রাসায়নিকে ক্যানসার, মত জৈব সারের পক্ষে
লন যাতে আরও বেশি হয়, কোন ফসলে কতটা পরিমাণ সার প্রয়োগ করা উচিত এবং কৃষি সংক্রান্ত অন্য অনেক বিষয়ে আলোচনা সভা হয়ে গেল কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুর এলাকার একটি হিমঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ব্লক কৃষিমেলায়। মঙ্গলবারের এই আলোচনা সভায় হাজির থাকা এলাকার চাষিদের অত্যধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক করলেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা জানান, ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাড়তি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের স্বর্ণযুগ বলা হয়। ফসলের মাত্রা বাড়ানোর জন্য এই সময় প্রচুর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। সারা দেশে রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাত্রা বাড়ে সাড়ে ছ’গুন। বিভিন্ন জায়গায় সমীক্ষা করার পর দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে রাসায়নিক প্রয়োগের মাত্রা ১২ গুন বেড়েছে। বর্ধমান জেলায় এই মাত্রা সাড়ে পাঁচ গুন। ২০০৬ সালের পর পরীক্ষা দেখা গিয়েছে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হলেও ফলন আর বাড়ছে না। বরং কিছুটা কমছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ৮৫ শতাংশ চাষি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করে। এর কারণ হল বেশির ভাগ চাষিরা জানেনই না কোন ফসলে কোন জাতীয় এবং কতটা পরিমাণ সার প্রয়োগ করা উচিত।
কৃষিমেলার স্টল। ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে চাষের ক্ষতি তো হয়ই। এ ছাড়া ক্যানসার, হৃদযন্ত্রের সমস্যা-সহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়বে। অনুষ্ঠানে স্টেট এগ্রিকালচারাল ফার্ম বর্ধমানের আধিকারিক তথা কৃষি বিশেষজ্ঞ মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্জাবে গিয়েছিলাম। সেখানে ভাতিন্ডা থেকে বিকানি পর্যন্ত একটি ট্রেন চলে। যে ট্রেনটিকে বলা হয় ক্যানসার স্পেশালিস্ট। এই যাত্রীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ ক্যানসার রোগী যারা অনেকেই আর বাড়ি ফেরেনা। অত্যধিক রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের প্রয়োগের ফলেই ওখানে ক্যানসারের বাড়বাড়ন্ত। এই অবস্থা যাতে আমাদের না হয় সে ব্যাপারে ভাবতে হবে।”
কৃষি বিশেষজ্ঞরা সমস্যার সমাধানের পথও বাতলে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, গত আড়াই দশক ধরে প্রকৃতি খামখেয়ালি আচরণ করছে। ফলে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই আবহাওয়ার সঙ্গে চাষিদের ফসল চক্র সাজাতে হবে। ফসলের খাদ্য ঘাটতির উপর নির্ভর করে পরিমাণ মত সার প্রয়োগ করা হয়। এ ক্ষেত্রে চাষের শুরুতেই মাটি পরীক্ষা খুব জরুরি। জৈব সার এবং জীবাণু সারের প্রয়োগ জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, জৈব সারের ঘাটতি মেটাতে চাষিরা নিজেরাই তাঁদের বাড়ির আশেপাশে তৈরি করতে পারে সার। এ ক্ষেত্রে প্রথমে চার ফুট গর্ত করে পলিথিনের আস্তরণ তলায় পেতে দিতে হবে। সারা বছর ধরে পচনশীল জিনিষপত্র ওই গর্তে ফেলতে হবে। এক ফুট উচ্চতা পর পর সেখানে গোবর এবং গোমূত্রের আস্তরণ দিতে হবে। এর দ্বারা চাষিরা অনায়াসেই জৈব সারের প্রকল্প তৈরি করতে পারে। সভায় সহ-কৃষিঅধিকর্তা নিলয় কর বলেন, “কালনা মহকুমায় জলস্তর হু হু করে নামছে। এটা চরম উদ্বেগের বিষয়। চাষিরা খুব বেশি নীচের জল তুলতে গেলে লেড, ক্রোমিয়াম, ফ্লোরাইড উঠে আসবে। যা থেকে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে।” এ দিনের অনুষ্ঠানে মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক, কালনা ২ ব্লকের কৃষি আধিকারিক ভাস্কর দত্ত-সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কৃষি, প্রাণি সম্পদ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, সমবায় বিষয়ক নানা স্টল, কৃষিজাত যন্ত্রের এবং সবজির প্রদর্শনী এই মেলায় রাখা হয়েছে। কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু মেলার উদ্বোধন করেন। রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প, বস্ত্র এবং ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ঘুরে যান। কালনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা দেবু টুডুর বক্তব্য, “মেলায় চাষিদের উপস্থিতি ছিল প্রচুর। অনেকেই এই ধরণের মেলা আরও চেয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.