‘অনেক আশা’ নিয়ে মানুষ গত ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটালেও এই রাজ্যে ‘বিকাশ’ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করলেন বিজেপি’র সর্বভারতীয় নেতা তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি। সোমবার শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে এক জনসভায় এ কথা জানান তিনি। রাজ্য এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মানুষের সামনে তুলে ধরতেই বিজেপি’র উদ্যোগে এ দিন সভা হয়। অরুণবাবু বলেন, “গুজরাতে গত ১১ বছরে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন নরেন্দ্র মোদী। অথচ বাংলা পিছিয়েই। মানুষ অনেক আশা নিতে পরিবর্তন এনেছেন। যাঁরা ক্ষমতায় ৩৪ বছর ছিলেন তারা কিছু করেননি। এখন যাঁরা রয়েছেন তারাও ‘বিকাশ’-এর জন্য কিছু করছেন না। কেবল ভোট ব্যাঙ্কের কথা ভাবছেন। তাতে বেশি দূর এগোনো যাবে না।” রাজ্যের এই পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ থেকে বিজেপি’র রাজ্য পর্যবেক্ষক চন্দন মিত্র, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ সকলে। তাতে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, তেলের দাম উত্তরোত্তর বেড়ে চলার মতো বিষয়গুলি ধরে কেন্দ্র ও রাজ্যের ব্যর্থতাকে সাধারণ বাসিন্দাদের দুর্ভোগের জন্য দায়ী করেছেন তারা। এ দিন মঞ্চে রাজ্যে ৩টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন বীরভূমের নলহাটি কেন্দ্রের প্রার্থী অনিল সিংহ, মালদহের ইংরেজবাজার কেন্দ্রের প্রার্থী সঞ্জীব মিশ্র, মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের প্রার্থী অরবিন্দ বিশ্বাস। |
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারের উদাসীনতাকে এ দিন দায়ী করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই অনুপ্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাতে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের অধিকারও খর্ব হচ্ছে। ভোট ব্যাঙ্কের কথা ভেবে এ র্যজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন, নমাজও পড়তে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কলেজ হবে, আলাদা হাসপাতাল হবে। তাতে উন্নতি হবে বলে বিজেপি বিশ্বাস করে না। যে কোনও কলেজ, হাসপাতালে সকলেরই যাতায়াতের অধিকার থাকা দরকার। সিদ্ধার্থনাথ জানান, নির্বাচনের আগে ওরা কোচবিহারে বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটনের উন্নতিতে সাফারি পার্ক, ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে রাস্তা সেতুর মতো অনেক গাল-ভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এসাকার বাসিন্দারা সেই পরিবর্তনের আশ্বাসে সাড়া দিয়ে ভোট দিয়েছিলেন, অথচ কিছুই হয়নি। উত্তরবঙ্গে শিল্প নেই, রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি এখনও সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে।
গত ৯ বছর কেন্দ্রে কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের শাসনকে ‘কালা অধ্যায়’ বলে সরব হন অরুণবাবু। কমনওয়েলথ, টু জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। যে সব সমস্যা মেটাতে কংগ্রেস নেতৃত্ব সক্রিয় নন। বরং তাদের চিন্তিন শিবিরে ‘পারিবারিক রাজনীতি’কে এগিয়ে নিতে তারা বেশি তৎপর বলে জানান ওই নেতা। অন্য দিকে সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্র কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারায় দেশ জুড়ে ওই ধরনের কার্যকলাপ বাড়ছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। অরুণবাবুর জানান, সন্ত্রাস দমনে ইউপিএ সরকারের সুষ্ঠু নীতি নেই। সুপ্রিম কোর্ট যেখানে অপরাধীর ফাঁসির সাজার কথা বলছে, সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে সই করছেন না। সন্ত্রাস দমনে ‘পোটা’র মতো আইন লাঘু করতে পিছপা কেন্দ্র। দেশে সিমি, হুজি, লস্করই তৈবার মতো জঙ্গিদের কার্যকলাপ মোকাবিলা করতে সরকার ব্যর্থ। অথচ আরএসএস এবং বিজেপি’র উপর সন্ত্রাস বিরোধী কাজের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিজেপি এবং আরএসএস দেশের মঙ্গল চায়। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে তার প্রমাণ দিতে হবে। |