটাই ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।” ‘সেভ গুয়াহাটি, বিল্ড গুয়াহাটির’ সভাপতি ধীরেন বরুয়া বলেন, “দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নাম নেতাজির নামে রাখা হয়েছে। অথচ যে মানুষ উত্তর-পূর্বের বুকে যুদ্ধ চালিয়ে প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা তুললেন তিনি আজ বহিরাগত?” রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈয়ের পুত্র রবীন বরদলৈ বলেন, “আজ কিছু অজ্ঞ, স্বার্থান্বেষী মানুষের প্ররোচনায় যে কাণ্ড ঘটল তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” |
|
|
|
|
|