কাটোয়ায় ক্ষুব্ধ চাষিরা
চালকলে ধান বেচে ‘ডিউ স্লিপ’
ধান বিক্রির পরে চেকের বদলে মিলছে ‘ডিউ স্লিপ’। বেশ কিছু চালকলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে কাটোয়ায়। সে কারণে চালকলের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে তাঁরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলেও দাবি চাষিদের।
চালকল মালিকদের বক্তব্য, বাধ্য হয়েই এ ভাবে ‘ডিউ স্লিপ’ ধরাচ্ছেন তাঁরা। বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার যদিও দাবি, “এ ধরনের কোনও অভিযোগ নেই। অনেক শিবির খোলা হয়েছে। প্রাথমিক সমবায়গুলিকেও নামানো হয়েছে। চাষিরা শিবিরে ধান বিক্রি করুন।” তবে চালকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা বিডিও-কে জানানোর পরামর্শ দেন জেলাশাসক।
কনফেড, ইসিএস-এর মতো সরকারের নানা সংস্থার সঙ্গে ধান কেনার ক্ষেত্রে চালকলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চালকলে ধান বিক্রি করতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। কারণ, ধান বিক্রির পরে হাতে দেওয়া হচ্ছে ‘গেট পাস’ লেখা স্লিপ। তাতে চাষির নাম ও টাকার অঙ্ক লেখা থাকছে। কাটোয়া ১ ব্লকের দেবকুণ্ডু গ্রামের প্রদ্যুৎ ঘোষের অভিযোগ, “১৭ জানুয়ারি গ্রামের কাছেই একটা চালকলে ধান দিয়েছি।
দেবকুণ্ডুর এই চালকল দিয়েছে এই স্লিপ।—নিজস্ব চিত্র।
তারা স্লিপ দিয়ে বলেছে, এক মাস পরে চেক নিয়ে যাবেন।” মঙ্গলকোটের দুরমুট গ্রামের চাষি কামালউদ্দিন শেখেরও একই অভিজ্ঞতা। তাঁর কথায়, “বেশ কিছু দিন আগে ধান বিক্রি করেছি। তখন মিল থেকে স্লিপ দিয়েছিল। তা দেখিয়ে দু’দিন আগে চেক পেয়েছি।”
হাতেহাতে চেক না মেলায় তাঁরা চালকলে ধান বিক্রি করতে চাইছেন না বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, এর বদলে ফড়েদের কাছে নগদ টাকার বিনিময়ে ধান বিক্রি করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন অনেকে। কেতুগ্রামের রাজুর গ্রামের ঝরু মাঝি, রাহিল শেখদের অভিযোগ, “ধান বিক্রি করে প্রথমে স্লিপ, তার পরে চেক মিলছে। এ সব দেখে আমরা অনেকেই আপাতত চালকলে ধান বিক্রি করব না ঠিক করেছি।”
চাষিদের ক্ষোভ শুধু চেক নিয়ে নয়। তাঁদের আরও অভিযোগ, মিল কর্তৃপক্ষ প্রতি ৬০ কেজি ধানের বস্তায় গড়ে চার-পাঁচ কেজি ধান বাদ দিয়ে দাম হিসেব করছেন। মঙ্গলকোটের দুরমুট গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, ব্লক থেকে তাঁকে ১৫ জানুয়ারি ধান বিক্রির তারিখ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর দাবি, “সরকারি পদ্ধতি মেনে ধান বেচতে কার্যত লোকসান হবে। তার চেয়ে ফড়েদের বিক্রি করাই ভাল।” একই বক্তব্য শ্রীখণ্ডের হাবিবুল্লা শেখের। তাঁর কথায়, “টাকা পাওয়ার আগে বোরো চাষ শুরু হয়ে যাবে। ফের দেনা করে চাষ করতে হবে।”
সরকারি সংস্থা বা সমবায়েও তো ধান বিক্রি করতে পারেন? মঙ্গলকোটের জালপাড়া গ্রামের চাষি পতিতপাবন মণ্ডল, গণপুর গ্রামের দেবাশিস মণ্ডলদের দাবি, “সরকারি সংস্থার ধান কেনার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও খরব নেই। প্রচারও শুনিনি।” কাটোয়ার বর্ধমান রেঞ্জ ২ ‘হোলসেল কনজিউমার কো-অপারেটিভ সোসাইটি’র চেয়ারম্যান সাক্ষীগোপাল মণ্ডলের স্বীকারোক্তি, “আমি এই সমিতি ছাড়াও মঙ্গলকোটের পিন্ডিরার একটি সমিতির চেয়ারম্যান। দু’টি জায়গাতেই চাষিরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধান বিক্রি করতে আসছেন না।”
বর্ধমানের কংগ্রেস নেতা দীপক মজুমদারের অভিযোগ, “চাষিরা ধান বিক্রি করতে গিয়ে হয়রান হচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজর রাখা উচিত।” ধান বিক্রি করতে গিয়ে চাষিরা যে সমস্যায় পড়ছেন, তা স্বীকার করেছেন তৃণমূলের কিষান সেলের নেতা কোরবান মির্জাও। বর্ধমানের কৃষকসভার নেতা তপন কোনারের দাবি, “হয়রানি এড়াতেই চাষিরা সহায়ক মূল্যের চেয়ে কম দামে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।” এমনই এক ফড়ে, শ্রীখণ্ডের বাসিন্দা তুফান শেখ বলেন, “সময় মতো চেক দিচ্ছে না, তার উপরে ধান বাদ দিয়ে দাম ধরছে চালকলগুলি। তাই চাষিরা আমাদের কাছেই ধান বিক্রি করছেন।”
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, চালকল মালিকেরা খারাপ ধান নেবেন না বলতেই পারেন। কিন্তু ‘খাদ’ বলে বস্তা থেকে কোনও ভাবেই কয়েক কেজি ধান বাদ দিয়ে দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। তা ছাড়া ধান কেনার দিনই চেক দেওয়া বাধ্যতামূলক। শ্রীখণ্ড এলাকার একটি চালকলের কর্তা সঞ্জয় দত্তের বক্তব্য, “চেক দিতে দু’এক দিন দেরি হচ্ছে। আমরাও তো এফসিআই বা রাজ্য সরকারের থেকে টাকা পাচ্ছি না।” জেলা চালকল সমিতির নেতা অমর কুণ্ডু বলেন, “কিছু চালকল কর্তৃপক্ষ দেরি করে চাষিদের চেক দিচ্ছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.