তাঁরা অনেকটা আশ্বস্ত, বললেন প্রদীপ তা-র স্ত্রী
পুলিশি বন্দোবস্তে আপাতত তিনি আশ্বস্ত বোধ করছেন বলে জানালেন নিহত সিপিএম নেতা প্রদীপ তা-র স্ত্রী চিত্রলেখা তা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে চিত্রলেখাদেবী বলেন, “বাড়ির সামনে পুলিশ আছে। রাতেও পাহারা থাকছে। এসডিপিও নিজে আমার সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তা সম্পর্কে আশ্বাস দিয়েছেন। সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের ফোন নম্বরও দিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, সামান্য অসুবিধা হলেই যেন আমি ওঁদের জানাই। তাই আগের চেয়ে আশ্বস্ত বোধ করছি।”
গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে দেওয়ানদিঘিতে খুন হন প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা। অভিযুক্তেরা সকলেই তৃণমূলের। গত শুক্রবার হাইকোর্টে গিয়ে চিত্রলেখাদেবী এবং তাঁর এক মাত্র মেয়ে পৃথা জানান, তাঁরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। তৃণমূলের লোকজন, বিশেষত জামিনে ছাড়া পাওয়া অভিযুক্তেরা তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। সোমবার তাঁদের বাড়ির সামনে দিয়ে দেওয়ানদিঘি মোড় থেকে স্থানীয় কামনাড়া পিরতলা পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল। দাবি করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করার জন্য প্রদীপবাবুর পরিবারকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সেই সময়ে চিত্রলেখাদেবী অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না। গলসির যে স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন, সেখানেই গিয়েছিলেন। এ দিন ওই মিছিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাড়িতে না থাকায় ওই মিছিল আমি দেখিনি। তার আগে-পরে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাই আলাদা করে গুরুত্ব দিচ্ছি না।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা নুরুল হাসান বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিপিএম চিত্রলেখাদেবী ও তাঁর মেয়েকে মাঠে নামিয়েছে। কিন্তু মানুষ ওদের মিথ্যাচারিতা বুঝতে পারছেন। এলাকার মানুষের ওই পরিবারের প্রতি সহানূভুতি রয়েছে। ওঁরা আর পাঁচ জনের মতোই বাজার-হাট, চাকরি, এমনকী দলীয় কর্মসূচিতেও যোগ দিতে পারছেন।”
সাংবাদিকতা পড়ার সূত্রে পৃথা আপাতত কলকাতায়। কিন্তু একা থাকতে হলেও চিত্রলেখাদেবীর স্বস্তি বেড়েছে পুলিশ পাহারা বাড়ায়। তাঁদের বাড়ির কাছে সরাইটিকর পঞ্চায়েত অফিসে পুলিশ ক্যাম্পে ফের এক দফা কর্মী সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রথমে ওই ক্যাম্পে দুই এসআই ও চার কনস্টেবল ছিলেন। হাইকোর্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়ার পরে শুক্রবারই এক কনস্টেবল ও এক এনভিএফ বাড়ানো হয়। সম্প্রতি আরও দুই কনস্টেবলকে ওই ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১০ পুলিশকর্মী বহাল হয়েছেন। এসডিপিও (বর্ধমান) অম্লানকুসুম ঘোষ বলেন, “দিন-রাত ওই বাড়ির দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। ওখানে যাতে আর কোনও আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, তার আমরা দেখছি।”
চিত্রলেখাদেবী বলেন, “এসডিপিও বাড়িতে এসে পৃথার সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেছেন। মেয়ে কলকাতার কোথায় থাকে বা তার সেখানে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন। বেশ কয়েকটি ফোন নম্বরও দিয়েছেন মেয়েকে। আমাকে যেমন বলেছেন, তেমনি ওকেও বলেছেন সমস্যা হলে জানাতে। পুলিশ যে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলছে, তাতে আমরা খুশি।” সিপিএম অবশ্য ওই মিছিলকে সন্দেহের চোখেই দেখছে। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “যে মিছিলটি হয়েছে, তার স্লোগান ছিল হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেই। প্রশাসন কি করে এই মিছিল করার অনুমতি দিল?” জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা এবং বর্ধমান মহকুমাশাসক প্রদীপকুমার আচার্য দু’জনেই জানান, ওই মিছিলের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অনেকে মনে করছেন, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। এলাকার তৃণমূল সমর্থক উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “প্রদীপ তা-র মৃত্যু নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। কিন্তু দেওয়ানদিঘির জনজীবন যখন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে, কেন ওঁরা আদালতে নিরাপত্তার অভাবের কথা বললেন, সেটা আমরা বুঝিনি।” স্থানীয় মির্জাপুরের বাসিন্দা বাবুল তা বলেন, “ওই পরিবারের প্রায় সকলেই আমাদের পরিচিত। আমরা আগের ওই ভয়ঙ্কর ঘটনা ভুলে যেতে চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.