রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিতে আন্দোলনে নামলেন কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ। সোমবার দুপুরে শতাধিক পড়ুয়া অরাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করে কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ দেখানোর পর প্রায় দেড় ঘন্টা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবাশিস বিশ্বাসকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। পরে দেবাশিসবাবুর আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ছাত্র পরিষদের তরফে এদিনের ওই আন্দোলনকে সাধারণ পড়ুয়াদের আন্দোলন বলে দাবি করা হলেও সংগঠনের দুই নেতা শুভাশিস সাহা ও দেবদ্বীপ ভট্টাচার্যকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে।
দেবাশিসবাবু বলেন, “জেলা প্রশাসন ও টিচার্স কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। পড়ুয়াদের বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করতে আজ মঙ্গলবার টিচার্স কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডাকা হচ্ছে।” টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক অশোক দাসের দাবি, বিকাল পর্যন্ত বৈঠকের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। গত বছরের ৫ জানুয়ারি কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে নিগ্রহ করার অভিযোগ ওঠায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীরকুমার দাস কলেজে গিয়ে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ রয়েছে বলে জানিয়ে নির্বাচন করার ওপর মত দেন। ঘটনাচক্রে ওইদিনই দেবাশিসবাবু কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে উপাচার্যের হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দেন। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসায় গত শুক্রবার কলেজে সাংবাদিক সম্মেলন করে দেবাশিসবাবুর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন অশোকবাবু।
এ দিন আন্দোলনকারীরা ওই সাংবাদিক সম্মেলনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। শুভাশিসবাবু বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এভাবে টিচার্স কাউন্সিলের সদস্যরা বৈঠক করে সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন না।” এই বিষয়ে অশোকবাবুর দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তাঁরা পদক্ষেপ করেন। তাঁ অভিযোগ, পড়ুয়াদের সামনে রেখে কেউ কেউ রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ছাত্র সংসদ না থাকায় গত একবছর ধরে কলেজের বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আটকে রয়েছে। পড়ুয়ারা বিভিন্ন সমস্যায় কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে পারছেন না। কলেজে ঠিকমতো পঠনপাঠন হচ্ছে কি না তা নজরদারি চালানোর কেউ নেই। দেবাশিসবাবুর ইস্তফাপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করলে গত এক বছরে এই নিয়ে পর পর তিনজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বদল হতে চলেছে। ফলে কলেজ পরিচালনার কাজে বিঘ্ন ঘটছে। পড়ুয়ারা দিশাহীন হয়ে পড়ছেন। দেবদ্বীপবাবু বলেন, “কলেজের স্বার্থে আমরা বার বার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বদলের বিরোধী। মঙ্গলবারের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামা হবে।” |