|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়োনা |
নেটের ফাঁদ পাতা ভুবনে |
নেট জানালায় প্রেমের উঁকিঝুঁকি। কী ভাবছে জেনারেশন ওয়াই?
নতুন এই প্রেমের রহস্য খুঁজলেন অদিতি ভাদুড়ি |
বেশ কিছু দিন ধরে একটা কথাই ঘুরছে রাতুলের মাথায়। শ্রুতি কি তা হলে ওর প্রস্তাবে রাজি? কে জানে! উত্তরটা কি চ্যাটেই জানাবে? মুখ গোঁজ করে ভাবতে থাকে ও।
হাত ধরাধরি করে বাদামের প্যাকেট নিয়ে প্রেম, এই জেনারেশনের কাছে এখন আউটডেটেড। টিএফটি মনিটরের চ্যাট উইনডোতে নিঃশব্দে আদানপ্রদান হয়ে চলেছে ভালবাসা। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা কথার প্যাঁচে চলছে মন দেওয়া-নেওয়া।
ঠিক যেন ‘অন্তহীন’ সিনেমায় রাধিকা আপ্তে আর রাহুল রায়ের প্রেম। জানলার কাচের শার্সিতে ফোঁটা ফোঁটা জলের বিন্দু। বাইরে মন কেমন করা বৃষ্টি। আর বিছানায় আধশোয়া নায়িকার সামনে খোলা ল্যাপটপের স্ক্রিন। ওপারে অচেনা নায়ক। আলগোছে কথা চালাচালিতে ক্রমশ গাঢ় হয়ে ওঠা প্রেম। আর ব্যাকড্রপে ‘যাও পাখি বলো’-র মন উদ্ভ্রান্ত উদাস করে দেওয়া সুর।
এই যেমন বেঙ্গালুরুর শমীক আর বালুরঘাটের শর্মিষ্ঠার কথাই ধরা যাক। কতটা দূরত্ব দুটো জায়গার মধ্যে! কিন্তু তাতে কার কী? প্রেম কি আর আটকে গেল এই অজুহাতে! ফেসবুক ট্যুইটার থেকে অবশেষে প্রতিদিন জি-টক-এ কথাবার্তা। এত দূর এগোল সেই চ্যাটালাপ, যে তার জের শেষমেশ গড়াল একেবারে বিয়ের পিঁড়িতে।
অনন্য আরও অ্যাডভান্সড।
“সোজাসুজি বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছিলাম রূপসাকে। বলে দিই, বিয়ে করলে কালই। আর তা না হলে কভি নেহি,” অনন্যর উত্তর।
কী বলল রূপসা?
“ও তো ধেবড়ে একসা। ধাতস্থ হতে টাইম নিয়েছিল অনেক,” হাসে অনন্য।
“সত্যি, বিশ্বাসই হচ্ছিল না একদম। অনলাইন চ্যাট করতে গিয়ে দেখেছি বিবাহিত পুরুষরাও অবিবাহিত বলে চালায় নিজেদের। তবে অনন্যর ব্যাপারটা একদম আলাদা ছিল,” রূপসা বলে। |
|
অনলাইনেই বে-লাইন ‘এক বৈশাখে দেখা হল দু’জনায়’ জমানা থেকে উত্তরণ একেবারে অনলাইন প্রেমে। একেই বোধ হয় বলে ‘জেনারেশন গ্যাপ’। কিছু দিন আগেও জাস্ট ভাবা যেত না। “দারুণ ব্যাপার কিন্তু। আমাদের সময় দেখা করার ছাড় পাওয়া যেত একমাত্র টিউশন করতে গেলে। তাও লুকিয়ে চুরিয়ে। আর কি ভয়! কোথায় কার মামা বা পিসি দেখে ফেলল! এখনকার জেনারেশনের তো মজাই আলাদা,” বললেন কলকাতার এক গার্লস স্কুলের দিদিমণি, রুমেলা বসু। ‘প্রথম দেখা প্রথম প্রেম’ ধারণাটাই তো আর থাকল না তা হলে। ইন্টারনেটে পরিচয়ের ক্ষেত্রে তো আর সেই ফিলিংসটা থাকে না যেটা মুখোমুখি পরিচয়ের ক্ষেত্রে হয়। “কে বলেছে?” তীক্ষ্ন প্রতিবাদ করল অন্বেষা। পুণের একটা নামী হোটেলে ফ্রন্ট অফিস এক্সিকিউটিভের চাকরি করে ও। “আমাদের পরিচয় তো স্কাইপে। ভালই লেগেছিল সেই মুহূর্তটা। এখনও তো বেশি সময়টা স্কাইপেই কথা হয়। আমেরিকা থেকে কি আর রোজ আসা সম্ভব?” অন্বেষার কথায় কিছুটা অভিমানও ঝরে পড়ে। রাজিত, ওর বয়ফ্রেন্ড, আমেরিকার এক কলেজে ডক্টরেট করছে।
নেট তো অনেক সময় ডাউন থাকে। কী করে তখন এই নেটে প্রেম করিয়ের দল?” “খুব সমস্যায় পড়ে যাই। দিজ আর প্রাইভেট ফিলিংস দ্যাট ক্যানট বি শেয়ারড ইন পাবলিক,’’ একরাশ হতাশা ঝরে পড়ল সুমেধার গলায়। একই সঙ্গে জানাল ক্যাফেতে গিয়ে চ্যাট করার ব্যাপারে ওর উদ্বেগের কথাও। “সাইবার ক্রাইম এমনিতেই খুব বেশি হয় এখন। ভয় করে যদি নেট ক্যাফেগুলোয় কোনও গণ্ডগোলের ব্যাপার থাকে!”
সাইবার ক্রাইমের দৌলতে অনেক টেকনিক্যাল টার্মসই আমাদের জানা। যেমন ইমেজ মরফিং। অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ এটা।
এ ব্যথা কী যে ব্যথা
নেটে পাতানো সব সম্পর্কেরই কিন্তু সুখী সমাপ্তি হয় না। অনেকেই ভুল তথ্য দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করে পার্টনারকে। বিদিশা আর অনির্বাণ দু’বছর অনলাইন প্রেম চালানোর পর বসে বিয়ের পিঁড়িতে । সেই বিয়ে টেকেনি এক বছরও।
কেন এই পরিণতি? “নিজের সম্বন্ধে অনেক ভুল তথ্য দিয়েছিল আমাকে। বিভ্রান্ত করেছিল রীতিমতো। কি ভুলই না করেছিলাম,” কথা শেষ করতে পারে না বিদিশা।
মন ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনা যে রকম আছে, আছে অন্য কিছুও।
দিব্যেন্দু আর তিস্তার নেটে মন দেওয়া-নেওয়া চলেছিল অনেক দিন। একটা সিদ্ধান্তও হয়তো নিত ওরা। হঠাৎই দিব্যেন্দু ওর বিয়ের খবরটা দেয় তিস্তাকে। মেনে নেয় তিস্তাও।
খারাপ লাগেনি? “ভাল লেগেছিল ওর সততা। এখনও খুব ভাল বন্ধু আমরা,” বিন্দাস উত্তর দেয় তিস্তা।
ইয়াং জেনারেশনের পছন্দের অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী খুব পজিটিভ অনলাইন প্রেম নিয়ে। ‘‘আমার তো বেশ এক্সাইটিং লাগে। মেসে থাকতে কয়েকজন পরিচিত বন্ধুকে দেখতাম এ ভাবে প্রেম করতে। পরে বিয়ে করে সুখেই আছে ওরা। তবে ভাল ঘটনাও যেমন ঘটে, খারাপও নিশ্চয়ই হয়। একটু খোঁজখবর তাই করে নেওয়াই উচিত,” বললেন মিমি।
|
টিপস |
• পরিচয়ের প্রথমেই ব্যক্তিগত তথ্য আদানপ্রদানের দরকার নেই। ছবি পাঠানোর ব্যাপারেও সতর্কতা প্রয়োজন। ইমেজ মরফিং-এর চক্করে অনেক দুর্ঘটনাই ঘটে।
• সাইবার ক্রাইম সেলের যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে রাখতে হবে। বিপদে পড়ার আগেই।
• দেখা করতে হোটেল বা নির্জন জায়গা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে।
• কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে অবশ্যই জানিয়ে রাখতে হবে পুরো ব্যাপারটা। সমস্যা হলে কাজে লেগে যাবে অনেকটাই। |
|
|
|
|
|
|