|
|
|
|
লক্ষ্য কাশ্মীরিদের কর্মসংস্থান |
রাহুলের অগ্রাধিকার নিয়ে উদ্যোগী কেন্দ্র |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পদে রাহুল গাঁধীর অভিষেকের পর তিন রাতও পার হয়নি। তাঁর অগ্রাধিকারের কর্মসূচিতে সিলমোহর দিতে উদ্যোগী হল মনমোহন সিংহ সরকার। জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির শেষ হওয়ার পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হবে বৃহস্পতিবার। প্রায় চল্লিশ হাজার কাশ্মীরি যুবকের কর্পোরেট সংস্থায় কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। প্রস্তাবিত এই কর্মসূচির প্রধান কাণ্ডারী গাঁধী পরিবারের তরুণ নেতা।
এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আজ জানান, রতন টাটা, কুমারমঙ্গলম বিড়লা, দীপক পারেখ-সহ কর্পোরেট সংস্থার কর্ণধারদের এক প্রতিনিধি দল নিয়ে গত অক্টোবর মাসে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। তাঁদের উপস্থিতিতে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সঙ্গে এক আলোচনা চক্রে তিনি উপত্যকায় বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। শিক্ষিত কাশ্মীরি যুবকদের কর্পোরেট সংস্থায় প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের উপরেও গুরুত্ব দেন।
৯ জানুয়ারি ২২টি কর্পোরেট সংস্থাকে দিল্লিতে এক বৈঠকে ডাকে কেন্দ্র। স্থির হয়েছে, কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে চল্লিশ হাজার যুবকের জন্য সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে খরচ করা হবে এক হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রশিক্ষণের জন্য মাথাপিছু আড়াই লক্ষ খরচ করা হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও স্বীকার করছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময়টা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। দু’দিন আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসের দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে অভিষেক হয়েছে রাহুলের। তার পর আজই কাশ্মীরি যুবকদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ক্যাবিনেট নোট মন্ত্রীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “মন্ত্রিসভায় রাহুল নেই। কিন্তু তাঁর মনোভাব ও অগ্রাধিকারের ছায়াপাত ঘটতে শুরু করে দিল।” তাঁর কথায়, রাহুলকে কৃতিত্ব দেওয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে রাহুল যে উন্নয়নকে সামনে রেখে রাজনীতি করছেন তাও বোঝানোর সুযোগ রয়েছে। উন্নয়নের রাজনীতি রাহুল শুরু করলেন কাশ্মীর থেকে। বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে বিধ্বস্ত কাশ্মীরের যুবকদের মূলস্রোতে আনতে তাঁদের কর্মসংস্থানের উপরে গুরুত্ব দিচ্ছেন এই তরুণ নেতা। এই পদক্ষেপে সামগ্রিক ভাবে দেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছেও ইতিবাচক বার্তা যাবে বলে আশা কংগ্রেসের।
মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কথায়, রাহুল যে বিষয়গুলি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তা সরকার সুষ্ঠু ভাবে রূপায়ণ করতে পারলে গোটা দেশে তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথও সুগম হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কাশ্মীরি যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি শহরে দক্ষ যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্যও একটি প্রকল্প ঘোষণা করবে কেন্দ্র।
কাশ্মীরি যুবকদের নিয়ে পাঠানো ক্যাবিনেট নোটে বলা হয়েছে, তাঁদের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ে গিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ওই যুবকদের যাতায়াতের খরচ দেবে সরকার। তা ছাড়া থাকা-খাওয়ার জন্য রোজ ৩০০ টাকা খরচ করা হবে। কোনও কর্পোরেট সংস্থায় প্রশিক্ষণের পর সেখানে কোনও যুবকের চাকরি না হলে প্লেসমেন্ট সংস্থার মাধ্যমে তাঁর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে কেন্দ্র। এই কাজের জন্য মাথাপিছু প্লেসমেন্ট সংস্থাকে ১০ হাজার টাকা দেবে সরকার। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, যে ২২টি কর্পোরেট সংস্থা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জন্য সরকারকে সম্মতি দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে টিসিএস, এইচ সি এল টেকনোলজি, ফিউচার গ্রুপ, ইয়েস ব্যাঙ্ক, এনটিপিসি, অ্যাপোলো হসপিটাল ও ভেল। সরকারের এক নেতার কথায়, এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ করে পাকিস্তান এখন রাষ্ট্রপুঞ্জে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তখনই এই ঘোষণা করে কাশ্মীরের মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতে পারবে কেন্দ্র। দেখাতে পারবে কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য নয়াদিল্লির আগ্রহ কতটা। |
|
|
|
|
|