মোর্চা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধিতায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠতে হল রাজ্যকে।
সেরিকালচার বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে কালিম্পঙের মোর্চা বিধায়ককে বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু মোর্চার শীর্ষ নেতা বিমল গুরুঙ্গ সরকারকে জানান, দলকে না জানিয়ে মোর্চার একজন বিধায়ককে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‘অধিকার’ রাজ্য সরকারের নেই। পাশাপাশি, এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। মোর্চার অন্দরের খবর, ওই ঘটনায় তাঁর ক্ষোভের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন গুরুঙ্গ।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, “ওই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলা উচিত ছিল। এটাই তো গণতান্ত্রিক রীতি। যিনি যে দলের বিধায়ক, তাঁর দলের সঙ্গে আলোচনা না করে তাঁকে কোনও সরকারি পদে বসানোর অধিকার সরকারের নেই।” রোশন জানান, মোর্চার মধ্যে বিভাজনের কোনও চেষ্টা অতীতে সফল হয়নি, আগামী দিনেও হবে না। এ ব্যাপারে কালিম্পঙের বিধায়ক বিশদে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি দলের একজন সৈনিক। দল যা নির্দেশ দেবে তা পালন করে যাব। এর বেশি কিছু বলার নেই।” তবে প্রাথমিক ভাবে তিনি বিষয়টি জানতেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল সেরিকালচার বোর্ড ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের অধীন। বর্তমানে ওই দফতর রয়েছে প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের অধীনে। স্বপনবাবু বলেছেন, “এটা জানি, সেরিকালচার বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে হরকাবাহাদুর ছেত্রীর নাম ছিল। কিন্তু, তা নিয়ে মোর্চার তরফে আপত্তি ওঠা বা খারিজ হওয়ার বিষয়ে এখনও জানি না। বিশদে খোঁজ নেব।” যদিও দফতরের এক কর্তা জানান, হরকাবাহাদুর ছেত্রীর মতো প্রবীণ বিধায়ক ওই পদে বসলে আখেরে পাহাড়ের তিন মহকুমায় রেশম চাষ ও গবেষণার জন্য টাকা বরাদ্দ আদায় করতে পারতেন। একই সঙ্গে কালিম্পঙের রেশম চাষ, গবেষণার অভিজ্ঞতা সমতলে কাজে লাগিয়ে পাহাড়-সমতল মেলবন্ধনের বার্তা জোরদার করা যেত বলে ওই কর্তা মনে করেন।
এই বিরোধিতায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। কারণ, জিটিএ গঠনের পর থেকে রাজ্যের কোনও সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করেননি গুরুঙ্গ। পক্ষান্তরে, গুরুঙ্গের আর্জি মেনে জিটিএ চিফ পদকে ক্যাবিনেট মর্যাদা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এত দিন বিরোধ হলে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হয়েছে। কিন্তু, এ বার গুরুঙ্গ আলোচনার রাস্তায় না হেঁটে সরকারের বিরোধিতা শুধু নয়, বিভাজনের অভিযোগও তুলেছেন।
দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তেলেঙ্গানার বিষয়টি সামনে রেখে ফের আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন গুরুঙ্গরা। গুরুঙ্গরা ক্রমশ রাজ্য সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন। পাহাড়ে তৃণমূল নেত্রীর জনপ্রিয়তার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিভাজনের অভিযোগ তুলছেন মোর্চা নেতারা। এতে গুরুঙ্গ দলের মধ্যে ও তাঁর বিরোধী শিবিরেও বার্তা পৌঁছলেন বলে পর্যবেক্ষকদের মত। আগামী ২৮ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধনে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রীর শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে, ২৯ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী লামাহাটের নতুন পর্যটনেন্দ্রের উদ্বোধন করতে যেতে পারেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুঙ্গের বৈঠক হতে পারে। বৈঠক হলে সেখানে সেরিকালচার বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিষয়টি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত হবে কি না তা নিয়েও জোর জল্পনা। সব মিলিয়ে পাহাড়ের আবহাওয়ার মতোই গোটা বিষয়টি অনিশ্চয়তার উপরে দাঁড়িয়ে। |