রায়বরেলীতে প্রিয়ঙ্কাকে চান সনিয়া
ভাইয়ের পরে বোন। রাহুলের অভিষেক হয়ে গিয়েছে। এ বার প্রিয়ঙ্কার পালা।
মা সনিয়া গাঁধী শারীরিক অসুস্থতা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন। কংগ্রেস দলনেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে লড়বেন না। কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, পারিবারিক সিদ্ধান্ত হল, সনিয়ার জায়গায় রায়বরেলী আসন থেকে ভোটে লড়তে পারেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা গাঁধী।
রাহুল গাঁধী দলের সহ-সভাপতি হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচার কমিটির তিনিই প্রধান কাণ্ডারী। মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকায় রাহুলের নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে না বটে। কিন্তু এটা এখন স্পষ্ট যে, ভোটে জিতলে মনমোহন নয়, রাহুলই প্রধানমন্ত্রী হবেন। রাহুলের অভিষেকের পরেই কমল নাথ, গুলাম নবি আজাদের মতো একাধিক নেতা এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেন। জয়পুর পর্ব মিটে যাওয়ার পরে আপাতত ‘নতুন ভারত’ গড়ার কথা মাথায় রেখে রাজ্যওয়াড়ি সফর শুরু করতে চলেছেন রাহুল।
এই সর্বভারতীয় প্রচারে অবশ্য প্রিয়ঙ্কা অংশ নেবেন না। কংগ্রেস সূত্রের খবর, তাঁর ভূমিকা হবে সীমাবদ্ধ। তিনি এত দিন ধরে মায়ের রায়বরেলী ও ভাইয়ের অমেঠি দেখাশোনা করেছেন এত দিন ধরে। বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন থেকে প্রিয়ঙ্কা আমেঠি-রায়বরেলী যাচ্ছেন। এ বার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলে রায়বরেলী হবে তাঁরই কেন্দ্র। জিতলে ভাইয়ের সঙ্গী হবেন তিনি। রাহুলের নেতৃত্বে গঠিত নবীন প্রজন্মের টিমকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন। পাশাপাশি দেখাশোনা করবেন রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের কাজ।
প্রিয়ঙ্কার জনসংযোগ। গত শুক্রবারেও ছিলেন রায়বরেলীতে। —ফাইল চিত্র
জয়পুরে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কাও হাজির ছিলেন। চিন্তন বৈঠকে যোগ দেননি। কিন্তু প্রকাশ্য অধিবেশনে মঞ্চের পাশে প্রিয়ঙ্কাকে দেখা গিয়েছে। যদিও অনুপস্থিত রবার্ট বঢরা।
ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুর আগের রাতে সফদরজঙ্গ রোডের ওই বাড়িতেই ছিলেন সনিয়া। রাজীব যখন প্রধানমন্ত্রী হন, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন সনিয়া। পি সি আলেকজান্ডার তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, রাজীবকে এই দায়িত্ব নিতে মানা করে সনিয়া সে দিন কেঁদেছিলেন। এ বার সহ-সভাপতি হওয়ার পরে নেপথ্যের ঘটনা বলতে গিয়ে রাহুলও জানান, তাঁর মা এখনও তাঁর দায়িত্বগ্রহণের বিষয়ে যথেষ্ট দ্বিধাগ্রস্ত। জানিয়েছেন, কী ভাবে আগের রাতে ঘরে এসে কেঁদেছেন সনিয়া। কারণ, রাহুলের কথায়, “মা জানেন ক্ষমতার বিষের কথা।”
কংগ্রেস সূত্র বলছে, সনিয়া আরও জানেন, কখন এবং কী ভাবে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ না নিয়ে তিনি বিজয়ী দলের নেত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহকে বেছে নিয়েছিলেন। একই ভাবে নেহরু-গাঁধী পরিবারের সিদ্ধান্ত হল, ৭০ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন সনিয়া। অনেকটা ইউরোপীয় কায়দায় সনিয়া তাঁদের দলের সতীর্থদের এই অবসরের কথা আগাম জানিয়েছেন। জয়পুরের অধিবেশনের বেশ কয়েক মাস আগেই সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কা তাঁদের কয়েক জন পারিবারিক উপদেষ্টার সঙ্গে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বার এক দিকে রাহুল হবেন কংগ্রেসের প্রধান মুখ, অন্য দিকে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রিয়ঙ্কা।
২০১৪ সালে সনিয়া গাঁধীর বয়স হবে ৬৮ বছর। আবেগজনিত ভয় থাকলেও তিনি চাইছেন, এ বার তাঁর পুত্র দল এবং সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা নিন। আবার প্রিয়ঙ্কা সাংসদ হলেও কংগ্রেসের সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি অংশ নেবেন না। বাবার মৃত্যুর পর প্রিয়ঙ্কা প্যারিস গিয়েছিলেন জাদুঘর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য। তখন সনিয়া দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে এই প্রতিবেদককে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, এক নম্বর সফদরজঙ্গ রোডে তাঁর শাশুড়ির বাসভবনে দু’টো ঘরে আলাদা করে রাজীবের স্মৃতিরক্ষার কাজ নিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। সেটা খুব ভাল ভাবে করার জন্য তিনি প্যারিসে পড়াশোনা করতে গিয়েছেন। সনিয়া বলেছিলেন, প্রিয়ঙ্কা যা কিছু করে, খুব মন দিয়ে করে। রাহুল-প্রিয়ঙ্কার রাজনীতিতে আসার বিষয়ে প্রশ্ন করলে সনিয়া বলেছিলেন, “ওরা প্রাপ্তবয়স্ক। ওরা আসবে কি না, সেটা ওরাই ঠিক করবে।”
তার পরে বহু বছর কেটে গিয়েছে। রাহুল এখন দলের অন্যতম প্রধান মুখ। প্রিয়ঙ্কা কিন্তু সক্রিয় রাজনীতিতে আসেননি। ক’দিন আগেও তিনি রণথম্ভৌরের জঙ্গলে বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। বাবা রাজীবেরও ছবি তোলার নেশা ছিল। সম্প্রতি সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘রণথম্ভৌর’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধও লেখেন প্রিয়ঙ্কা। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এ সবের পাশাপাশি ২০১৪ সালে তাঁকে নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে। যার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে কংগ্রেসের শরিক-সমর্থক দলগুলিও। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব আগাম জানিয়েছেন, প্রিয়ঙ্কা প্রার্থী হলে ওই আসনে সমাজবাদী পার্টি প্রার্থী দেবে না। ভাইবোনের সমীকরণ কংগ্রেসের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.