|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়োনা |
গসিপ করলে স্ট্রেস উধাও |
এমনকী মনোবিদরাও বলছেন গসিপ করা স্বাস্থ্য ও মনের পক্ষে ভাল। লিখছেন রেশমি বাগচি |
অফিসে ঢুকেই সিনিয়রের সঙ্গে একচোট ঝামেলা হয়ে গেল শর্মিষ্ঠার। সেই থেকে মেজাজটা খিঁচড়ে আছে। কাজে মন বসছে না কিছুতেই।
নিজের অজান্তেই শর্মিষ্ঠা হাজির হল সহকর্মীদের আড্ডায়। তাদের কথা শুনতে শুনতে নিজেও দু’একটা ফোড়ন কাটল। নানা মজার গসিপে যোগ দিতে দিতে তার খিঁচড়ে থাকা মেজাজটা কখন যেন হাল্কা ফুরফুরে হয়ে গেল।
আজকাল আমরা সবাই ‘আর্ট অফ লিভিং’ বিষয়টার সঙ্গে বেশ পরিচিত। কী ভাবে ভাল থাকবেন, জীবনটা ভাল ভাবে কাটাবেন তা নিয়ে নানা চিন্তা, ভাবনা, গবেষণা, পন্থা। প্রথম প্রথম খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও এখন এক রকম বাধ্য হয়েই, আপনিও ভাল থাকার ক্লাস নিচ্ছেন। নিয়মিত ‘যোগা’ করছেন। মেডিটেশন করছেন। সেই সঙ্গে আছে গুড ফুড হ্যাবিট, বই পড়াসবই তো করছেন। কিন্তু মনের মধ্যে খচখচানি যাচ্ছে না। অফিসে এত কাজের চাপ। স্বভাবটা বেশ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে কিছু হলেই লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাচ্ছেন।
তা হলে উপায়? সমাধান আছে। ডুব দিন নির্ভেজাল গসিপিংয়ে।
না, না, পরনিন্দা পরচর্চার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। গসিপ আপনার জীবনে হয়ে উঠতে পারে সেই স্পেস, যেখানে আজকের মেপেজুকে চলা জীবন থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি পেতে পারেন, হালকা হতে পারেন। গসিপের নানা রকম বিষয় হতে পারে। রণবীরের সঙ্গে কাকে বেশি মানায়? ক্যাটরিনা না দীপিকা? প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা কি আবার একসঙ্গে ছবি করবেন? হেমা মালিনীর দুই মেয়ের এক জনও ওঁর মতো হল না। ‘ইষ্টিকুটুম’-এর বাহাকে সেদিন মল-এ দেখলাম জানিস? এর ফলে আপনি অনেক কিছু জানতে পারেন। গসিপ এক লহমায় সারাদিনের সব টক্সিন বিদায় দেবে। গসিপের আদর্শ সময় অফিসের লাঞ্চটাইম, কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে, বা রাতের খাবারের পর হাত পা ছড়িয়ে। কিংবা বিউটি পার্লারে স্পা বা ফুট বাথ নিতে গিয়ে। |
|
শুনেছি মুম্বইয়ের রেস্তোরাঁয় শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরী খান ও হৃতিক রোশনের স্ত্রী সুজান রোশনকে নাকি প্রায়ই নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করতে দেখা যায়। দু’জনে খুব ভাল বন্ধু। ওঁরাও হয়তো গসিপে মাতেন।
মনোবিদ সঞ্চিতা পাকড়াশীর মতে, গসিপ করার প্রবণতা ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে। আসলে কোনও কিছু না-পাওয়া বা দুঃখ আমরা সাধারণত ভুলে থাকতে চাই। কিন্তু আসলে তা আপনার মনের গভীরেই রয়ে যায়। আর তাই অচেতনেই আপনি মেতে ওঠেন গসিপে। যে সব মনের কথা কখনও হয়তো প্রকাশ করতে পারেননি, গসিপ করতে করতে হয়তো সেটাও বলে ফেলেন।
তবে এই পরচর্চায় কারও কোনও ক্ষতি নেই। শুধু মহিলারা নন, পুরুষেরাও গসিপ করতে ভালবাসেন। অন্য দিকে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে আমরা যে সেলিব্রিটিদের নিয়ে গসিপ করতে ভালবাসি তার কারণ কথার ফাঁকে তাঁদের জীবনটা খানিকক্ষণের জন্যে হলেও আমরা নিজেরা ভাগ করে নিই। অনুত্তমা বললেন, “পুরুষদের গসিপের মধ্যে নিজেদের পৌরুষ জাহির প্রবণতা খুব বেশি। নিজের গার্লফ্রেন্ড হোক বা নতুন কেনা আইপ্যাড যা নিয়েও আলোচনা হোক সব কিছুর নেপথ্যেই থাকে পৌরুষকে জাহির করার ঝোঁক।”
নিজেদের মধ্যে গসিপ করে যদি হালকা অনুভব করেন, তা হলে ভালই তো। কিন্তু একটা কথা, গ্রুপের কোনও বন্ধু যদি নেগেটিভ গসিপিং করেন, তবে লাগাম টানতে হবে। নইলে স্ট্রেস রিলিজের জায়গায় উল্টে আরও স্ট্রেসড হয়ে যাবেন।
নিজে নিউজ অ্যাঙ্কর হওয়ার দরুন গেস্টদের নিয়ে নানা আলোচনা বা চ্যাটের আগে, পরে বা ব্রেকের সময় নানা গসিপ শুনতে পাই। এই যেমন এক নায়িকা বলছিলেন সেদিন...এত বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে, এখনও কোথায় কী পোশাক পরতে হয় শিখল না...। বুঝতেই পারছেন অপর এক নায়িকা সম্পর্কেই তাঁর এই উক্তি। কে কাকে নিয়ে এই মন্তব্য করছেন? যাঃ তা কথনও বলতে আছে? গসিপিংয়ের নিয়ম হল কখনও সোজাসাপটা গসিপ করতে নেই। তা হলে গসিপের মজাটাই মাটি। আর তা ছাড়া আপনার কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগান না...
সাংবাদিক হিসেবে রোজই এমন কত শত গরমাগরম গসিপ আমি প্রত্যক্ষ করি!
যখন কোনও রাজনৈতিক আলোচনা হয় টিভির পর্দায়, রাজনীতিকেরা তুমুল তর্কে মেতে ওঠেন। একে অপরকে শাণিত আক্রমণ করেন। কিন্তু ক্যামেরার আড়ালে ব্রেকের সময় বা অনুষ্ঠানের আগে-পরে নিজেদের মধ্যে দারুণ রসালো আলোচনায় মাতেন। তাঁরা বিভিন্ন রাজনীতিকের কথা বলার ভঙ্গি, খাদ্যাভ্যাস, এমনকী বিভিন্ন রাজনীতিকের রসবোধ নিয়েও মুখরোচক আড্ডায় শামিল হন। এগুলোকেও এক অর্থে নির্মল গসিপও বলা যায়। তবে গসিপ করে মন হালকা করার বিষয়টা একেবারেই নতুন নয়। দুপুরে খাবার শেষে দিদা, ঠাকুমা, বিধবা পিসি, পাশের বাড়ির বৌদির পানের বাটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা মশকরা আদপে গসিপই ছিল। পরবর্তীতে যা হল কিটি পার্টি। আর এখন সময়ের অভাবে স্পিড গসিপ।
খেয়াল করে দেখুন তো ছোট একটা গসিপ সেশনের পর কোন গানটা গুনগুন করতে চাইছে আপনার ফুরফুরে মন?
|
টিপস |
• এমন গসিপ করবেন, যাতে কেউ আঘাত না পায়।
• নেগেটিভ গসিপ হলে লাগাম টানতে হবে।
• অফিসে লাঞ্চের পর, রাতে খাওয়াদাওয়ার পর গসিপের আদর্শ সময়।
• চেনা-জানা রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, বিউটি পার্লার এ সব হচ্ছে গসিপের আদর্শ জায়গা। |
|
|
|
|
|
|