|
|
|
|
লরির ধাক্কায় ভাঙা নেতাজি-মূর্তির ঠাঁই আঁস্তাকুড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাঁচি |
থানার জঞ্জালে পড়েছিলেন নেতাজি। সরকারি অফিসাররা খবর পেয়েও উদ্যোগী হননি। এমনকী এলাকার বিধায়কও শুনেও শোনেননি। ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের চেষ্টাতেই আজ, ২৩ জানুয়ারি, তাঁর জন্মদিনেই ধানবাদের গোবিন্দপুর চকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পেতে চলেছেন সুভাষচন্দ্র। কলকাতার চিৎপুর থেকে গোবিন্দপুরে এসে পৌঁছেছে তাঁর মূর্তি। অপেক্ষা শুধু আবরণ উন্মোচনের।
ধানবাদে জি টি রোডের উপরেই, গোবিন্দপুর চকে ১৯৯০-এ বসানো হয় নেতাজির আবক্ষ মূর্তি। প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি মুর্তির সামনে থেকেই স্থানীয়রা প্রভাতফেরী শুরু করেন। কিন্তু গত বছর অক্টোবর মাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে নেতাজির মুর্তিটি। ধর থেকে আলাদা হয়ে যায় মুণ্ড। ভাঙাচোরা অবস্থায় সেটি প্রথমে রাস্তাতেই পড়েছিল। পরে স্থানীয় গোবিন্দপুর থানার পুলিশ ভাঙা মূর্তিটি তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখে থানা চত্বরের ভিতরে, জঞ্জাল ফেলার জায়গায়। যেখানে পড়ে থাকে ভাঙাচোরা গাড়ি, উদ্ধার হওয়া মোটর সাইকেল, সেখানেই ঠাঁই হয় ভাঙা নেতাজি মূর্তির। |
|
দ্বিখণ্ডিত নেতাজি মূর্তির জায়গা হয়েছে ধানবাদের গোবিন্দপুর থানার আঁস্তাকুড়ে। —নিজস্ব চিত্র |
ঘটনাটি জানতে পেরে প্রথম সরব হন স্থানীয় সংগঠন ‘ঝাড়খণ্ড বাংলাভাষা উন্নয়ন সমিতি’-র সদস্যরা। সংগঠনের অভিযোগ, চার মাস ধরে সুভাষচন্দ্রের মূর্তি পড়ে থাকল জঞ্জালের মধ্যে। কারও মধ্যে কোনও হেলদোল নেই! সংগঠনের নেতা বেঙ্গু ঠাকুরের অভিযোগ, “বিডিও থেকে শুরু করে পুলিশ,ক সকলের কাছে আমরা আবেদন করেছি, নতুন করে মূর্তি বসিয়ে দিন। এমনকী থানায় গিয়েও বলেছি, অন্তত জঞ্জাল থেকে তুলে মূর্তিটি একটি ভালো জায়গায় রাখার জন্য। কিন্তু কোনও মহলে কোনও হেলদোল হয়নি।” শেষে বাংলা ভাষা উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে গোবিন্দপুরের সাধারণ লোকজন বিডিও অফিসে ধর্নায় বসে।
গোবিন্দপুর ব্লকের বিডিও সঞ্জীব কুমার অবশ্য দাবি করে বলেন, “আমরা বলেছিলাম, সিমেন্ট দিয়ে দেব। ওঁরা যেন মুর্তি সারিয়ে নেন। কিন্তু ওঁরা আর আমার কাছে আর আসেননি।” উল্লেখ্য, ধানবাদের এই জি টি রোড হয়েই গাড়িতে গোমো যান নেতাজী। চালকের আসনে ছিলেন ভ্রাতুস্পুত্র শিশির। গোমো স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন নেতাজী। স্থানীয় গোবিন্দপুর এলাকার ব্যবসায়ী, শরৎ দুরানির কথায়, “ভাবতেও পারছি না, কী করে দিনের পর দিন থানার আস্তাকুঁড়েয় নেতাজির মুর্তি ফেলে রাখল পুলিশ! কোন আক্কেলে খবর পাওয়া সত্ত্বেও বিডিও মুর্তিটা জঞ্জালের স্তুপ থেকে ওঠানোর উদ্যোগ নিলেন না!” নেতাজির মূর্তি এ ভাবে পড়ে থাকা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই এলাকায় জনমত গড়ে তুলেছিলেন স্থানীয় গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত সোমবারই মূর্তিটি জঞ্জালের স্তুপ থেকে তুলে আনতে বাধ্য হন গোবিন্দপুর থানার পুলিশ কর্মীরা। গোবিন্দপুর থানার পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “যেভাবে বিষয়টি দেখানো হচ্ছে তা ঠিক নয়। এটা ঠিকই, মুর্তিটি বেশ কয়েকদিন জঞ্জালের মধ্যে পড়েছিল। কিন্তু পরে সেটিকে তুলে আনা হয়।” সরকারি স্তরে মুর্তি বসানো নিয়ে ‘টালবাহানা’ চলতে থাকায় শেষ পর্যন্ত গোবিন্দপুর চকে মুর্তি বসাতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলা ভাষা উন্নয়ন সমিতি ও স্থানীয় নাগরিক সমাজ। সমাজের সচিব অশোক গিরি জানিয়েছেন, “কলকাতা থেকে মূর্তি তৈরি করিয়ে আনা হয়েছে। নেতাজির জন্মদিনেই তার আবরণ উন্মোচন করার কথা। দেখা যায়!” |
|
|
|
|
|