বাবা জ্ঞান দিয়োনা |
যৌন উত্তেজক পোস্টারগার্ল হতে চাই না |
তথাকথিত সুন্দরী নন। কিন্তু চিন্তাশক্তির মধ্যে রয়েছে নিজস্বতা। চরিত্রের প্রয়োজনে
শরীর দেখাতে পিছপা নন ‘শূন্য অঙ্ক’-র প্রিয়ংকা বসু। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
শেষ বার প্রিয়ংকা বসু যখন কলকাতাতে এসেছিলেন, তুমুল পার্টি করেছিলেন পাওলির সঙ্গে।
হ্যাঁ, সেই পাওলি যার পরিবর্তে তিনি ইট্যালো স্পিনেলির ‘গাঙ্গোর’-এ অভিনয় করেছিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর ‘চোলি কে পিছে’ অবলম্বনে তৈরি এই ছবি। চরিত্রটিতে অভিনয় করে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান। যা তাঁকে দেয় এক নতুন পরিচয়। সাহসী, বন্ধনহীন এক উঠতি বাঙালি অভিনেত্রীর। তথাকথিত ভাবে সুন্দরী নন তিনি। গায়ের রংও উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। কিন্তু তাঁর চিন্তাশক্তির মধ্যে নিজস্বতা আছে। যিনি চরিত্রের প্রয়োজনে সিনেমাতে টপলেস হতেও পিছপা হন না।
অবশ্য পাওলির সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময় ‘গাঙ্গোর’-এর প্রসঙ্গ তোলেননি তিনি। “‘গাঙ্গোর’ না করে পাওলি কিছু হারায়নি। তবে আমার অনেকটাই লাভ হয়েছে।”
দু’জনের আর একটা ব্যাপারেও খুব মিল। প্রিয়ংকা অনুভব করতে পারেন, কোনও অভিনেত্রীর মানসিক অবস্থা, যখন সে পর্দায় সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করছে। স্বীকার করলেন, ‘গাঙ্গোর’-এ নগ্ন-বক্ষ দৃশ্যে অভিনয় করাটা সহজ ছিল না। “সাহসী হওয়া নিয়ে তো অনেক কিছু বলা হয়। তবে বাস্তবে কিন্তু কিছু কিছু সময় খুব অসহায় লাগে। আমি বুঝতে পারি ‘ছত্রাক’-এ ওই দৃশ্যটা শু্যট করা পাওলির পক্ষে কতটা কঠিন ছিল। কিন্তু তার পরেও যখন সমালোচনা শুনতে হয়, তাও তাদের কাছ থেকে যারা ছবিটা পুরো দেখেনি... খুব খারাপ লাগে তখন। এই ধরনের ছবি দেখার সময়, ছবির বিষয়টাকে ভাল করে বুঝতে হবে। শুধু উত্তেজক দৃশ্য আছে বলেই দেখতে যাওয়ার কোনও মানে হয় না।”
তার জন্যই ‘গাঙ্গোর’-এর পরে অনেক ছবির অফার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সব কটাতেই তাঁকে বুদ্ধিদীপ্ত ছবির নির্ভীক পোস্টার গার্ল হিসাবে দেখানোর চেষ্টা ছিল। “‘গাঙ্গোর’-এর স্ক্রিপ্টটা পড়ে আমি জানতাম আমাকে ঠিক কী করতে হবে। আমার সহ-অভিনেতা ছিল আদিল হুসেন। ছবিতে ও একজন ফোটোগ্রাফার। কেন স্তন্যপানের দৃশ্যটা অত খোলাখুলি দেখানো হবে সে নিয়ে আমি প্রশ্ন করিনি। কারণ ছবিটার মূল বিষয়ই সেটা।” |
|
পুরুলিয়াতে শু্যটিং-এর সময় তাঁর মেয়ে নাইমার বয়স ১০ মাস। একজন মায়ের পক্ষে কতটা কঠিন ছিল এই সব দৃশ্যে অভিনয় করাটা? “সব এনার্জি শুষে নিয়েছিল শু্যটিং-এর সময়। এই ধরনের কাজের সময় একটা অন্য ধরনের ‘গাটস’ দরকার হয়।”
বললেন যে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়, “কারণ ‘গাঙ্গোর’ করার সময় যাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি, তারা প্রত্যেকেই খুব নির্ভরযোগ্য। যে ভরসাটা আমি বাকি অফারগুলোর ক্ষেত্রে সব সময় পাইনি। আমার শরীরকে কেউ বিজ্ঞাপনের জন্য ছবিতে ব্যবহার করুক সেটা চাই না বলেই করিনি।”
এই ছবিগুলো ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে কোনও ক্ষোভ নেই তাঁর। এর মধ্যে ‘নিউ জার্সি ইনডিপেন্ডেন্ট সাউথ এশিয়ান সিনে ফেস্ট’-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মনোনয়নও পেয়েছেন। নৃত্যশিল্পে নিজের পারদর্শিতার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন ‘গুজারিশ’ ছবিতে। ঐশ্বর্যার সঙ্গে ‘উরি উরি’ গানটিতে দেখা যায় তাঁকে। এর পাশাপাশি ‘জনি গদ্দার’ আর ‘লাভ সেক্স অওর ধোঁকা’ ছবিতেও ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি’ পদ্ধতিটা খুব কাজ করেছে ওঁর ক্ষেত্রে। এরই মাঝে মিউজিক ভিডিও প্রযোজনা করেছেন। তা ছাড়া শাহরুখ খানের ব্যানারে একটা সিরিয়াল। আর একটা টেলিফিল্মও।
এর পরেই সুযোগ আসে গৌতম ঘোষের ‘শূন্য অঙ্ক’তে অভিনয়ের। সিনেমায় তিনি প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী-র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। চরিত্রটির নাম ঝিলিক। খুব একঘেয়ে জীবন ঝিলিকের। তবু গভীর রাতে একটা জলের ট্যাঙ্কের উপর উঠে চিৎকার করে বলে, “আই ওয়ান্ট আ ম্যান”।
প্রথমে ঝিলিক চরিত্রটি খুব বোরিং লেগেছিল প্রিয়ংকার। “আমি ঝিলিকের মতো নই। সব সময় নতুন কিছু করার কথা ভাবি। যদিও ওর কিছুটা অংশের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাই আমি।”
ঝিলিকের উদারতা, জীবনের প্রতি তার সহজ দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার স্পর্শকাতরতা মিলে যায় প্রিয়ংকার নিজের চরিত্রের সঙ্গে। সিনেমাতে প্রিয়াংশু যখন কঙ্কনা সেনশর্মার চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন তখন ‘পতি-পত্নী-ওহ’-এর অতিনাটকীয়তা থেকে দূরে থেকেছে ঝিলিক। “ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম যে ঝিলিকের জীবনে তার স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কটা কোনও সমস্যার ব্যাপার নয়,” বললেন প্রিয়ংকা। এর পর সমসাময়িক সম্পর্কগুলোর ওঠাপড়া নিয়ে বলতে গিয়েই উঠে আসে অনেক কথা। যেমন উঠে আসে কী ভাবে একজন নারী কখনও মেনে নেয় যে তার পুরুষের জীবনে অন্য নারীর উপস্থিতিটা অস্বাভাবিক নয়। |
|
‘গাঙ্গোর’ ছবির একটি দৃশ্য |
এটা যেন মিলে যায় আনন্দ প্লাসে সম্প্রতি প্রকাশিত স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের ইন্টারভিউয়ের সঙ্গে। যে ভাবে তিনি লেখক স্বামী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে একাধিক নীরার উপস্থিতি মেনে নেন। মনে করিয়ে দেয় কী ভাবে স্বাতী বলেছিলেন: “এত বড় লেখক সেলিব্রিটিতাকে একজন মানুষ কী করে পুরোপুরি পেতে পারে?” “এই বোঝাপড়াটা একমাত্র স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সম্ভব। অন্য কেউ, এমনকী বাবা-মা’ও বলতে পারেন না কোনটা ঠিক,” বললেন প্রিয়ংকা।
স্বামীর জীবনে অপর একজন মহিলার উপস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামানোর দিন অনেক আগেই চলে গিয়েছে, প্রিয়ংকা বলেন। “সব সম্পর্কেরই কি একটা নাম দিতে হবে? সেটা তো সেই আমাদের ঠাকুমার আমলে হত। আজকাল মহিলারা অনেক বেশি সচেতন। যোগাযোগের কত মাধ্যম এখন! একটা সম্পর্ক সারা জীবন না-ও টিকতে পারে। তবু বুঝি না একজন পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ হলেই একজন মহিলাকে কেন এখনও অপরাধবোধে ভুগতে হবে। এ ভাবেই কি মহিলারা প্রোগ্রামড? ছেলেবন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে মদ খেতে গেলে কেন তা নিয়ে এত কথা চালাচালি হবে?”
ব্যক্তিগত জীবনে নিজেরও বন্ধু রয়েছে। “বন্ধুত্ব এক জিনিস। তবে নিজের সঙ্গীর জীবনে অন্য আর একজনের উপস্থিতি মেনে নিতে গেলে ইগোতে লাগে। যৌনজীবনটাই সব নয়। সেটাও হয়তো মেনে নেওয়া যায়। মানসিক মিল হলে প্রশ্ন ওঠে নিজের খামতি নিয়ে। এ রকম মনে হলে ব্রেক নেওয়া ভাল। স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসাকেও পুনরাবিষ্কার করতে হয়।”
ব্যক্তিগত জীবনে বলিউডের সুরকার আর গিটার-বাদক পরেশ কামাথের মধ্যে নিজের মনের মানুষটিকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। “আট বছর একসঙ্গে আছি আমরা। গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড ব্যাপারটা পেরিয়ে এসেছি। পরেশ খুবই ব্যস্ত। আমরা দু’জনই খুব উদার চিন্তাভাবনার শিল্পী। অবশ্যই লড়াই-ঝগড়া হয়। কিন্তু তার পরেও আবার একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি।”
এখন প্রিয়ংকা অপেক্ষা করে আছেন তাঁর আর একটা আন্ত
আর অবশ্যই চান জয় করতে।
|
লাস্ট মিনিট হিট |
‘শূন্য অঙ্ক’তে ঝিলিকের চরিত্রের জন্য প্রথমে আমি একজন বিমান সেবিকাকে নিয়েছিলাম। শেষ মুহূর্তে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমার মেয়ে, আনন্দী, আমাকে প্রিয়ংকার ছবি দেখিয়ে বলেছিল ওকে নিতে। এ ছাড়া ‘গাঙ্গোর’-এর পরিচালক ইট্যালো আমার বন্ধু। ওই ছবিতেও প্রিয়ংকাকে শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেও বাজিমাত করেছে ও।
— গৌতম ঘোষ |
|
|